বিজয়ের সময় পরাজিতরা নিরাপদ থাকলে বিজয়ের আনন্দ মহিমান্বিত হয়

বললেন তারেক রহমান

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিজয়ের সময় পরাজিতরা নিরাপদ থাকলে বিজয়ের আনন্দ মহিমান্বিত হয়- এমন মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিজয়ের এই আনন্দের সময় কোনো রাহু মুক্তির এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত শান্তভাবে উদযাপন করুন। অনুগ্রহ করে কেউ প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন না। কেউ নিজের হাতে দয়া করে আইন তুলে নিবেন না। অর্জিত বিজয় যাতে লক্ষচ্যুত না হয় সে ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। গতকাল সোমবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।

নিম্নে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পুরো বক্তব্যটি তুলে ধরা হলো- গৌরবজনক এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে সাহসী ছাত্র-জনতাকে বিরচিত অভিনন্দন। হাজারো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে ঐতিহাসিক এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গণহত্যাকারী খুনি হাসিনার পতন হয়েছে। রাহু মুক্ত হয়েছে প্রিয় বাংলাদেশ। জনতার বিপ। লবের প্রথম ধাপ চূড়ান্তভাবে সফল হয়েছে। লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ কখনো পরাজয় মানতে পারে না। এই ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণিত হয়েছে দল মত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে এই বাংলাদেশকে কেউ কখনো পরাজিত করতে পারে না, পারবে না। প্রিয় দেশবাসী বিজয়ের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমি আজ সেইসব মায়েদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই- এই গণবিপ্লবে যারা তাদের প্রিয় সন্তানকে হারিয়েছেন এভাবে গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদী শাসনকালে অনেক সন্তান তার পিয়তম পিতাকে, অনেক স্ত্রী প্রিয়তম স্বামী হারিয়েছেন। গুম খুন অপহরণ করে অসংখ্য মায়ের বুক খালি করেছে। আপনাদের সন্তানের শহীদ মৃত্যু স্বজনদের ত্যাগ-তিতীক্ষায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রিয় বাংলাদেশ আরেকটি বিজয় দেখেছেন। জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব সফল করতে গিয়ে অসংখ্য ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। বাসায় হাসপাতালে কিংবা ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন যন্ত্রণাবিদ্ধ সময়ে সমস্ত ভালোবাসা নিয়ে আপনাদের পাশে আজ সারা বাংলাদেশ। খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে অসংখ্য মানুষ মিথ্যা মামলা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন। কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। আমি অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের কারামুক্তির দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা যাতে আবার স্বাভাবিকভাকে হলে হোস্টেলে ক্লাসে ফিরতে পারেন এবং পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। আশা করি সেই পদক্ষেপ দ্রুত গ্রহণ করা হবে। প্রিয় দেশবাসী দেশের আঠারো কোটি মানুষকে জিম্মি করে সাড়ে বারো কোটি ভোটারের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল। হত্যাকারী গণহত্যাকারী খুনি হাসিনার পতনের মধ্যদিয়ে জনগণ তাদের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, লুণ্ঠিত ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছে। এর মধ্যদিয়ে জনগণের বিপ্লবের প্রথম ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এরপর একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যেদিন দেশের ১২ কোটি ভোটার নিরাপদে নিশ্চিন্তে ভোট দিয়ে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। রাষ্ট্র সরকার শাসন প্রশাসনে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। সর্বোপরি একটি গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন রাষ্ট্র সমাজ গড়তে পারবে। তখনই জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের চূড়ান্ত বিজয় সফলভাবে আসবে। প্রিয় দেশবাসী জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে তাই যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবশ্যই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিএনপিসহ বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সব রকমের সহযোগিতা করবে। প্রিয় দেশবাসী এবার আমি আপনাদের কাছে একটি বিনীত আহ্বান রাখতে চাই- বিজয়ের সময় পরাজিতরা নিরাপদ থাকলে বিজয়ের আনন্দ মহিমান্বিত হয়। সুতরাং বিজয়ের এই আনন্দের সময় কোনো রাহু মুক্তির এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত শান্তভাবে উদযাপন করুন। অনুগ্রহ করে কেউ প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন না। কেউ নিজের হাতে দয়া করে আইন তুলে নিবেন না। অর্জিত বিজয় যাতে লক্ষচ্যুত না হয় সে ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। ৫২, ৭১ কিংবা ৯০-এর মতো ছাত্র-জনতা আবারো একটি বিজয়ের ইতিহাস রচনা করেছে। প্রিয় দেশবাসী আপনাদের আবারো সবাইকে বিরচিত অভিনন্দন। আল্লাহ হাফেজ। বাংলাদেশ-জিন্দাবাদ।