ঢাবি শিক্ষক সমিতি

কোনো অজুহাতেই রাজাকারের পক্ষাবলম্বন নয়

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দেয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। কোনো অজুহাতেই রাজাকারের পক্ষাবলম্বন এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অবমাননা শিক্ষক সমাজ গ্রহণ করবে না মন্তব্য করে সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, কোটা বাতিলকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ভুলুণ্ঠিত করার প্রয়াস রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। মুক্তিযুদ্ধের ধারক ও বাহক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করছি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা স্বাক্ষরে ওই বিবৃতি সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়।

এতে বলা হয়, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তা নিন্দনীয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানাই। ২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কোটা আন্দোলন করার আগে তো তাদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা (চাকরি) পাবে? ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্যে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই বক্তব্য নিয়ে গত রোববার রাতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গভীর রাতে বিক্ষোভে নামেন। সেখানে স্লোগান দেওয়া হয়, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বলছে, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে বিকৃত করে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পক্ষে আন্দোলনকারী একদল শিক্ষার্থী যেভাবে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘আমি কে, তুমি কে, রাজাকার-রাজাকার’ বলে স্লোগান দিয়েছে, তা আমাদের ব্যথিত, লজ্জিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। এই স্লোগান প্রদানের মধ্য দিয়ে ত্রিশ লাখ শহীদের প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছে। অসম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে দুই থেকে ছয় লাখ নির্যাতিত নারীর প্রতি।

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এবং রাজাকারদের পক্ষাবলম্বনকারী সব অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে দেশবাসীকে আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। একইসঙ্গে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।