ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে : তারেক রহমান

বিএনপির সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল
দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে : তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে হাজারো শহীদের রক্তে রঞ্জিত বিপ্লবের প্রথম ধাপ সফল হয়েছে মাত্র। ছাত্র-জনতার এই রক্তঝরা বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। তাই বিপ্লবের লক্ষ্য বাস্তবায়নে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। গতকাল বুধবার বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল নামে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষ স্বাধীনতা রক্ষায় কোনো শর্ত মানে না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে ২০২৪ সালে দেশের জনগণ দেখেছে এক নতুন স্বাধীনতা। তিনি বলেন, দেশের চলমান অর্জনকে নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র চলছে। ধর্ম-বর্ণ পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে নিরাপত্তা দিতে হবে। যে যেখানে বসবাস করছে সেখানে ধর্মীয় পরিচয় যা-ই হোক না কেন সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে দাঁড়িয়ে সব জনগণের পরিচয় একটি সবাই বাংলাদেশি।

তারেক রহমান বলেন, পুলিশ জনগণের শত্রু নয়। বিনা ভোটে নির্বাচিত শেখ হাসিনা পুলিশকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে। শেখ হাসিনা পালানোর পর একটি চক্র পুলিশের মনোবল ভাঙতে চেষ্টা চালাচ্ছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপির নামে কেউ যদি অপকর্ম করতে চায় তাকেও আইনের হাতে তুলে দিন। কেউ যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তার বিরুদ্ধেও পুলিশের কাছে অভিযোগ বাতিল করুন। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। বিচারের ভার দয়া করে নিজ হাতে তুলে নেবেন না। অতএব সমালোচনা বা নৈরাজ্যের সমাধান নৈরাজ্য হতে পারে না। প্রশাসনকে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নিয়োগ বা প্রমোশনে মেধা সর্বাধিকার অগ্রাধিকার থাকতে হবে। উন্নয়নে বৈদেশিক নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকার সমস্যা সমাধান করতে হবে। সবার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করতে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা স্থানান্তর করতে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশের তরুণদের জন্য একটি নিরাপদ দেশ গড়ে তুলতে পারবো।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এবারের ছাত্র আন্দোলনে আমরা সহযোগিতা করেছি। সংহতি জানিয়েছিলাম। এই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি জানাচ্ছি। ছাত্ররা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, এর ফলে এই স্বৈরাচার সরকারের পতন, সাথে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি। এ বিজয় ছাত্র-জনতার। এই বিজয় অনেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। অনেকে লুটপাট করছে, এরা তাদের লোক যারা গণতন্ত্র ধ্বংস করেছিল। সাবধান থাকতে হবে।

সামনের দিনে সুসঙ্গত রেখে ধৈর্যের সাথে আমাদের এ বিজয় ধরে রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন ব্যত্যয় না ঘটে। কেউ কোনো ভাবেই কোনো অপকর্মে জড়িত হবেন না। শুনছি গার্মেন্টস কারখানায়, আগুন দিচ্ছে। এগুলোর সাথে আন্দোলনকারীরা জড়িত নয়, এরা কখনো আন্দোলনকারী ছিল না। যারা জড়িত তারা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। বিলম্ব না করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করুন রাষ্ট্রপতির প্রতি এমন আহ্বান জানিয়ে বলেন, তিন মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। এ সময় তিনি ছাত্রদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, অলরেডি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে যারা স্বৈরাচার সরকারকে সহযোগিতা করেছে তাদের কাউকে রাখা হবে না। কারণ ওরা প্রবেশ করলে আবার দালালি করবে। নির্বাচন হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন। নির্বাচনের ফলে জনগণের জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন হবে। সবাই আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করবো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, বিদেশি প্রভুদের সহায়তা ছাড়া আমাদের এবারের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের আর ভয় নেই। আল্লাহ তায়ালার শুকর আদায় করছি।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, এ দেশের ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ, সাধারণ মানুষ একটি পরিবর্তনের জন্য আশা করছে। যেহেতু শহীদ জিয়ার সঙ্গে রাজনীতি করেছি, তার আদর্শ আমাদের মাঝে আছে। তাই আমাদের বিশ্বাস সেই পরিবর্তন আমরাই করতে পারব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছে তবে তার প্রেতাত্মা এখনো দেশে রয়েছে। তাদের হাত থেকে সাবধান।

তিনি বলেন, আজকের যা অর্জন হয়েছে তার সব কল্যাণ ছাত্রদের জন্য। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রদের কোনো আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি। গয়েশ্বর বলেন, কে প্রধান উপদেষ্টা হবে সেটা আমাদের ভাবার বিষয় না। আমাদের দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, পতন হয়েছে কিন্তু তার দোসররা রয়ে গেছে, এরা মাথাচাড়া দিতে পারে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত