ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডেঙ্গু নিয়ে তিন শঙ্কা

ডেঙ্গু নিয়ে তিন শঙ্কা

ডেঙ্গু নিয়ে এবার ৩টি শঙ্কা রয়েছে। আবার সংক্রমণ কম হওয়ার পেছনেও ৩টি কারণ আছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে যত রোগী আক্রান্ত হয়েছেন, তা গত বছরের এ সময়ের চেয়ে প্রায় সাত ভাগের এক ভাগ। বছরের শুরুতে ডেঙ্গু রোগী যে হারে বাড়ছিল, তাতে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করার আশঙ্কা করা হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত তেমনটা হয়নি। সংক্রমণ কম হওয়ার পেছনে তিনটি কারণের কথা বলছেন, কীটতত্ত্ববিদ ও মহামারী-বিশেষজ্ঞরা। তবে তারা মনে করছেন, প্রয়োজনীয় কিছু ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আবারও বাড়তে পারে। রয়েছে তিনিটি শঙ্কাও। কারণ, বর্ষার মূল মৌসুমের পরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার নজির আছে। এ ছাড়া এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার অন্য যেকোনো বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাই নিশ্চিন্ত থাকার কিছু নেই।

চলতি বছরের শুরু থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ২৫০ জন। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। গত বছর এ সময় পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৬৮৮ জন। মারা যান ২০১ জন।

২০২২ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত ২ হাজার ২০৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মারা যান ৭ জন। ওই বছর দেশে ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। মারা যান ২৮১ জন। বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয় ২০২৩ সালে। আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন আর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের।

প্রসঙ্গত, দেশে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৮ জন। এর মধ্যে ১১৮ জনই ভর্তি হয়েছেন কক্সবাজারের সরকারি হাসপাতালে।

তিন কারণে সংক্রমণ কম : এ বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেঙ্গুর সংক্রমণ আগের বছরের চেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু মার্চে এসে ডেঙ্গুর প্রকোপ গত বছরের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কমে আসে।

চলতি বছরে এমন কম সংক্রমণের পেছনে প্রথম কারণ হিসেবে অভিন্ন সেরোটাইপ বা ধরনের প্রাধান্যের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গু রোগের চারটি ধরন আছে। সেগুলো হলো- ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষণায় দেখা যায়, গত বছর মোট আক্রান্তের ৭৪ শতাংশই ডেঙ্গুর ডেন-২ ধরনে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর ছিল ডেন-১-এ ২০ শতাংশ, ডেন-৩-এ ৬ শতাংশ। ওই গবেষণায় বলা হয়েছিল, যদি একই ধরনে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসতে পারে।

আইসিডিডিআরবির সংক্রামক রোগ বিভাগের বিজ্ঞানী মোহাম্মদ শফিউল আলম ওই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার পর্যবেক্ষণ হলো, এবারও ধরন-২-এ আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। শফিউল আলম জানান, এরইমধ্যে জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ ডেন-২ তে আক্রান্ত হয়ে গেছে। একটি ধরনের প্রাধান্য কমতে অন্তত দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে। তাই নতুন কোনো ধরন না আসায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম।

এবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম হওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ জুন মাসে কম বৃষ্টি এবং অতিরিক্ত তাপ- এমনটাই মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন। তিনি বলছিলেন, বৃষ্টি কম হওয়ার ফলে এবং তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে এডিসের বংশ বৃদ্ধি কমে গেছে জুন মাসে। অথচ ওই মাসে বেশি বিস্তারের আশঙ্কা থাকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জুন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে সারা দেশে গড়ে ৯ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। আর শুধু ঢাকাতেই কম বৃষ্টি হয়েছে ৩১ ভাগ। এটি অস্বাভাবিক।

এ ছাড়া এবার ঢাকায় কম সংক্রমণের জন্য দুই সিটির অপেক্ষাকৃত বেশি সক্রিয়তাকেও কারণ হিসেবে দেখছেন মুশতাক হোসেন।

শঙ্কারও তিন দিক : এ বছর সংক্রমণ কম হলেও মৃত্যুহার গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। এ বছর রোগী অনুপাতে মৃত্যুহার প্রায় ১ শতাংশ। যেটি গত বছর এ সময়ে ছিল শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ।

এবার মৃত্যুহার বেশি হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে-নজির আহমদ বলেন, গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে শঙ্কা ছিল। মানুষ দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতো। এবার সংক্রমণ কম হওয়ার কারণে হাসপাতালে রোগী যাচ্ছে দেরিতে। তাতে মৃত্যু বাড়ছে। এর পাশাপাশি ঢাকার বাইরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণেও মৃত্যু বাড়ছে এবং নতুন এক শঙ্কা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন অধ্যাপক বেনজির। এবারে সংক্রমণের দ্বিতীয় শঙ্কা হলো ঢাকার চেয়ে বাইরে রোগীর সংখ্যা বেশি। গত বছর এ সময়ে মোট আক্রান্তের ৫৯ শতাংশ ছিল ঢাকা মহানগরের। এবার মহানগরে রোগী মোট আক্রান্তের ৩৮ ভাগ। তৃতীয়ত, বর্ষা মৌসুমে সাধারণত ডেঙ্গু বাড়ে, পরে তা কমে আসে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত