শিক্ষার্থীদের জন্য গণভবনের দরজা খোলা : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিনিধি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ঠেকাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গণভবনে তার সঙ্গে বসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।

গতকাল শনিবার সরকারি বাসভবন গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথাগুলো বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আবারও বলছি, আন্দোলনকারীরা চাইলে আমি এখনো আলোচনায় রাজি। তারা যেকোনো সময় (গণভবনে) আসতে পারে। দরকার হলে তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়েও আসতে পারে।

ছাত্রদের মুক্তির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর : ছাত্রদের জামিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রেপ্তার যারা হয়েছে তাদের মধ্যে যারা ছাত্র ছিল, তাদের সবাইকে জামিনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি এও নির্দেশ দিয়েছি, এর ভেতরে যারা নিরীহ আছে, তাদের সবাইকে এবং ছাত্র যারা অর্থাৎ একেবারেই যারা খুনের সাথে জড়িত না, এ সব ধ্বংসাত্মক কাজের সাথে জড়িত নয়, তাদের মুক্তি দেওয়া শুরু করুন এবং সেটা শুরু হয়ে যাচ্ছে। যারা যারা দোষী, ঠিক তাদের চিহ্নিত করে তারা থাকবে (জেলে) এবং বাকিরা যাতে মুক্তি পায়, সে ব্যবস্থা কিন্তু আমরা করে দিয়েছি।

রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ওই ঘটনা যে পুলিশ সদস্য জড়িত তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কিন্তু কারও দাবির অপেক্ষা রাখিনি। আমি চাই যারা এর সঙ্গে জড়িত, সে যেই হোক- সে পুলিশই হোক বা অন্য যে কেউই হোক, যারা অস্ত্রধারী, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটায়, তাদের সকলেরই বিচার হোক, তদন্ত হোক। শুধু ঢাকা নয়, যতগুলো জায়গায় এ সব ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ হয়েছে, সেগুলো তদন্ত করে যথাযথ বিচার হবে।

এজন্য আমি যে জুডিশিয়াল কমিশন করেছিলাম সেখানে আরো দুজন জাজ নিয়োগ দিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিশন করেছি। তাদের কর্মপরিধিও বাড়িয়ে দিয়েছি সময়ও বাড়িয়ে দিয়েছি। যাতে যথাযথভাবে এটা তদন্ত হয়।

আমি চাই এ ধরনের অন্যায় হত্যাকাণ্ডের যাতে যথাযথ তদন্ত হয়, এর বিচার হবে। আমি স্পষ্ট বলি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই বিচার হবে। যারা জড়িত তদন্ত করেই তাদের বের করা হবে। যারা অস্ত্রধারী, যেমন রংপুরে একটা ঘটনা ঘটেছে। যে পুলিশ দায়ী সেই পুলিশকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে এবং তার বিচার হবে, যুক্ত করেন তিনি। নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন পরিস্থিতির মধ্যে গণভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন সরকারপ্রধান। আজ রোববার নিরাপত্তা কমিটিসহ সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। আজ রোববার গণভবনে মোট চারটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ রোববার বেলা ১১টায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করবেন। বিকাল ৪টায় সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে বসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত ১৬ জুলাই থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ১৫০ জন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংখ্যা দুই শতাধিক বলে দাবি করা হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার সহিংসতার ঘটনায় খুলনায় এক পুলিশ সদস্য এবং হবিগঞ্জে এক যুবক নিহত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গত শুক্রবার সারা দেশে গণমিছিল কর্মসূচি পালিত হয়। মিছিলে কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী ও কলাকুশলীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ অংশ নেন। এদিন ঢাকার অন্তত ১১টি স্থানে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এর মধ্যে উত্তরার একটি স্থান ছাড়া সব জায়গায় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ হয়।

ঢাকার উত্তরা, খুলনা, হবিগঞ্জ ও সিলেটে গনমিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে হতাহতের প্রতিবাদে গত (শনিবার) সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল এবং রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা।