কোটা আন্দোলনে সহিংসতা

এবার তিন সদস্যের বিচারবিভাগীয় কমিশন

প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা আন্দোলনের মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই সরকারি হিসাবে মৃত্যু হয় দেড়শ মানুষের। হামলা হয় রাষ্ট্রীয় বহু স্থাপনায়। সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলন চলাকালে সহিংস ঘটনা তদন্তে ইতপূর্বে গঠিত তদন্ত কমিশন পুনর্গঠিত করে তিন সদস্যের কমিশন গঠন করেছে সরকার। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে স্বরাষ্ট্র সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ কমিশন গঠনের কথা জানানো হয়। এই কমিশন কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃত্যু, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্ত করবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত দপ্তর বা সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও নিরূপণ করবে। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের অন্য দুই সদস্য হলেন একই বিভাগের দুই বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার ও মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরী। তাদেরকে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এর আগে গত ১৮ জুলাই বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের নেতৃত্বে। এক সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়; যেটাকে শুধু ১৬ জুলাইয়ের ঘটনা তদন্ত করতে বলা হয়েছিল।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জুলাইয়ের শুরুতে যে আন্দোলন হয়, তাতে রক্ত ঝরে ১৬ জুলাই। সেদিন চট্টগ্রামে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতাসহ তিনজন, ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী ও এক হকার এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার অনুরোধ করে বলেন, বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন হবে, দায়ীরা শাস্তি পাবে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণ পাবে আর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেছে, উচ্চ আদালতে ছাত্ররা ন্যায়বিচার পাবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। গত ১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেন। ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনা তদন্তে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণাও দেন। তবে পরদিন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিকে ঘিরে সহিংসতা আরো ছড়িয়ে যায়।

গত ১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেন। ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনা তদন্তে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণাও দেন। তবে পরদিন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিকে ঘিরে সহিংসতা আরো ছড়িয়ে যায়। তবে শিক্ষার্থীরা পরদিন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ডাক দিয়ে বিক্ষোভে নামার ঘোষণা দেয়। সেদিন তুলকালাম ঘটে যায়। সেদিন রাজধানীর বাড্ডা ও উত্তরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন ছাত্রের মৃত্যুর পর বিকেলে একযোগে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা হতে থাকে। সংঘাতে নানা পক্ষের জড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিতও স্পষ্ট হয়। নরসিংদীতে কারাগারে হামলা করে অস্ত্র লুট এবং সন্দেহভাজন ৯ জঙ্গিসহ সবাইকে মুক্ত করা হয়।

পরেরদিন পরিস্থিতি আরো সংঘাতময় হয়ে উঠলে রাতে জারি করা হয় কারফিউ। এর মধ্যেও ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মোহাম্মদপুরে সংঘাত চলতে থাকে। অবশেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে। এসব ঘটনায় সরকার দেড়শ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুই শতাধিক মৃত্যুর কথা ছাপা হচ্ছে। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে প্রধানমন্ত্রী এসব ঘটনার তদন্তে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের আওতা বৃদ্ধির ঘোষণার পাশাপাশি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাকে তদন্তে সহযোগিতার আহ্বান জানান। সরকার প্রধানের এই বক্তব্যের পর দিন পুনর্গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিশনকে কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬ অনুযায়ী তদন্ত কাজ শেষ করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করবে। কমিশনকে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যে কোনো ব্যক্তিকে তারা নিয়োগও করতে পারবে। গত ১৮ জুলাই এক সদস্যের যে কমিশন গঠন করা হয়, সেই প্রজ্ঞাপনটিও রহিত করা হয়েছে। তবে সেই প্রজ্ঞাপনের অধীন গৃহীত কার্যক্রম এই প্রজ্ঞাপনের অধীন গৃহীত হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।