ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ফের উত্তাল দেশ

* বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী গণমিছিল অনুষ্ঠিত * হামলা. সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ॥ আহত অনেকে * আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ফের উত্তাল দেশ

কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় বিচারের দাবিতে ফের শিক্ষার্থী-জনতা রাজপথে নামায় ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে সারাদেশ। গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর দ্রোহযাত্রার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ শহীদ মিনারে এসে জড়ো হন। শিক্ষার্থী-জনতার সম্মিলিত উদ্যাগে জনসমুদ্রে পরিণত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।

সরেজমিন দেখা গেছে, শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নিয়েছেন এ কর্মসূচিতে। এ সময় তারা স্লোগান দিতে থাকেন, আমার ভাই মরলো কেন, স্বৈরাচার জবাব চাই। শিক্ষার্থী-জনতার এই বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আসিফ নজরুলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজ শাখার অন্যতম সমন্বয়ক রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন। পরে শাহবাগ থেকে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাবের দিকে চলে যায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, পুলিশ সরকারের আদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের হত্যা করেছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের ওপর গণগ্রেপ্তার চালিয়েছে। এসব কিছুর বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হবো না। এ সময় ঢাকা কলেজ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, এশিয়া প্যাসেফিক ইউনিভার্সিটিসহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।

এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। তারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে দীর্ঘসময় ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাইকে মারলো কেন, পুলিশ তুমি জবাব দাও’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’, ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।

শহীদ মিনারের বিশাল জমায়েতে অসংখ্য শিক্ষার্থী ও নানান শ্রেণিপেশার মানুষ যোগ দেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই চলে এ আন্দোলন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল কাদের প্রেরিত এক বার্তায় গতকাল শুক্রবার সারা দেশে ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ নামে নতুন কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানানো হয়। বার্তায় বলা হয়, ‘আপনারা জানেন, আমরা আমাদের কোনো ব্যক্তিস্বার্থের জন্য আন্দোলন করছি না। আমাদের আন্দোলন আপনার ও আপনার সন্তানের মুক্তির জন্য। কী অপরাধ ছিল আমাদের? সাংবিধানিক অধিকার চাওয়াটা কি আমাদের অপরাধ? কী অপরাধে শত শত ভাইদের হত্যা করা হলো? আমরা এর জবাব জানি না। কিন্তু এর জবাব ও বিচার না নিয়ে আমরা আমাদের আন্দোলনকে থামাব না। জাতির এই দুর্দিনে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেপ্তার হওয়া সবার স্মরণে শুক্রবার দেশব্যাপী ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

নির্বিচারে হত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া, শহীদদের কবর জিয়ারত, মন্দির ও গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করতে বলা হয়। একই সঙ্গে শ্রমিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী, আলেম-ওলামাসহ বাংলাদেশের সব স্তরের নাগরিকদের প্রতি ঘোষিত কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল করার আহ্বান জানানো হয়।

প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ‘দ্রোহযাত্রা’ সমাবেশ : জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে পালিত হলো ‘দ্রোহযাত্রা’ সমাবেশ। এ সময় তারা গান-কবিতা-পথ নাটক পরিবেশন করেন, দিতে থাকেন সরকারবিরোধী স্লোগান। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুপুর আড়াইটা থেকে তারা জড়ো হতে থাকেন। পরবর্তীতে তারা গিটার-ঢোল বাজিয়ে গান পরিবেশন করেন। ‘জনতার বৃষ্টি’ নামে পথ নাটকও পরিবেশন করেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমাদের সবাইকে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যারা সহিংসতা চালাতে চায় তাদের ব্যাপারে সাবধানে থাকতে হবে। সরকার এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গোষ্ঠী চক্রান্তের চেষ্টা করছে। তার থেকে সাবধান থাকতে হবে। দেশের ৩ বছরের বাচ্চা থেকে শ্রমজীবী-পেশাজীবী সবার ওপর আক্রমণ আসছে। জমিন থেকে আক্রমণ আসছে, আকাশ থেকে আক্রমণ আসছে। গুলিতে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। যারা নিহত হয়েছে তাদের মা-বাবারা হাহাকার করছেন। হাজার হাজার আহত হয়েছেন, তাদের মা-বাবারা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। তিনি আরো বলেন, এই জুলাইয়ে যেরকম হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, আমরা ’৫২-এর পর থেকে অনেক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি; কিন্তু মাত্র কয়েকদিনে এরকম হত্যাযজ্ঞ কেউ করেনি, এতো রক্তপাত কেউ করেনি। সরকার ভেবেছিল এরকম নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালালে আন্দোলন দমে যাবে। কিন্তু প্রতিবাদ আরো বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের পাশে শিক্ষক-অভিভাবক নাগরিক সমাজ পাশে দাঁড়িয়েছে।

বিকাল সাড়ে ৩টায় তারা তাদের সমাবেশ শেষ করে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শহীদ মিনারের উদ্দেশে মিছিল নিয়ে যান। সমাবেশ চলাকালে প্রেসক্লাবের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যদের উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।

সায়েন্সল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণমিছিল শেষে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিবাদ জানাতে তারা রাস্তায় নেমেছেন। সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ওপরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি ও হত্যার প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নেমেছেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা, জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো, স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে, দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেবো রক্ত, রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায় ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। এদিকে, সায়েন্সল্যাব মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাশেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে।

উত্তরায় সংঘর্ষ, একজন গুলিবিদ্ধ : রাজধানীর উত্তরায় জমজম টাওয়ারের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত