ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের অভিনন্দন

* ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ * এই সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে চীন * সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনূসের আহ্বানকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানিয়েছে * বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরুর প্রত্যাশা

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিনিধি

নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ডক্টর ইউনূসের নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই বিশ্বনেতাদের অভিনন্দন পেতে শুরু করেন ড. ইউনূস। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার ও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।

ভারত : বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ায় শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক ও এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্টে করা পোস্টে শুভেচ্ছা জানান নরেন্দ্র মোদি। এক্সে (সাবেক টুইটার) ৯টা ৪৮ মিনিটে করা পোস্টে মোদি বলেন, ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে নতুন দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আমার শুভেচ্ছা। আমরা আশা করি, হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।’ তিনি আরো বলেন, শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য আমাদের উভয় দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

চীন : গতকাল শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানায় চীন। এক প্রশ্নের জবাবে দেশটির মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ব্যাপারে তারা অবগত এবং এই সরকারের পদক্ষেপকে তারা স্বাগত জানান। তিনি বলেন, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীন কোনো হস্তক্ষেপ করে না এবং তারা এই নীতিতেই অটল আছেন। এছাড়া চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। দেশের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ নিজস্ব পথ বেছে নেওয়ার প্রতি চীনের যে অঙ্গীকার রয়েছে, সেটিও মেনে চলা হবে বলে জানিয়েছেন, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। তিনি আরো বলেন, চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘ এবং গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে। চীন বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা অংশীদারিত্বকে সম্মান করে এবং বিভিন্ন খাতে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে কাজ করতে প্রস্তুত। এছাড়া আমাদের টেকসই কৌশলগত সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এগিয়ে নিতেও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করার ইঙ্গিত দিয়ে এই চীনা কূটনীতিক বলছেন, বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের সঙ্গে এবং দেশটির সঙ্গে সৌহায্যপূর্ণ বন্ধুত্বের যে মূলনীতি রয়েছে, সেটির প্রতিও আমরা কঠোরভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সম্পর্ক আরো সুন্দর করতে আমরা মুখিয়ে আছি।

যুক্তরাষ্ট্র : অপরদিকে, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ওয়াশিংটনের যোগাযোগ হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ কথা জানান।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে নিজেদের চাওয়ার কথা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনূসের আহ্বানকেও যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানিয়েছে। ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভদিন। প্রশ্ন করা হয়, ড. ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তাহলে আপনি কি পররাষ্ট্র দপ্তর বা প্রেসিডেন্টের (জো বাইডেন) পক্ষ থেকে নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমাদের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স গত (বৃহস্পতিবার) শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং আমরা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনূসের আহ্বানকে স্বাগত জানাই। আমরা অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

পাকিস্তান : বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং নোবেলজীয় অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নবগঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে স্বাগত জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহম্মদ আসিফ। এই সরকারের আমলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরুর প্রত্যাশাও করেছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ বলেন, গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে ভারত সমর্থিত সরকার চলছিল। তার অবসান হয়েছে। নোবেলজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন যে সরকার গঠিত হয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি এবং আমরা প্রত্যাশা করছি, নতুন সরকারের আমলে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অতীতের যাবতীয় তিক্ততা ভুলে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করবে। ২০০৯ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচনে জয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তারপর গত ১৫ বছরে আরো ৩টি নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোতেও জয়ী হয়েছেন তিনি। তবে সেসব নির্বাচনের ফলাফল পশ্চিমা বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ।

২০০৯ সালের নির্বাচনে জিতে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হতে থাকে বাংলাদেশের। পরে ’৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ঘিরে সেই শীতলতা রীতিমতো তিক্ততায় পর্যবসিত হয়। বর্তমানে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। শিক্ষার্থী-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। বর্তমানে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে রয়েছেন তিনি।