ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান

বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে প্রতিবেশী দেশে ছড়াবে : ড. ইউনূস

বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে প্রতিবেশী দেশে ছড়াবে : ড. ইউনূস

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এখন বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় বিষয়। যদি তা অর্জন করা না যায়, তাহলে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলিতে এর প্রভাব পড়বে। গত মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে, পরিস্থিতি উন্নতির দিকে মোড় নিয়েছে। এখন দেশকে নিশ্চিত করতে হবে যেন এটার উদযাপন খারাপ পরিণতির দিকে না নিয়ে যায়। উদযাপনের পর সবার ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত এবং সবার সব কাজ যথারীতি করা উচিৎ। বিক্ষোভকারীদের কারা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে এর পরিণতি কতটা গুরুতর হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা খুব একটা সুখকর পরিস্থিতি হবে না।

ড. ইউনূস বলেন, আপনি যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করেন, তা মিয়ানমারসহ বাংলাদেশের চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে এবং পশ্চিমবঙ্গের সেভেন সিস্টার্সের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। এটি আমাদের চারপাশে এবং মিয়ানমারের সর্বত্র একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হবে... এবং এটি একটি বড় সমস্যা হবে। কারণ এখানে এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা রয়েছে।

পরিস্থিতি বর্ণনা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ, যারা কখনো ভোট দেয়নি। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে তারা সুখী এবং আইন মান্যকারী নাগরিক। তারা জানে তাদের গণতন্ত্র আছে। এই তরুণরা তাদের জীবনে কখনো ভোট দেয়নি। তারা কখনই ভোটকেন্দ্রে যাননি কারণ সেই নির্বাচনগুলো কখনই অনুষ্ঠিত হয়নি। আমাদের সূচনা পয়েন্ট হলো আমাদের তরুণদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

ইউনুস সেন্টার থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত থাকতে এবং সব ধরনের সহিংসতা, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিবৃতিতে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, আমি সাহসী ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, যারা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তবে রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে যারা ছাত্রদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। আসুন আমরা আমাদের এই নতুন বিজয়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করি।

তিনি আরো বলেন, কোনো প্রকার ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে এবং সব ধরনের সহিংসা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্র ও দলমত নির্বিশেষে সবাইকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছি। আমাদের প্রিয় এই সুন্দর ও বিপুল সম্ভাবনাপূর্ণ দেশটিকে আমাদের নিজেদের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা এবং একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন আমাদের প্রধান কাজ। একটি নতুন পৃথিবী বিনির্মাণে আমাদের তরুণরা প্রস্তুত। অকারণ সহিংসতা করে এই সুযোগটি আমরা হারাতে পারি না। সহিংসতা আমাদের সবারই শত্রু। অনুগ্রহ করে শত্রু সৃষ্টি করবেন না। সবাই শান্ত থাকুন এবং দেশ পুনর্গঠনে এগিয়ে আসুন। বিবৃতিতে বলা হয়, অনুগ্রহ করে নিজে শান্ত থাকুন এবং আপনার আশেপাশের সবাইকে শান্ত থাকতে সহায়তা করুন।

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভারতের সাবেক কূটনীতিক, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ড. ইউনূসই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বিকল্প। ও পি জিন্দল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত জানিয়েছেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা আছে। ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি হলেন অ্যাসপিরেশনাল ব্যক্তিত্ব, তাকে দেখে তারা উদ্বুদ্ধ হয়।’ শ্রীরাধার মতে, ‘ইউনূসকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছেন শেখ হাসিনা। ভারতের সঙ্গে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বিকল্প।’

বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন রিভা গঙ্গোপাধ্যায় দাস। তিনি বলেছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ড. ইউনূসকে চিনি না। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশের বাইরে ছিলেন। আর ভারতের মনোভাবের কথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।’

সাবেক আইপিএস অফিসার শান্তনু মুখোপাধ্যায় একসময় বাংলাদেশে ছিলেন। এই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞও জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসই সবচেয়ে ভালো বিকল্প। শান্তনু মনে করেন, ‘ড. ইউনূস পশ্চিমা দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য। ছাত্ররাও তাকে চাইছে। সেনাবাহিনীর কাছেও তিনি গ্রহণযোগ্য। তিনি ব্যালান্স করে চলতে পারবেন।’ তিনি বলেছেন, ‘তবে ড. ইউনূসের সামনে সবচেয়ে বড় কাজ হলো সহিংসতা বন্ধ করা। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা।’ প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায়চৌধুরীও মনে করেন, ‘ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে খুবই গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। তিনি বলেছেন, ‘ড. ইউনূসই বর্তমান পরিস্থিতিতে সেরা বিকল্প। তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও দেশের ভেতরে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ভারতের কাছেও তিনি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব।’ উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে গত সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গণমাধ্যমকে বলেন, রাষ্ট্রপতির পরামর্শে সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করবে। তিনি বিক্ষোভকারীদের দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করার আবেদনও জানান। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকের পর নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত