ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দিল্লি থেকে শেখ হাসিনার অন্য কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি

সজিব ওয়াজেদ জয়
দিল্লি থেকে শেখ হাসিনার অন্য কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি

গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর দিল্লিতে আশ্রয় নেয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ভারত থেকে এই মুহূর্তে অন্য কোথাও যাওয়ার ‘পরিকল্পনা নেই’ বলে জানিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হওয়ার যে খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এসেছে, সেটি ‘গুজব’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। জার্মানির সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় আওয়ামী লীগের বর্তমান-ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়েও কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা এখন কোথায় আছেন এবং কেমন আছেন জানতে চাইলে জয় বলেন, তিনি ভালো আছেন, এখন দিল্লিতে আছেন। আমার বোন (সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) ওনার কাছে আছেন। আমার বোন তো দিল্লিতে থাকেন। তিনি ভালো আছেন, তবে তার খুবই মন খারাপ। তিনি খুবই দুঃখিত যে, দেশের জন্য ওনার বাবা জান দিয়েছেন, আমার পুরো পরিবার জান দিয়েছে, যেই দেশের জন্য তিনি জেল খেটেছেন, এত পরিশ্রম করেছেন, এত উন্নয়ন করেছেন, সেই দেশের মানুষ তাকে এভাবে অপমান করে বের করে দেবে, তার ওপর আক্রমণ করতে যাবে, এটা আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতির মার্কিন ভিসা বাতিলের বিষয়ে প্রশ্ন করলে জয় বলেন, এটা গুজব। এমন কিছুই হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগ কেন করতে হলো, তা জানতে চেয়েছিল ডয়চে ভেলে। উত্তরে জয় বলেন, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, বাংলাদেশে এখন যেসব সংঘর্ষ চলছে, জ্বালাও পোড়াও চলছে, তখনো এটা শুরু হয়েছিল এবং আন্দোলনকারীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা গণভবনে হামলা করবে। তখনো তিনি কিন্তু দেশ ছাড়তে চাননি। আমরা পরিবার থেকে তখন তাকে কনভেন্স করলাম যে, না এরা শুধু আন্দোলনকারী না, এরা তোমাকে হত্যা করে ফেলবে। তোমার দেশ ছেড়ে যেতেই হবে। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত সোমবার দুপুরে পদত্যাগ করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে একটি সামরিক বিমানে চড়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন শেখ হাসিনা। অনুমতি মিললে সেখানেই তিনি যেতে চান। পত্রপত্রিকায় খবর আসছে, সিনিয়র নেতারা জানতেন না যে, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ছেন। এমন পরিস্থিতি কেন হলো জানতে চাইলে জয় বলেন, এটা আসলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল একদিন আগে। সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন। আমরা কয়েকজন শুধু জানতাম যে, তিনি ঘোষণা দেবেন তিনি পদত্যাগ করছেন।

সংবিধান অনুযায়ী যাতে একটি ট্রানজিশন অব পাওয়ার হয় সেটাই ছিল ওনার প্ল্যান। তবে যখন তারা (আন্দোলনকারী) ওই গণভবনের দিকে মার্চ করা শুরু করল, তখন আমরা ভয়ে বললাম যে, আর সময় নেই। তোমার এখনই বেরিয়ে যেতে হবে। ওই সিদ্ধান্ত তখনই কেন ঘোষণা করা হয়নি, সেই ব্যাখ্যায় জয় বলেন, একদিন সময় নেয়ার কারণ হলো প্রস্তুতি নিয়ে ট্রানজিশন অব পাওয়ার কী হবে সংবিধান অনুযায়ী সেটা করা। এটা তো হুট করে করা যায় না। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে জয় বলেন, বর্তমানে তার নিজের বা শেখ পরিবারের কোনো ব্যক্তির রাজনীতিতে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। রাজনীতিতে আমি বা আমরা আসছি না। দেখেন, আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে তিনবার ক্যু হলো, সব কিছু হারিয়ে বিদেশে থাকতে হলো। আমাদের মা বাদে আমরা সবাই তো অনেকদিন ধরে বিদেশে আছি। এখানে আমরা সেটেলড, অভ্যস্ত। আমাদের এখানকার জীবনে কোনো অসুবিধা নেই। আমরা এখানে থাকতে অভ্যস্ত।

দেশে বসবাসরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে জয় বলেন, তাদের ওপর নির্যাতন চলছে। আমাদের সব মন্ত্রীদের বাসা জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং আমার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়, সেটাকে পর্যন্ত পুড়িয়ে দেয়া হয়। আমাদের কয়েকজন নেতাকর্মী, এমপিকে হত্যা করা হয়েছে। শুনতে পাচ্ছি হিন্দু ধর্মের কিছু মানুষের উপরে হামলা হয়েছে, মন্দির ভাঙচুর হয়েছে। সংঘর্ষ তো শুরু আগেই। আর এখন আমাদের সরকার নেই। এখনকার সংঘর্ষের জন্য আওয়ামী লীগের কোনো দায় নেই। আমরা তাদের বাঁচাতে চেষ্টা করছি বিভিন্নভাবে। আওয়ামী লীগ মরে যায়নি। সবচেয়ে পুরাতন দল। তবে আগামীতে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগকে ভোটের মাঠের বাইরে রাখা হবে বলে আশঙ্কা করছেন জয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত