ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘অন্তর্বর্তী সরকারকে সমালোচনার চোখে রাখতে হবে’

‘অন্তর্বর্তী সরকারকে সমালোচনার চোখে রাখতে হবে’

কোনো রাষ্ট্রে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না হলে সেখানে সংস্কার হয় না মন্তব্য করে বিশিষ্টজনরা বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্র শুধু ৫ শতাংশ মানুষের। বাকি ৯৫ শতাংশ মানুষ প্রতিনিয়ত মৌলিক অধিকারের জন্য লড়াই করে গেছে। তাই রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে এই ৯৫ ভাগ মানুষের কথা মাথায় রেখে সংস্কার করতে হবে।’ পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমালোচনার মাধ্যমে চোখে চোখে রাখা ও মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটাকে ধারণ করে নতুন আরো কিছু যোগ করে গণবান্ধব সংবিধান তৈরি করার পরামর্শ দেন তারা। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নজরদারিতে একটি ছায়া সরকার গঠন করার কথাও জানান তারা। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আয়োজিত ‘ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব এবং অভ্যুত্থানের স্পিরিট রক্ষায় করণীয়’ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠিত সংস্কার সংলাপে এসব কথা বলেন তারা। সংস্কার এই সংলাপের সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম। সংস্কার সংলাপে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি সোহরাব হাসান বলেন, ‘আমরা যখন রাষ্ট্র সংস্কার করতে চাচ্ছি, সেখানে আমাদের কথারও সংস্কার করতে হবে। আমরা আসলে কী বলতে চাচ্ছি, সে কথারও সংস্কার করতে হবে। সংখ্যালঘুদের প্রতি আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারি এবং ন্যায়ের কথা বলতে পারি, তাহলে সংস্কার সম্ভব হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিয়ে আমাদের যেমন আশা আছে, তেমন শঙ্কাও আছে। তারা যে সংস্কারের কথা বলছে, তাতে রাষ্ট্র মেরামত হতে অনেক সময় লেগে যাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এরই মধ্যে আমাদের সমাজে দখলদারত্ব শুরু হয়ে গেছে। যেটা আমাদের সাংবাদিক সমাজেও দেখা যাচ্ছে। আমাদের সামনের দিন অনেক কঠিন। বাংলাদেশের রাষ্ট্র শুধু ৫ শতাংশ মানুষের। বাকি ৯৫ শতাংশ মানুষ প্রতিনিয়ত মৌলিক অধিকারের জন্য লড়াই করে গেছে। তাই রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে এই ৯৫ ভাগ মানুষের কথা মাথায় রেখে সংস্কার করতে হবে। সরকার যদি পুলিশ-র‌্যাব নিয়ে মানুষের ওপর অত্যাচার চালায়, আর সেখানে জনগণ যদি গণরোষের নামে পুলিশের ওপর হামলা চালায়, এমন মানসিকতা থাকলে এই রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব নয়। কোনো রাষ্ট্রে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না হলে সেখানে সংস্কার হয় না।’ সোহরাব হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে পাঁচ বছরের বেশি জনপ্রিয়তা ধরে রাখা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি সম্ভব নয়। শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল এ দেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করা। তিনি যদি ক্ষমতা ধরে না রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতেন, তাহলে হয়তো এমন অবস্থা আওয়ামী লীগের হতো না।’ এ সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা জামান বলেন, ‘তরুণরা আমাদের যে স্বপ্ন দেখিয়েছে, আমরা যদি তা পূরণ করতে না পারি, তাহলে আমরা অযোগ্য দেশে পরিণত হবো। তাই আমাদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে, না হলে আমরা হারিয়ে যাবো।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমালোচনার মাধ্যমে চোখে চোখে রাখতে হবে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘২০২৪ সালের অভ্যুত্থান ছাত্র, জনতা, রাজনীতিকদের সমন্বয়ে সর্বজনীন অভ্যুত্থান। মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের কারণে প্রথম এ দেশের কোনো সরকারকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। তবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করতে হবে, তাদের চোখে চোখে রাখতে হবে; যাতে কেউ এ দেশে আর স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে।’

অধ্যাপক রোবায়েত আরো বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে দেশের আমলাতান্ত্রিক কাঠামো। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল হয়ে এখন পর্যন্ত এই কাঠামো এখানে বড় হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা এই আমলাতান্ত্রিক কাঠামোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আর যাতে কেউ তা করতে না পারে, সে জন্য এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছি, তা সংবিধান পুরোপুরি পাল্টে ফেলার জন্য নয়। আমরা রাষ্ট্রের কিছু কাঠামোর পরিবর্তনের কথা বলছি। যদিও এখন যে সংবিধান আছে, তা সঠিক হলেও, বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই সংবিধান কাজ করছে না। নতুন সংবিধান তৈরির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা বর্তমান সংবিধানে ছিল, সেটাকে নিয়ে নতুন আরো কিছু যোগ করে গণবান্ধব সংবিধান তৈরি করতে পারি। যেখানে নাগরিকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাংবিধানিক কাঠামো তৈরি করতে হবে।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নজরদারি করতে একটি ছায়া সরকার গঠন করার কথা জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটু বেশি তাত্ত্বিক হয়ে গেছে। তাদের প্রথম যে দায়িত্ব পালন করা দরকার, তা হচ্ছে বাজারে সুফল দেয়া। মানুষ যদি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুফল না পায়, তাহলে জনগণই এই সরকারের পেছনে লাগবে। পাশাপাশি এই অভ্যুত্থানে যারা ছাত্রদের খুন করেছে, দোষীদের সাজার আওতায় আনা ও দুর্নীতিবাজ এবং অর্থপাচারকারীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এই সরকার কোথায় ভুল করছে, তা দেখার জন্য একটি ছায়া সরকার গঠন করতে হবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত