ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সহসা হচ্ছে না ভোট

বর্তমান কমিশনারদের মধ্যে পদে থাকা নিয়ে সংশয়

* সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সময় বাড়ানো যাবে * ইসি কমিশনারদের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিলো ছাত্র-জনতা * ইসির চার কর্মকর্তাকে বদলি
বর্তমান কমিশনারদের মধ্যে পদে থাকা নিয়ে সংশয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করার পর নির্বাচন কবে হবে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা। অন্যদিকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনার পদে থাকবেন নাকি পদত্যাগ করবেন এ বিষয়ে সংশয়ের মধ্যে রয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানের কর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা সরকারে সহায়তা নিয়ে সংবিধান অনুযায়ী কাজ করি। বর্তমানে আমরা অফিস করছি, যে সরকার আসবে তাদের সহায়তা নিয়ে আমরা আইন অনুযায়ী নির্বাচন করবো। তবে বর্তমান সরকার আমাদের না চাইলে আমরা সরে যাবো। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কিছু জানো হয়নি।

জানা যায়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ায় আগামী ৪ নভেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশন চাইলে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সময় বাড়াতে পারবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির মুখে সদ্য পদত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা না থাকায় গত মঙ্গলবার সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী এখন ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ভোট করার সময় বাড়ানো যাবে। বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। তবে কোনো কারণে প্রথম তিন মাসে নির্বাচন করা সম্ভব না হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার চাইলে আরো তিন মাস সময় পাবেন। এছাড়াও আদালতের নির্দেশনা নিয়ে এ সমস্যা সমাধানের সুযোগ আছে। আমরা যখন দায়িত্বে ছিলাম, তখন আদালত থেকে নির্দেশনা নিয়ে দুই বছর পার করেছিলাম। তিনি আরও বলেন, তিন মাসের মধ্যে নতুন সরকারের পক্ষে ভোট করা কঠিন। তাদের ভোটের পরিবেশ তৈরি করার জন্য সময় দিতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার ইসি ভবনে ব্যানার দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগ করতে আল্টিমেটাম দিয়েছে ছাত্র-জনতা। এজন্য ভবনের বাইরের দেয়ালের সামনে ছাত্র-জনতার ব্যানার সাঁটানো হয়। ব্যানারে লেখা হয় ‘বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা হত্যা এবং গণহত্যার দায়ে সব নির্বাচন কমিশনারকে পদত্যাগ করতে হবে। প্রথম দুই দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল অফিস না করলেও পরের দিনগুলোতে তিনি অফিস করেছেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশনাররাও সীমিত পরিসরে অফিস করছেন। ইসি কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভিন্ন পদে রদ বদলের জন্য বিএনপিপন্থি অফিসারদের তৎপরতা দেখা গেছে। জানা যায়, সংবিধানের ১২৩(৩) (খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে আগামী ৪ নভেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে না পারলে আরো ৯০ দিন সংবিধান অনুযায়ী সময় পাবে নির্বাচন কমিশন। তবে ১২৩(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতে, কোনো দৈব-দুর্বিপাকের কারণে এই দফার নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান যদি সম্ভব না হয়, তাহলে উক্ত মেয়াদের শেষ দিনের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তবে এটি বর্তমান বাস্তবতায় কঠিন হবে। এক্ষেত্রে দৈব-দুর্বিপাকের কারণে সংবিধানে যে আরো তিন মাসের কথা বলা হয়েছে সেটি প্রাকৃতিক সংকট তৈরি হলে। বর্তমান যে রাজনৈতিক সংকট, সেটি প্রাকৃতিক নয়। ফলে ওই বিধানটি প্রযোজ্য হবে না। মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে না পারলে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা নিতে পারেন। সুপ্রিমকোর্ট যে নির্দেশনা দেবেন, সেই অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে নির্বাচন কমিশন।

তিনি বলেন, নতুন সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর দ্রুত নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে। সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে যোগ্যদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দিতে হবে।

ইসির চার কর্মকর্তাকে বদলি : ইসি সচিবালয়ের চার কর্মকর্তাকে বদলি করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল রোববার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মোহাম্মদ শহীদুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ বদলির আদেশ দেয়া হয়।

প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, রাঙামাটির সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেনকে বদলি করে উপ-সচিব হিসেবে সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা-২ অধি-শাখা আনা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা-২ অধি-শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমানকে বদলি করে নির্বাচন পরিচালনা-১ অধি-শাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এছাড়া নির্বাচন পরিচালনা-১ অধি-শাখার উপ-সচিব এম মাজহারুল ইসলাম বদলি করে মানব সম্পদ উন্নয়ন ও কল্যাণ অধি-শাখা উপ-সচিব করা হয়েছে।

মানব সম্পদ উন্নয়ন ও কল্যাণ অধি-শাখার উপ-সচিবকে মোহাম্মদ নুরুল আলমকে বদলি করে রাঙামাটির সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা করা হয়েছে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে ইসি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত