অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বৈঠক

সব সেক্টরে সংস্কারের সিদ্ধান্ত

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা উপদেষ্টাদের

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিনিধি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টারা জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছান ড. ইউনূস। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়ে আকাশ থেকে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টিতে ভিজে শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান একাত্তরে দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া জাতির সূর্যসন্তানদের প্রতি। প্রধান উপদেষ্টার পর তার নেতৃত্বাধীন উপেদষ্টা পরিষদের সদস্যরাও বৃষ্টির মধ্যেই শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্বা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা শেষে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় স্মৃতিসৌধে পরিদর্শক বইয়ে মন্তব্য লিখেন।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের পর ভাষা শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান ১৪ উপদেষ্টা। বেলা সোয়া ১১টার দিকে জাতীয় শহীদ মিনারের বেদিতে প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা এবং পরে বাকি ১৩ উপদেষ্টা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা প্রথম বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে আগামীতে সুষ্ঠু ও শৃঙ্খলাভাবে দেশ পরিচালনার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়।

জানা গেছে, সব সেক্টরের রিফর্ম (সংস্কার) করা, ব্যবসায়ীদের উজ্জীবিত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা, বাজার নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের প্রথম বৈঠকে ব্যবসা উজ্জীবিত করতে সব ধরনের সুরক্ষা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, এই সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, হতোদ্যম হয়ে পড়া ব্যবসায়ীদের যাতে আবারও উজ্জীবিত করা যায়। জনগণের জীবন-জীবিকার কষ্ট লাঘব হবে, বাজারের ক্ষেত্রে যে নিয়ন্ত্রণ, অর্থের ক্ষেত্রে যে নিয়ন্ত্রণ, সেটাও অগ্রাধিকার পাবে অর্থ মন্ত্রণালয় যখন পরিকল্পনা করবে সেখানে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। এখনো রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেই, শিক্ষার্থীরা রাস্তা ম্যানেজমেন্ট করছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি না যে কালই (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) খুলে দেব।? শিক্ষক সমাজের সঙ্গে আলোচনা করা হবে, শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা যারা দায়িত্ব নিয়েছি, আমাদের সব মন্ত্রণালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত থাকবেন। কীভাবে তারা সম্পৃক্ত থাকবেন, এটার কাঠামো কী হবে, এটা আমরা পরবর্তীতে চিন্তা করব।

অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, সব সেক্টরের রিফর্ম (সংস্কার) নিয়ে আমরা কথা বলেছি। এভাবে চলে না, চলতে পারে না, সিস্টেমটা আমাদের বদলাতে হবে। সেই রিফর্মগুলো একা তো আর করা যাবে না। সমাজের সবার সঙ্গে কথা বলা হবে, সবার সঙ্গে কথা বলে রিফর্ম এজেন্ডা ঠিক করে আমরা আলাপ-আলোচনায় যাব। বৈঠকে অর্থের বিষয়ে কথা হয়েছে। আর্থিক খাতগুলো শুধু চালু করলেই হবে না, সক্রিয় করতে হবে। সেখানে নেতৃত্বের স্থানে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন যেগুলোতে আছে, অনতিবিলম্বে সেসব পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদের বিষয়ে এখন আলোচনা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না। আপনি কী রিফর্ম চান, সেটা না বুঝে তো আমি মেয়াদের কথা বলতে পারব না। রিফর্ম যদি আপনারা না চান তাহলে আরেক কথা। কাজেই এখন মেয়াদ মেয়াদ করে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। আমরা সবাই যাতে দেশে একটা গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু করতে পারি, সেটার প্রস্তুতির জন্যই তো এই অন্তর্বর্তী সরকার। সে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য যেটুকু সময় দরকার শুধু সেটুকু সময়ই আমরা নেব। শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের দিকেই আমাদের যাত্রা করতে হবে।

এদিকে দায়িত্ব নেওয়ার পর এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের, সুবিচারের, মানবাধিকারের, নির্ভয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সবার স্বাচ্ছ্যন্দে জীবন ধারণে সরকারের সহযোগিতা সবাই উপভোগ করবেন। এটা আমাদের সরকারের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য পূরণে সবার সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।