ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আগামী আট দিন ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা

দেশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

বড় বন্যার পূর্বাভাস
দেশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি, কোথাও বা ভারি বৃষ্টি। বিশষে করে ঢাকার বাইরে ভারি বৃষ্টিতে ডুবে গেছে কিছু এলাকা। পানিবন্দিও হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। গতকাল শুক্রবার এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে। আজ শনিবারও এমন বৃষ্টি হওয়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

জানা যায়, ভারি বৃষ্টির কারণে সারা দেশে বড় বন্যা হতে পারে বলে আগাম পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বিশেষ করে দেশের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার ভয়াবহতা বাড়তে পারে। এ কারণে আগাম প্রস্তুতি নিতে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

মেঘের ওপর মেঘ জমে শ্রাবণের মাঝামাঝি এই সময়টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে। রাজধানীতে গত বৃহস্পতিবার দিনভর টানা বৃষ্টি ছিল। গতকাল শুক্রবারও সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয়। যা টানা কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মোংলা বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

দেশের উপকূল থেকে শুরু করে মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে সঞ্চারণশীল মেঘ ও ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে দেশের বেশিরভাগ নদীবন্দরকে ২ নম্বর স্থানীয় নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির আশঙ্কায় পাহাড় ধসের সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে চট্টগ্রামে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মাসজুড়ে মৌসুমি বায়ুর দাপট থাকতে পারে। বৃষ্টিপাত শুক্রবার বেড়ে শনিবার থেকে কিছুটা কমতে পারে। তবে, আগামী সাত-আট দিন বৃষ্টি চলতে পারে। থেমে থেমে এই বৃষ্টি এই মাসের বেশির ভাগ সময় ধরে চলতে পারে।

গত বৃহস্পতিবার কুতুবদিয়াসহ দেশের উপকূলীয় দ্বীপগুলোতে বৃষ্টিপাত ২০০ মিলিমিটার ছাড়িয়ে গেছে। উপকূলীয় জেলাগুলোর বৃষ্টি ১০০ মিলিমিটার ছাড়িয়ে গেছে। আর ঢাকায় মোট বৃষ্টি ছিল ৩২ মিলিমিটার।

এদিকে কক্সবাজারের ৭ উপজেলার ৩০০ গ্রাম প্লাবিত। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়া উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী জানান, উপজেলার হলদিয়া পালং, জালিয়াপালং, পালংখালী ইউনিয়নের প্রায়সহ আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এতে, হলদিয়া, জালিয়াপালং ও পালংখালীর অর্ধশত গ্রামের অন্তত লাখো মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান জানান, হঠাৎ পানি বাড়ায় লোকজন রান্নাও করতে পারেনি। রাতে রান্না করা খাবার পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলায় নয় উপজেলায় টেকনাফ ও মহেশখালী ছাড়া বাকি সাত উপজেলায় ৪৭ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫ লাখ টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে, প্রয়োজন মতো সহায়তা দেওয়া হবে।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, শনিবার রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা-ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।

সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা (১-২) ডিগ্রি সে. বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

এদিকে চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি স্থানে হাঁটু পানি। মুষলধারে বৃষ্টির কারণে চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি স্থানে হাঁটুসমান পানি জমেছে।

টানা বৃষ্টিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। আবার পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় মসজিদ-মাদরাসাসহ অর্ধশতাধিক বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকেছে বলে জানা গেছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী।

জানা যায়, শহরের নাজিরপাড়া, বিষ্ণুদী মাদরাসা রোড, চাঁদপুর সরকারি কলেজ রোড, পালপাড়া, নিউ ট্রাক রোড, রহমতপুর আবাসিক এলাকায় সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা দুইদিনের ভারি বৃষ্টির কারণে চাঁদপুর শহরের বেশ কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে আবাসিক এলাকার সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল।

শহরের পুরান বাজারের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, গতকাল শুক্রবারে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। তবে বৃষ্টির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অনেক দোকান দেরিতে খুলেছে। যারা নির্মাণ শ্রমিক তারাও কাজে যেতে পারেনি।

শহরের মাদরাসা রোডের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে সড়কে পানি। এখন পর্যন্ত একই অবস্থা। পানি একটু কমলেও বৃষ্টিতে আবারও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মসজিদ ও বাসাবাড়িতেও পানি উঠেছে। পানি গড়িয়ে নামলেও কমছে না।

অন্যদিকে পানি জমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৫ কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়েছে, মিরসরাইয়ের সোনাপাহাড় এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে পানি উঠেছে। সড়কে পানি জমে পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসড়কের আরশিনগর ফিউচার পার্ক থেকে জোরারগঞ্জ রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। সড়ক ডুবে যাওয়া চলাচলরত যানবাহনগুলো চলছে ধীর গতিতে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট। যানজট সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন ওই সড়কের যাত্রীরা।

সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর সোনাপাহাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আরশিনগর ফিউচার পার্ক থেকে জোরারগঞ্জ রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। প্রায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমেছে সড়কে। সড়কের পাশে স্থানীয় শিশু ও যুবকরা খেলা করছে। সড়কে পানি জমায় সৃষ্টি হয়েছে যানজট। চিনকি আস্তানা রেল স্টেশন থেকে মামা ফকিরের আস্তানা পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় হাফেজ আলা উদ্দিন বলেন, অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমিতে শিল্পকারখানা গড়ে উঠায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তাই একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। বুধ ও বৃহস্পতিবারের ভারি বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রামমুখী যাত্রীবাহী পরিবহন উত্তরা সার্ভিসের চালক নজরুল ইসলাম বলেন, বারইয়ারহাট থেকে বেলা পৌনে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। একটু এগিয়ে চিনকি আস্তানা এলাকায় গিয়ে দেখি যানজট। প্রায় ৪৫ মিনিট যানজটে থাকার পর সোনাপাহাড় এলাকায় ডুবে থাকা সড়ক পাড়ি দিয়ে মিরসরাই এসে পৌঁছেছি। ২০ মিনিটের পর আসতে সময় লেগেছে প্রায় ১ ঘণ্টা।

দুই দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬ হাজার ৪৩৬ হেক্টর জমির ফসল : গাইবান্ধায় দুই দফা বন্যায় ৬ হাজার ৪৩৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৬৮ হাজার ৮০০ কৃষক। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কোথাও কোথাও আমন রোপণ করছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বন্যায় অন্তত ৭৬ কোটি টাকার ফসল ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া, চন্ডিপুর, বেলকা হরিপুর ইউনিয়ন, সদর উপজেলার গিদারি, মোল্লারচর, কামারজানি ইউনিয়ন, ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর, এড়েন্ডাবাড়ি ও সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের পাট, তিল, আউশ, ভুট্টা, চিনাবাদাম, আউশ, রোপা ধানের বীজতলা, কলা ও শাক-সবজি বন্যার পানিতে দীর্ঘদিন তলিয়ে থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু জমিতে ক্ষত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাট গাছ।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া চরের মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, তিন বিঘা জমিতে তিল লাগিয়ে ছিলাম। দুই দফায় বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে জমি ভর্তি পানির মধ্য থেকে নৌকায় করে সামান্য পরিমাণ আনা সম্ভব হয়েছিল।

আরেক কৃষক বেলাল মিয়া বলেন, হামরা চরে মানুষ। হামারে কপাল খারাপ। শস্য লাগিয়ে ভোগ করতে পারি না। এ দুঃখ কাকে বলল?

ফুলছড়ি এরেন্ডাবাড়ির সন্ন্যাসী চরের কৃষক আবুল হাসনাত বলেন, বন্যায় মরিচ, আমান ধানের বীজতলাসহ শাকসবজি বানের জলে তলিয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পানি থাকার কোনো ফসলই আর টিকে নাই। এবার অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

সদর উপজেলার চর খামারজানির কৃষক রেজাউল করিম বলেন, বন্যায় সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু সামান্য পাটগাছ টিকে আছে। পাটে যেটুকু পর্যন্ত বন্যার পানিতে তলে ছিল, সেটুকু পচে গেছে। আঁশ হবে না।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, এ মুহূর্তে কৃষকদের কোনো প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বন্যার পানি থেকে যেসব ফসল জেগে উঠছে সেগুলোতে পটাশ মিশিয়ে পানি স্প্রে করাসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।

বৃষ্টিতে বরিশাল শহরে জলাবদ্ধতা : টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা। এতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে হাঁটু সমান পানি জমেছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। এছাড়া টানা বর্ষণে নগরীর বেশকয়েকটি প্রধান সড়ক হাঁটু সমান পানি দেখা গেছে।

গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে নগরীর প্রাণকেন্দ্র বটতলা থেকে চৌমাথা সড়ক, বগুড়া রোডের একাংশ, রাজাবাহাদুর সড়কসহ অলিগলিতে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত