ঢাবিতে মুখোমুখি ছাত্রলীগ ও কোটাবিরোধীরা

গুলিবিদ্ধ হয়েছেন পাঁচ শিক্ষার্থী ॥ আহত হয়েছেন অনেকে

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  লিটন ইসলাম, ঢাবি

কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের প্রতিবাদে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন পাঁচ শিক্ষার্থী। আহত হয়েছেন অনেকে। গতকাল দিনভর থমথমে অবস্থা বিরাজ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে।

ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে গতকাল সাড়ে ৩টায় ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভণ্ডসমাবেশ করার ঘোষণা দেয় কোটা আন্দোলনকারীরা। দুপুর দেড়টায় ছাত্রলীগও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয়। পূর্বষোঘিত কর্মসূচি অনুয়ায়ী দুপুর দুইটার পর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকে, কোটা আন্দোলনকারীরা। দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পাশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ আন্দোলনকারীদের সাথে যোগ দেয়। দুপুর চারটার দিকে ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের পাশ থেকে আরেকটি পক্ষ শিক্ষার্থীদের সাথে শামিল হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লাঠি, ক্রিকেট খেলার স্টাম্প, পিসিসি পাইপ ইত্যাদি দেখা যায়। এ সময় যেসব শিক্ষার্থীদের হাত খালি ছিল তারাও শহীদ মিনার এলাকা থেকে বাঁশ, লাঠি, গাছের ডাল ইত্যাদি হাতে নেয়। বিকাল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি বাস শহীদ মিনার এলাকা দিয়ে আসার সময় আন্দোলনকারীরা সেই বাসটি ভেঙে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সহাকরী প্রক্টর। হঠাৎ করে একদল শিক্ষার্থী চড়াও হয় এবং ছুটাছুটি শুরু করে। এক পর্যায়ে প্রক্টরিয়াল টিম সেখানে উপস্থিত হন এবং মাইকে বলতে থাকেন কেউ ঢিল ছুড়বেন না, স্যাররা সামনে আছেন। এ সময় একদল শিক্ষার্থী তেড়ে এসে বলতে থাকতে ‘কালকে কোথায় ছিলেন’ এবং কেউ কেউ অকথ্য ভাষায় গালিও দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেয়। প্রক্টররা তখনই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ফুটপাতে অবস্থান করেন। সেখানেও শিক্ষার্থীরা ‘দালাল’, ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে সম্বোধন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে হামলা করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে নিলে পেছন থেকে লাঠি দিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হয়। কেউ কেউ লাঠি ছুড়ে মারে। এসময় দৌড়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন শিক্ষকরা। এসময় পেছন থেকে দৌড়ে এসে কয়েকবার লাঠি ও বাঁশ দিয়ে আঘাত করা হয় তাদের। এতে তিনি ফুটপাতে লুটিয়ে অনেকে। পরে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহত শিক্ষকরা হলেন- অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. আব্দুল মুহিত, সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারজানা আহমেদ (শান্তা), সহযোগী অধ্যাপক ড. হাসান ফারুক এবং সহকারী অধ্যাপক ইমামুল হক সরকার টিটু। এ সময় সহকারী প্রক্টরকে রক্ষা করতে গিয়ে হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হন দৈনিক জনকণ্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য মোতাহার হোসেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় অবস্থান নেয় ছাত্রলীগেরে নেতাকর্মীরা। এসময় তাদের হাতে লাঠি, স্টাম্প, পিসিসি পাইপসহ দেশীয় নানা অস্ত্র দেখা দেয়। বিকাল সাড়ে পাঁচটার পর দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে, তেমন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। সন্ধ্যার আগে শেখ রাসেল টাওয়ার থেকে শুরু করে চানখার পুল, দোয়েল চত্বর পর্যন্ত দখলে নেয় কোটা আন্দোলনকারী। এসময় দোয়েল চত্বর দিয়ে কোটা আন্দোলনকারীরা হামলা করতে পারে এমন আশঙ্কায় ঢাবি মেট্রো স্টেশনের নিচে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বরে আসে। সেখানে প্রায় ৪০ মিনিট অবস্থান শেষে এদিনের মতো আন্দোলন স্থগিত করেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস ইসলাম।

এদিকে বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে আন্দোলনকারীদের। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে চানখাঁরপুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় শহীদুল্লাহ হল থেকে চানখাঁরপুল রোড রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।