ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তদন্ত কর্মকর্তার অভিযোগ

সরকার উৎখাতে নাহিদ-সারজিসের সঙ্গে নুরের আলোচনা হয়

সরকার উৎখাতে নাহিদ-সারজিসের সঙ্গে নুরের আলোচনা হয়

বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার বিষয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন০্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও সারজিস আলম এবং গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের মধ্যে আলোচনা হয়। গত ১৮ জুলাই রাত ১০টায় মোবাইল ফোনকল এবং ম্যাসেজের মাধ্যমে এ আলোচনা হয়।’

রাজধানীর বনানীতে সেতু ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বনানী থানায় দায়ের করা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল শুক্রবার (২৬ জুলাই) নুরকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া। ওই আবেদনে উল্লিখিত অভিযোগ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনে বলা হয়, আদালতের নির্দেশনা মেনে নুরকে ব্যাপক ও নিবিড়ভাবে মামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদকালে আসামি জানান, গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়ে আদালতের রায়ের পর থেকেই ঘনিষ্ঠ নাহিদ ইসলাম, হাসানাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদ, আক্তার হোসেন এবং আহনাফদের সঙ্গে নুরের যোগাযোগ হয়। ১৮ জুলাই রাত ১০টায় নাহিদ ইসলাম এবং সারজিস আলমের সাথে মোবাইল ফোনে এবং ম্যাসেজে কোটা সংস্কার এবং বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। তখন নাহিদ ইসলাম ও সারজিস আলম দাবিগুলো ম্যাসেজে লিখে দিতে বলেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, ইন্টারনেট সচল করা, ছাত্রলীগ-যুবলীগের ‘সন্ত্রাসীদের’ গ্রেপ্তার করা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ সরকারের পদত্যাগ ইত্যাদি দাবি লিখে দেন ভিপি নুর। তিনি ১৯ জুলাই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য তার দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। বর্তমান সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন করার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল শুক্রবার বিকালে নুরকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহামদের আদালতে নুরের পক্ষে বিপ্লব পোদ্দার জামিন আবেদন করেন। নুরের উপস্থিতিতে জামিন শুনানি করার আবেদন করেন তিনি। আদালত নুরকে এজলাসে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে নুরকে হাজতখানা থেকে এজলাসে নেওয়া হয়। দুজন পুলিশের কাঁধে ভর করে এজলাসে ওঠেন তিনি। তাকে আসামিদের জন্য রাখা ডকে রাখা হয়। তখন আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, নুর ডকে দাঁড়াতে পারছেন না। তার জন্য যেন বসার ব্যবস্থা করা হয়। পরে তাকে বেঞ্চে বসার আদেশ দেন আদালত। শুনানিকালে পুরোটা সময় স্ত্রীর পাশে বসা ছিলেন নুর। রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনায়। তার জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ। নুরের পক্ষে বিপ্লব পোদ্দার জামিন শুনানিতে বলেন, নুর ডাকসুর ভিপি ছিলেন। ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলন শুরু হয়। সরকার তখন পরিপূর্ণ স্টেপ নেয়নি। এজন্য আবার ২০২৪ সালে এসে আন্দোলন। তখন নুর কোটা আন্দোলনের নেতা ছিলেন। এজন্য এখনকার সমন্বয়করা তার সাথে যোগাযোগ করেছে। দাবি রাখতেই পারে। তিনি বলেন, গত ২১ জুলাই নুর আদালত দাঁড়িয়ে ছিলেন। আজ দাঁড়াতে পারছেন না। সেদিন তাকে সুস্থ-সবল অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হলো। আর আজ তার কী অবস্থা! রিমান্ডের নামে কী নির্যাতন করা হলো। নুর ইয়াং লিডার। যদি এমন হয়, তাহলে পরবর্তীতে আর কোনো ইয়াং রাজনীতিতে আসবে না। তিনি পালিয়ে যাওয়ার লোক না। তার জামিন প্রার্থনা করছি। আদালত হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক নুরকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। এছাড়া, নুরের সুচিকিৎসার আবেদন ও স্ত্রীর সাথে কথা বলতে দেওয়ার আবেদন করা হয়। তখন আদালত বলেন, কথা তো বলছেই। এজন্য আর আলাদা আবেদন করার কি দরকার? আদালতের কার্যক্রম শেষে নুরকে বিচারকের খাসকামড়ায় নেওয়া নেওয়া হয়। সেখানে বিচারক তার সাথে কিছু সময় কথা বলেন। পরে আদালত কারাবিধি অনুযায়ী নুরকে চিকিৎসার নির্দেশ দেন। তবে, জামিন আবেদন মঞ্জুর করেননি আদালত। এদিন নুরের বাবা, স্ত্রী, বোন আদালতে হাজির হন। তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এর আগে গত ২১ জুলাই নুরের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। একই মামলায় গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এবং ব্যবসায়ী রেজাউল হাসনাত ডেভিডের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ১৮ জুলাই রাজধানীর বনানীতে সেতু ভবনে হামলা হয়। এ ঘটনায় সেতু ভবনের কেয়ারটেকার রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা করেন। হামলায় সেতু ভবনে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন বাদী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত