বিএসএমএমইউতে হামলা

৫০ গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন, আতঙ্কে রোগীরা, হাসপাতাল ছেড়েছেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা

প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভেতরে থাকা অন্তত ৫০টি গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনার পর হাসপাতালের ভেতরে ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে। এমনকি চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে অনেকেই ভয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেছে বলেও জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র।

গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার প্রথম সূত্রপাত ঘটে। এরপর ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা বিএসএমএমইউয়ের ভেতরে ঢুকে গেলে শিক্ষার্থীরাও তখন হাসপাতালে ঢুকে পড়ে। এ সময় ভেতরে থাকা গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর এবং আগুন দেয়া হয়।

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, সকালে শাহবাগে শিক্ষার্থীরা এলে সেখানে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা প্রথমে ধাওয়া দেয়ার চেষ্টা করে। পরে শিক্ষার্থীরা তাদের পাল্টা ধাওয়া দিলে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান করছেন। শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিলে ওই এলাকার সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে থাকা অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলসহ অন্তত ৫০টি গাড়িতে ভাঙচুর করতে দেখা যায়। তবে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগে জড়িতদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। বিএসএমএমইউ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাইরের আন্দোলনের কারণে সকাল থেকেই বিএসএমএমইউর গেটগুলো প্রায় বন্ধই করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বেলা ১১টার দিকে কিছু লোক হুড়োহুড়ি করে ভেতরে ঢুকরে গেলো, তাদের সঙ্গে বাইরে থাকাদের ইটপাটকেল ছোঁড়া শুরু হলো, এক পর্যায়ে গেট ভেঙে শত শত আন্দোলনকারী ঢুকে পড়লো এবং নিমিষেই হাসপাতালের ভেতর ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়ে গেল।

এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার রোগী ডি ব্লকে ভর্তি, একটা পরীক্ষার জন্য আউটডোর-১ নম্বরে আমি লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। এরমধ্যে বাইরে হঠাৎ করেই ধুমধাম আওয়াজে ভাঙচুর শুরু হয়। এ সময় লাইন ভেঙে সবাই ছোটাছুটি করে চলে যায়। আমিও বুঝতে পারছিলাম না কী করবো, কোনোরকমে এক দৌড়ে বাইরে চলে এসেছি। ওইদিকে আমার রোগীর কী অবস্থা বুঝতে পারছি না। সঙ্গে মোবাইলও আনিনি যে ফোন দিয়ে খবর নেব। তিনি বলেন, একটা হাসপাতালের ভেতর যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? দুই দল মারামারি করবে, তারা হাসপাতালের ভেতর কেন আসবে? তাহলে রোগীরা কোথায় যাবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদার বলেন, আন্দোলনকারীদের হামলায় বেশ কয়েকজনকে রোগীও আহত হয়েছেন। তারা এখন আতঙ্কে ছোটাছুটি করছে। একটা হাসপাতালের ভেতর এরকম হামলা নিন্দনীয়। সরকারবিরোধীরা একটা ভয়াবহ জঘন্য কাজ করেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে হামলা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একদল সন্ত্রাসীদের দ্বারা বিএসএমএমইউ আক্রান্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে, স্থাপনায় ভাঙচুর করা হয়েছে। এ অবস্থায় চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা অবরুদ্ধ হয়ে আছেন।