দাম কিছুটা কমলেও অখুশি ক্রেতারা

* মাছ ও গরুর মাংসে আগুন * কমেছে মুরগির দাম * সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দিনদিন বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। একবার বাড়লে সহজে আর কমে না অধিকাংশ পণ্যের দাম। গরুর মাংস, মাছ-ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি দ্রব্যের দামের আগুনে যেন হাত পুড়ছে মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের। তবে ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম কমে আসায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, অপরিবর্তিত দামে গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হলেও ব্রয়লার মুরগি সোনালি মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০-৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৬৫-১৭৫ ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৯০ টাকার মধ্যে।

এদিকে মাছের বাজার ঘুরে তেমন কোনো স্বস্তির খবর পাওয়া যায়নি। আগের মতো চড়া দামে প্রতি কেজি পাঙাশ ২০০-২২০, তেলাপিয়া ২০০-২৫০, চাষের কৈ ২৫০-২৭০, ছোট রুই ২৫০-২৬০, কার্প জাতীয় মাছ ৩০০, চাষের শিং ৪৫০-৬০০, সাগরের পোয়া ৪০০-৬৫০ ও বাইলা মাছ বিক্রি হচ্ছিল ৬৫০-৭০০ টাকায়।

সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সব ধরনের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। বাজারে খাদ্যপণ্যের দামও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। যদিও কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনী নামানোর পর পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কিছুটা স্বাভাবিক মনে হলেও এখনো মানুষের মনে আতঙ্ক কাটেনি। পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজারে আগের থমথমে পরিস্থিতির রেশ আছে। বাজারে মানুষ কম আসছে। তাতে বিক্রি কমেছে। তবে তুলনামূলক পণ্যের সরবরাহ বাড়ায় জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কমেছে।

একজন গরুর মাংস বিক্রেতা বলেন, এই সময়ে গরুর মাংসের চাহিদা ভালোই থাকে। যে কারণে দামটা মোটামুটি ৮০০ টাকার মধ্যেই আটকে থাকে। আজকের বাজারে গুরুর মাংস বিক্রি করছি ৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা। কলিজা বিক্রি করছি ৭৮০ টাকা করেই। এছাড়াও গরুর পায়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত জোড়া।

এদিকে মুরগির মাংস বিক্রেতা বলেন, গত কয়েকদিনে ব্রয়লার মুরগির দামটাও একটু কম। ১৭০ টাকা কেজি সর্বশেষ মাসখানেক আগে ছিল, এরপর আবার দামটা বেড়ে যায়। গত সপ্তাহেও ২০০ টাকার বেশি ছিল, আজ ১৭০ করে বিক্রি করছি।

তিনি বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মাংসের চাহিদাটা একটু বেড়ে যায়, বাজারে যদি সেই পরিমাণে সরবরাহ না থাকে, তাহলেই দাম বেড়ে যায়, যেখানে আমাদের কিছুই করার থাকে না। তবে আশা করছি এখন মোটামুটি ১৭০-১৮০ টাকার মধ্যেই থাকবে।

আব্দুর রাফি ইসলাম রন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যারা মেসে থেকে পড়াশোনা করি, আমাদের অনেকটাই মুরগির মাংসের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। কিছুদিন আগে দামটা বেড়ে গিয়েছিল, আমরাও একটু অস্বস্তিতে ছিলাম। এখন দেখছি আবার দামটা কমেছে। কিন্তু মাছের দামটা ঠিকই আবার বেড়েছে।

অন্যান্য পণ্যের গতি-প্রকৃতি স্বাভাবিক না হলেও সপ্তাহের ব্যবধানে সবজি, মাছ ও ডিমের দাম আগের অবস্থায় ফিরেছে। তবে, ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজারে আগের থমথমে পরিস্থিতির রেশ আছে। বাজারে মানুষ কম আসছে। তাতে বিক্রি কমেছে। পণ্যের সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কিছুটা কমেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়, বরবটি ১০০ টাকায়, কাঁকরোল ৭০-৮০ টাকায়, পটোল ৫০-৬০ টাকায়, কাঁচামরিচ ১৮০-২০০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকায়, ধুন্দল ৫০-৬০ টাকায়, পেঁপে ৬০ টাকায়, কচুরলতি ৭০-৮০ টাকায়, কচুরমুখী ৭০-৮০ টাকায়, শসা ৬০-৭০ টাকায়, গাজর ১২০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া ও টমেটো ১৫০-১৮০ টাকায়।

একজন সবজি বিক্রেতা জানান, আজকের বাজারে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, যা দুইদিন আগেও ছিল ৩০-৪০ টাকা। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, যা ছিল ৮০ টাকা। গাজর ১২০ টাকায়, যা ছিল ১৬০ টাকা। শসা বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। তিনি জানান, টমেটোর সিজন শেষ হয়ে যাওয়ায় টমেটোর দাম দিনদিন বাড়ছে। আজকের বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায় এবং কচুরমুখি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৮০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, কয়েকদিন আগেও এক পোয়া কাঁচামরিচ কিনেছি ৪০ টাকায়, আজ সেটিই কিনলাম ৬০ টাকায়। সবকিছুর দাম বাড়তি যাচ্ছে, সেখান থেকে আমাদের ছাড় দেয়নি কাঁচামরিচও। এটারও এখন বাড়তি দাম। আমার তো মনে হচ্ছে, সপ্তাহের ব্যবধানে এত দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের শক্ত সিন্ডিকেটই দায়ী। তারা অধিক লাভের আশায় ইচ্ছাকৃতভাবেই দাম বাড়িয়েছে। ক্রেতাদের এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে বিক্রেতারা বলছেন, আন্দোলনের কয়েক দিন বাজারে সরবরাহ কম থাকায় সব ধরনের সবজির দাম অনেক বেশি ছিল। এখন বাজারে সবজি আসতে শুরু করায় দাম কমে অর্ধেকে নেমেছে। তবে, বিক্রি কম হচ্ছে।