রেল চলাচল বন্ধ থাকায় বাড়ছে লোকসান

প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রেল চলাচল বন্ধ ১৭ জুলাই থেকে। কিন্তু কবে নাগাদ রেল চলবে, এমনটাও নিশ্চিত বলতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। গত দুই দিন আগে কম দূরত্বের মধ্যে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, কম দূরত্বে চলাচল করা মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চালানো হলে ঝুঁকি আরো বাড়বে। দুর্বৃত্তদের হামলায় ট্রেন, স্টেশন, লাইন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ যাত্রী হতাহতের শঙ্কাও রয়েছে। এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কবে থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গতকাল রোববার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার শাহাদাত আলী। তিনি বলেন, ট্রেন চলাচলের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের জরুরি সভা আছে। সেখানে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হলে আমরা জানাব।

সূত্রমতে, সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন রেলের ৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে। অপরদিকে যাত্রীদের অভিযোগ, দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসায় সড়কে যান চলাচল করলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ট্রেন কবে চালাবে তাও বলা হচ্ছে না। এতে ট্রেনে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রী সাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারা মনে করেন, এটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের চরম ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু নয়। দেশের চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এবং কারফিউ পুরোপুরি না উঠে গেলে ট্রেন চলাচল করবে না। গণমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। তিনি বলেন, এখনো দেশের পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। কারফিউ চলছে, তাই ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। তাছাড়া টিকিট কাটার জন্য পর্যাপ্ত ইন্টারনেট সেবাও এখন নেই। এছাড়া যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা সুনিশ্চিত করতে পারব কি না, সেটিও চিন্তার বিষয়। এ কারণে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে এবং কারফিউ চলাকালীন সময় আমরা আপাতত যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছি।

মন্ত্রী বলেন, দুই-চার দিন পরে যদি পরিস্থিতি অনুকূলে আসে এবং চলমান কারফিউ উঠে যায়, টিকিট কাটার জন্য ইন্টারনেট সেবা পর্যাপ্ত থাকে, তখন আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেন চলাচলের বিষয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আপাতত যাত্রীবাহী ট্রেন চলছে না। তবে বিশেষ প্রয়োজনে মালবাহী ট্রেন ও বিশেষ নিরাপত্তায় তেলবাহী কনটেইনার ট্রেন চালানো হচ্ছে।

কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো স্টেশন চত্বর জনশূন্য অবস্থা। তবে নিরাপত্তায় স্টেশনে বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। দোকানপাট বন্ধ, নির্ধারিত স্থানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ট্রেন। স্টেশন মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রায় ১১ দিন ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ। কবে নাগাদ ট্রেন চলবে তাও বলা সম্ভব হচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলা মৈত্রী ও মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের অগ্রিম কাটা টিকিট ফেরত নিয়ে সমপরিমাণ টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে। বাকি ট্রেনের টিকিট ফেরত নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কাউন্টার এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাটা টিকিটের মূল্য এখনও পরিশোধ করা হচ্ছে না। ইন্টারনেট পুরোপুরি সচল না হলে মূল্য ফেরত সম্ভব হবে না।’

রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিংস্টক) পার্থ সরকার বলেন, ইঞ্জিন-কোচের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিভিন্ন সময় নাশকতাকারীরা ইঞ্জিন-কোচ জ্বালিয়েও দিয়েছে। এখন যে অবস্থায় চলছে, ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাতে গেলে ইঞ্জিন-কোচসহ রেল সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

এমনিতেই রোলিংস্টক স্বল্পতায় ট্রেন চালাতে হিমশিম খেতে হয়। সরকার প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন-কোচ সংগ্রহ করছে। সংগৃহীত ইঞ্জিন-কোচ ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ হলে চরম ক্ষতি হয়ে যাবে।

সরেজমিন দেখা যায়, মৈত্রী ও মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা কমলাপুর স্টেশন থেকে টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচলও বন্ধ রয়েছে। আন্তঃদেশীয় ট্রেনগুলো কবে চলবে, তা নিশ্চিত বলছে না রেল কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে পরিবহন দপ্তর সূত্র বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় রেলেও ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে। ১৩টি স্টেশন ভাঙচুর করা হয়েছে। এসব স্টেশন এখনও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ইঞ্জিন ও ৯টি কোচে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি পুরোপরি স্বাভাবিক না হলে ট্রেনচালক, গার্ডসহ সংশ্লিষ্টরাও ট্রেন পরিচালনায় সাহস পাচ্ছেন না।

কমলাপুর রেলওয়ে প্রশাসনিক দপ্তর সূত্রে জানা যায়- চালক, গার্ডরাও এমন পরিস্থিতিতে ট্রেন চালাতে চাচ্ছেন না। গত দুই দিন আগে কম দূরত্বের মধ্যে লোকাল-মেইল ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত হলে ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্তরা ঝুঁকির বিষয়টি সামনে আনেন। একজন ট্রেনচালক বলেন, গুটিকয়েক সহিংসতাকারী একত্রিত হলেই ট্রেন দাঁড় করাতে হয়। লাইন, সিগন্যাল পয়েন্টে হামলা চালায় দুষ্কৃতকারীরা। মুহূর্তেই লাইন ঘেরাও করে ট্রেন ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা শুরু করে। ওই অবস্থায় ট্রেন যাত্রীদের সঙ্গে ট্রেন পরিচালনায় সম্পৃক্তদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে।