বিএনপি সমাবেশে খালেদা জিয়া

ধ্বংস নয় শান্তি চাই

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আমরা ধ্বংস চাই না, শান্তি চাই। ছাত্র-তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার কিছু আগে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে খালেদা জিয়া একথা বলেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিজয় আমাদের নতুন সংগ্রামে নিয়ে এসেছে। এখন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে। আসুন তরুণদের হাত শক্তিশালী করি।

টানা চার মেয়াদ ধরে ক্ষমতা ধরে রাখা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে যে ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রতিহিংসা ছড়িয়ে পড়েছে তা থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সরকারের নজিরবিহীন দুর্নীতি, গণতন্ত্রের ধ্বংসের স্তূপের মধ্য থেকে আমাদের গড়ে তুলতে হবে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ছাত্র তরুণরাই আমাদের ভবিষৎ। কারণ তরুণরা যে স্বপ্ন নিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে মেধা যোগ্যতার ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, শোষণহীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

প্রায় সাড়ে ছয় বছর পর এদিন খালেদা জিয়া দলের কোনো সমাবেশে ভাষণ দিলেন। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় কারাগার থেকে বাইরে থাকলেও তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় বিধিনিষেধ ছিল। গতকাল রাষ্ট্রপতির এক আদেশে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। তবে তিনি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখান থেকেই ভিডিও বার্তা দিয়েছেন বিএনপি প্রধান। দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্যের শুরুতেই খালেদা জিয়া বলেন, দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর আমি আপনারে সামনে বক্তব্য দিতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। কারবন্দি থাকা অবস্থায় আপনারা যারা আমার মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, দোয়া করেছেন। সেজন্য আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তরুণদের হাত শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে প্রতিশোধপরায়ণ না হয়ে সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ধ্বংস নয়, প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নয়, ভালোবাসা শান্তি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘সব ধর্ম গোত্রের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শান্তি প্রগতি সাম্যের ভিত্তিতে আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণ করি। ধ্বংস নয়, প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়, ভালোবাসা, শান্তিভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি।’ প্রসঙ্গত, দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কারাগারে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২০২০ সালে দেশে করোনা মহামারির শুরুতে নির্বাহী আদেশে তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হলেও রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত না হওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির এক আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন এখনো হাসপাতালেই রয়েছেন। সেখান থেকেই দিয়েছেন ভিডিও বার্তা। এর আগে দুপুর পৌনে তিনটায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকাজুড়েই নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন। তাদের হাতে জাতীয় পতাকা এবং বিভিন্ন নেতাকর্মীদের ব্যানার ফেস্টুন দেখা গেছে। স্লোগানে মুখরিত পুরো এলাকা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সমাবেশের শুরুতেই বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।