ফিরছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা আন্দোলন ঘিরে ব্যাপক নাশকতা ও তাণ্ডবের মধ্যে সারাদেশে কারফিউ জারির পর এখন ধীরে ধীরে শিথিল করছে সরকার। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশে ফিরে আসছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও কর্মচাঞ্চল্য। ঢাকাসহ দেশব্যাপী খুলেছে অফিস-আদালত, দোকানপাট ও বিপণিবিতান। শুরু হয়েছে যানবাহন চলাচল। ভয়-শঙ্কা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে মানুষ হয়ে পড়ছেন কর্মব্যস্ত।

জানা যায়, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় সকাল থেকেই কর্মমুখর হয়ে উঠছে। গ্রাহকের ভিড় জমছে ব্যাংকপাড়ায়। অফিস-আদালতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ উপস্থিতির মাধ্যমে পুরোপুরি শুরু হয়েছে কার্যক্রম। ঢাকার দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল ও বিপণিবিতান খুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রাণ ফিরে পাচ্ছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। ছোট, মাঝারি ও বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। চাকা ঘুরছে রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোর। ঢাকার বাসটার্মিনাল থেকে বিভিন্ন জেলার দূরপাল্লার গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। মোকামগুলো থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে আসছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলছে বন্দরগুলোয়। স্বাভাবিক হয়েছে বিমানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানি এবং সিটি করপোরেশনের সেবামূলক কার্যক্রম একই গতিতে চলছে। একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এতে স্বস্তি ফিরে আসছে সাধারণ মানুষের জীবনে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান কারফিউ আরও শিথিল হয়েছে। নতুন সপ্তাহের প্রথম তিন কর্মদিবসে (রবি থেকে মঙ্গল) ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। অন্যান্য জেলায়ও কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়ছে। অফিস সময়সূচি ৪ ঘণ্টার বদলে ৬ ঘণ্টা করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস খোলা। তবে ব্যাংকে লেনদেন চলছে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। কারফিউ শিথিল থাকছে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এছাড়া খুলনা, বগুড়া, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার মতো অনেক জায়গায় কারফিউ শিথিল থাকছে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত। গতকাল মঙ্গলবার কর্মব্যস্তময় নগরী ঢাকার রাজপথে দুপুরেই যানজট শুরু হয়। ব্যক্তিগতসহ গণপরিবহণের সংখ্যা রাজপথে বেড়েছে। আর দিনের শুরুতেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে সরব হয়ে উঠে সচিবালয়। এ সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে রুটিন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা ১২টায় অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখা গেছে কর্মমুখর পরিবেশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী অফিস চলছে। কাজের কোনো ব্যত্যয় হচ্ছে না।

ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মন্টু বলেন, কারফিউ শিথিলের সময় রাত ৯টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলে ব্যবসায়ী ও দোকানপাট মালিকদের জন্য আরও সুবিধা হবে। দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জানানো হয়েছে।

রাজধানীর সব মার্কেট, বিপণিবিতান খুলে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য মার্কেটগুলোয় ক্রেতা আসছে। দিনদিন ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে অনেক বেসরকারি অফিস, কারখানা সকাল ৮টার মধ্যেই চালু হয়ে যায়। সাতসকালে খুলে দেয়া হচ্ছে দোকানপাট, রেস্তোরাঁ। অনেকদিনের জমানো কাজ সারতে প্রচুর মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনো খোলার মতো পরিস্থিতি নেই বলে গত সোমবার জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। কারফিউ চলায় সন্ধ্যার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সড়ক ও স্থাপনার সামনে অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী ক্রম অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে ২০ জুলাই ভোর থেকে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। জনগণের স্বার্থে ও রাষ্ট্রের যে কোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে। দেশের সংবিধান সমুন্নত রেখে প্রচলিত আইনের আওতায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দেশবাসীর জানমালের নিরাপত্তা ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

এদিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদীতে এদিকে আজ বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাত মন্ত্রী, চার সচিব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোটা অন্দোলনে শিক্ষার্থীদের যে ডিমান্ড ছিল, তার সব মেনে নেয়ার পরও সহিংসতা থামেনি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কারফিউ জারি করেছিলাম। আমরা সারা দেশের শান্তিশৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা করেছি। সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। আজ বুধবার থেকে শনিবার সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। এছাড়া কবে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে সেটি শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন যে, কবে থেকে পরিপূর্ণভাবে ইন্টারনেট চালু হবে।