সমন্বয়কদের নিয়ে পরিবারকে দুশ্চিন্তা না করার অনুরোধ ডিবি প্রধানের

প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

নিরাপত্তার স্বার্থে কোটা আন্দোলনের যে পাঁচ সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে পরিবারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। গতকাল রোববার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন লাগিয়েছে, এসব দুর্বৃত্ত ও জামায়াত-শিবিরের চক্রকে ধরার দায়িত্ব আমাদের কাছে আছে। এর আগে গত শুক্রবার কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে নিরাপত্তার স্বার্থে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। গত সন্ধ্যায়ও দুজন সমন্বয়ককে নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়ে আসা হয় ডিবি কার্যালয়ে। সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘কেউ যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং তারা যদি বিভিন্ন জায়গায় বলে তাদের সঙ্গে যে কোনো সময় যে কোনো কিছু হতে পারে, এটা জানার পর আমাদের নৈতিক দায়িত্ব তাদের নিরাপদে নিয়ে আসা। প্রশ্ন আসতে পারে, শুধু তাদের ক্ষেত্রে কেন নিরাপত্তার বিষয়? মনে রাখতে হবে, এই লোকগুলোকে কেন্দ্র করে অর্থাৎ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঘিরেই কিন্তু একটি অসাধু চক্র মানে জামায়াত-বিএনপি এই সুযোগে অনুপ্রবেশ করে একটা গণতান্ত্রিক সরকারকে পতন ঘটাতে চেয়েছিল। এই চক্র রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগুন লাগাতে চেয়েছিল। সেই কারণে আমি মনে করি, এই চক্র যদি আবার শিক্ষার্থীদের কোনো কিছু করে আন্দোলনের কিছু করতে চায়, সেজন্য নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে নিয়েছি।’ কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে কত দিন রাখা হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বলবো এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলবো। নিরাপত্তা দেয়ার পাশাপাশি সমন্বয়কদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে মহানগর ডিবি প্রধান বলেন, যেহেতু তারা নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের কাছে, তারপরও তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সুন্দর একটা আন্দোলন ছিল, এই আন্দোলনের সময় তাদের সঙ্গে কারা যোগাযোগের চেষ্টা করেছে, কারা তাদের উসকানি দিয়েছিল। তারা কিছু নাম ও নম্বর দিয়েছে আমাদের।

‘ডিবিতে আনার পর সমন্বয়কদের মারধর করা হয়েছে’ বলে ছড়িয়ে পড়েছে, এ নিয়ে জানতে চাইলে হারুন বলেন, যারা ফেসবুকে লেখালেখি করে, তারা অনেকের নামণ্ডনম্বর ধরে বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে। আমি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছি, তারা এই গুজবও ছড়িয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রের অনেক ব্যক্তির নামেও অনেক গুজব ছড়িয়েছে। তাই আমরা যাদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়ে এসেছি, তাদের নিয়ে যদি কোনো গুজব ছড়ায়, সেটাও বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তারা এসব গুজব ছড়িয়ে কিছু ভিউ বাড়িয়ে টাকা আয় করতে চায়। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে যে, আন্দোলনকারীদের পুলিশ ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, যাতে তারা আর একত্র হতে না পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব গুজবকে আপনারা বিশ্বাস করবেন না। আইনের স্বার্থে আমরা অনেককে অনেক সময় গ্রেফতার করেছি। যারা পুলিশকে হত্যা করেছে এবং গত ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির সেই সময় তো ওইসব ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে অনেককে গ্রেফতার করেছিলাম। সে সময় তো প্রশ্ন আসেনি যে, আমরা তাদের প্রতি অন্যায় করেছি। আজ যে মানুষকে আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়ে এসেছি, এই গুজব আপনারা বিশ্বাস করবেন না।

সমন্বয়কদের পরিবারের পক্ষ থেকে ও তাদের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, যদি নিরাপত্তা দেয়া হয়, তাহলে যেন পরিবারের মাধ্যমে দেয়া হয়, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ হারুন বলেন, ‘কারা কী বলেছে, এ বিষয়ে আমরা কোনো কিছু জানি না। আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো আবেদন আসেনি, আমাদের কাছে কেউ কিছু বলেনি। আমরা জাস্ট নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নিয়ে এসেছি। তাদের আন্দোলন সম্পর্কে টুকটাক আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। মহানগর ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, যাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা নিয়ে এসেছি, তাদের পরিবারের কাছে অনুরোধ করবো, দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আমরা মনে করি তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দেখছি। তাদের পরিবার যেন নিশ্চিন্ত থাকে, সেই বিষয়ে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই।