আজ শপথ নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

অন্যরকম বাংলাদেশ দেখলো বিশ্ব

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর গত পাঁচ দিন কোনো সরকার ছাড়া পার করছে দেশ। ফলে অন্যরকম একটি বাংলাদেশ দেখলো বাংলাদেশের মানুষ। এতে দেশের আইনশৃঙ্খলা আরো বেগতিক হয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ থানা আক্রমণের শিকার হলে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা একরকম অঘোষিতভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। এই সুযোগে দুর্বৃত্ত ও একশ্রেণির মানুষ চুরি, ডাকাতি ও লুট করছে। তবে রাস্তায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন ও ধর্মীয় স্থাপনা রক্ষায় সাধারণ ছাত্র এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা কাজ করছে।

জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি জানান, এ সরকারে ১৫ জনের মতো থাকতে পারেন। সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি ছাড়াও রাজনৈতিক দল ও ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সবার সম্মতিক্রমে ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় ফিরছেন। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে যাবেন বলেও জানান তিনি।

জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওয়াকার-উজ-জামান আরো বলেন, সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের সঙ্গে আছে এবং থাকবে। অনেকে নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। দয়া করে কেউ কোনো গুজবে কান দেবে না।

সেনাপ্রধান বলেন, পুলিশ সক্রিয় হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হয়ে আসবে। পরিস্থিতি দিনদিন উন্নতি হচ্ছে, আশা করছি দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এ সময় তিনি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ছাত্রদের কাজের প্রশংসা করেন। ছাত্রদের তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সব ইতিবাচক কাজ অব্যাহত রাখারও অনুরোধ জানান সেনাপ্রধান।

এদিকে গত তিন দিন সরকার না থাকায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কিছু কিছু এলাকায় ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাইয়ের খবর পাওয়া গেছে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তার এলাকায় ডাকাতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার কয়েকটি বাসার বাসিন্দারা বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে সেখানে ডাকাতি হয়েছে। বসিলা এলাকার এক বাসিন্দা মো. সেকান্দার বলেন, গভীর রাতে একদল লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের পাশের বাসায় এসে হামলা করে। জোরপূর্বক বাসার মূল ফটক খুলে তারা নগদ টাকা, অলংকার লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ওই এলাকার আরো কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোহাম্মদপুরের নবীনগর, নবোদয় হাউজিং ও ঢাকা উদ্যান এলাকার কয়েকটি বাসায় গতকাল রাতে ডাকাতি হয়েছে। যেসব বাসায় ডাকাতি হয়েছে, সেখানে বাসিন্দারা চিৎকার করে সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে যেতে সাহস পাননি। বাসিন্দারা আরো বলেন, কয়েকটি দোকান ভেঙে জিনিসপত্র লুট করা হয়েছে।

দ্রুত সময়ের মধ্যে থানাগুলোকে সক্রিয় করা না হলে এ ধরনের ঘটনা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। গত মঙ্গলবার রাতে যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, বাড্ডা, রামপুরা ও ভাটারা এলাকায় ডাকাতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার খবর পাওয়া যায়।

ঢাকার বাইরে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় কয়েকটি বাসায় ডাকাতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। আশুলিয়ার একটি তেলের পাম্পে চাকরি করেন হাসান মিয়া। তিনি বলেন, তাদের এলাকার কয়েকটি বাসা ও দোকানে লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা বসে একটি কমিটি গঠন করেছেন। থানায় পুলিশ না আসা পর্যন্ত তারা নিজেরা পাড়া-মহল্লায় পাহারা দেবেন।

বিভিন্ন জেলায়ও ডাকাতির খবর পাওয়া গেছে। নড়াইলে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মামুন আবদুল্লাহ নামের এক যুবক। তিনি বলেন, দুই দিন ধরে নড়াইল শহরের বিভিন্ন বাসা ও দোকানে লুটপাট হয়েছে। এছাড়া মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার কয়েকটি বাড়িতে হামলা করে জিনিসপত্র লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইলের নাগরপুরেও ডাকাতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

জনরোষের মুখে গত সোমবার দুপুরে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তারপর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার থানাগুলোতে হামলা হয়। এরপর থেকে তিন দিন ধরে থানাগুলোতে পুলিশের উপস্থিতি কম।

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরই মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় সারা দেশ। বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়েন সাধারণ ছাত্র-জনতা। এর মাঝেও কিছু জায়গাতে সহিংসতা হয়।

এদিকে সোমবার বিকালে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়ি ও আওয়ামী লীগের অফিসসহ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। বিশেষ করে কয়েকটি মন্দিরের সামনে আচমকাই জড়ো হয় কিছু মানুষ। তারা কিছু মন্দিরে ঢিলও ছোড়ে। এরপর থেকেই দেশের মন্দিরগুলোর নিরাপত্তায় কড়া নজরদারি করছে মাদ্রাসা ছাত্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

গত মঙ্গলবার কুমিল্লা নগরী ও আশপাশের এলাকার মন্দিরগুলো ভাঙচুর থেকে বাঁচাতে মন্দিরের সামনে অবস্থান নেন তারা। মধ্যরাতেও কুমিল্লার বিভিন্ন মন্দিরের সামনে তাদের দেখা যায়।

মাদ্রাসাছাত্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, নতুন স্বাধীনতার ফাঁকে কেউ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে সেজন্যই এই আন্দোলন। এভাবে আমাদের ভাইদের জান ও মালের রক্ষা করাও স্বাধীনতার অংশ। এটাও আমাদের আন্দোলনকে ধারণ করার অর্থ।