সাড়ে ৬ বছর পর মুক্ত খালেদা জিয়া

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আমিরুল ইসলাম অমর

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছর পর মুক্তি দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাষ্ট্রপতির প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন মামলায় আটকদের মুক্তি দেয়া শুরু হয়েছে এবং এরইমধ্যে অনেকে মুক্তি পেয়েছেন। এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তিনি গুলশানের ফিরোজায় ফিরেন। জানামতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার বয়স এখন প্রায় ৮০ ছুঁইছুঁই। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, চোখের সমস্যা ও হৃদরোগে ভুগছেন। এছাড়া তার মেরুদণ্ড, ঘাড়, হাত, হাঁটুর সমস্যাসহ আরো কিছু শারীরিক জটিলতা আছে। এছাড়া তিনি পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত।

সূত্রমতে, খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। তখন থেকে তিনি গুলশানের ফিরোজা বাসায় অবস্থান করছেন। এরপর থেকে তার দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।

সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা আছে। এর মধ্যে দুই মামলায় তিনি কারা ভোগ করছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া চেরিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর নাইকো মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানিয়েছেন, ম্যাডামকে যে দুইটি মামলায় দণ্ড দেয়া হয়েছে তার আপিল পেন্ডিং আছে। তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা আছে পাঁচটি। আর দুদকের মামলা আছে পাঁচটি। এগুলোর মধ্যে আছে নাইকো, গ্যাটকো, বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির মামলা। নাইকো মামলায় বিচারিক আদালত অভিযোগ গঠন করেছে। আমরা উচ্চ আদালতে অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে আপিল করেছি, আপিল পেন্ডিং আছে। আর বাকি মামলাগুলো ফৌজদারি। তিনি সেগুলোতে হুকুমের আসামি। এগুলো হামলা-ভাঙচুরের মামলা। কুমিল্লা, খুলনা, ঢাকায় এরকম মামলা আছে। ওই মামলাগুলো নিয়ে আপাতত কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে খালেদা জিয়া আত্মপ্রকাশ করেন। সেদিন তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন। একই বছর ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে খালেদা জিয়া প্রথম বক্তব্য রাখেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হন এবং এপ্রিল মাসের প্রথমে বিএনপির এক বর্ধিত সভায় তিনি ভাষণ দেন। সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কয়েকমাস পরেই খালেদা জিয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। এ সময় এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর ১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮০ দশকে জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশজুড়ে খালেদা জিয়ার ব্যাপক পরিচিত গড়ে ওঠে। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে বিএনপি জয়লাভ করে। রাজনীতিতে আসার ১০ বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক জীবনে যতগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তার সবগুলোতেই জয়লাভ করেছেন। ২০০১ সালে ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে খালেদা জিয়ার সরকার একের পর এক বিতর্কের মুখে পড়ে। সেই বিতর্ক থেকে তার দল ও সরকার আর বেরিয়ে আসতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ঘটে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার দল বিএনপির ব্যাপক ভরাডুবি হয়। এরপর থেকে দলটি রাজনৈতিকভাবে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি রাজনৈতিকভাবে অনেকটা চাপে পড়ে যায়। খালেদা জিয়ার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এসে হাজির হয় তার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হবার কারণে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারেননি। দেশে-বিদেশে সে নির্বাচন প্রবল বিতর্কের মুখে পড়ে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে বেগম জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে কারাগারের বাইরে আছেন। যদিও এজন্য তাকে নানা বিধিনিষেধ পালন করতে হয়। যার মধ্যে ছিল- রাজনীতিতে অংশ না নিতে পারা, কোনো ভাষণ বা বক্তব্য না দেয়া, বিদেশ যেতে না পারা ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, গত সোমবার দুপুর আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন। এ সময় তার ছোট বোন শেখ রেহানাও সঙ্গে ছিলেন। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। শেখ হাসিনা যাওয়ার আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি সে সুযোগ পাননি।