উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা

প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও অস্ত্রের মুখে বিতাড়িত হয়ে আসা রোহিঙ্গারা ধীরে ধীরে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে গেড়ে বসেছে। তবে বাংলাদেশের এক নম্বর অগ্রাধিকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য বছরের পর বছর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা চললেও খুব বেশি অগ্রগতি আসেনি। বরং বর্তমানে তাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ও স্বাস্থ্যবিধি ব্যবহারে আগ্রহ কম থাকায় শরণার্থী শিবিরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর সশস্ত্র হামলা ও সহিংসতার শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাদের জন্য শরণার্থী শিবির তৈরি করে কক্সবাজার উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের শালবাগানে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে ইউনিসেফ ও দাতা সংস্থাগুলো। দীর্ঘ সময় একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব না হলে একযুগ পরে রোহিঙ্গা ও জেলার স্থানীয় বাসিন্দা সমান সমান হয়ে যাবে। এতে হুমকির মুখে পড়বে পর্যটন স্পট কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকা।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ৯ লাখ ৭৮ হাজার তিনজন। এর মধ্যে কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরগুলোয় আছে ৯ লাখ ৪২ হাজার ৯৪৪ জন আর নোয়াখালীর ভাসানচরে আছে ৩৫ হাজার ৫৯ জন। তবে দুই বছর আগে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল- প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত।

রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো, তবে মাঝখানে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা তহবিল কমিয়ে মাসে মাথাপিছু ৮ ডলার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হওয়ায় ১১ ডলার করা হয়েছে। বর্তমানে প্রত্যেক রোহিঙ্গা মাসে মাথাপিছু ১১ ডলার করে সহায়তা পাচ্ছেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তায় কাজ করে আসছে জাতিসংঘ। তবে বর্তমানে রাশিয়া, ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই মানবিক সংকট চলছে। সেখানেও সহযোগিতা করছে দাতাদেশগুলো। ফলে তহবিলের ঘাটতি রয়েছে।

রোহিঙ্গা শিবিরের দেখভাল করে সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গারা ধর্মীয় বিশ্বাসকে বেশি প্রাধান্য দিতে গিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণে অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। ফলে শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত ভাসমান জীবনেও থেমে নেই তাদের উচ্চ জন্মহার। যার ফলে জন্ম নিচ্ছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নবজাতক। বর্তমানে রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের জন্য মহাবিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার পুরো চাপটাই এখন পড়েছে আশ্রয়দাতা বাংলাদেশের ওপর।

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সচিব মো. কামরুল হাসান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, রোহিঙ্গা পরিবারের সহযোগিতা করতে কার্ড সিস্টেম করা হয়েছে। প্রত্যেকটি কার্ডে ছয় থেকে সাতজনের নাম। প্রত্যেক পরিবারে চার থেকে পাঁচজন করে সন্তান, যা আমাদের জন্য উদ্বেগের। রোহিঙ্গারা বলছেন- জন্মনিয়ন্ত্রণ করলে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে। পরিবার পরিকল্পনা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত, সেখানে রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রীয় নিয়মণ্ডনীতি লঙ্ঘন করছে। সচিব আরো বলেন, শরণার্থী শিবিরগুলোতে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার নবজাতক জন্মগ্রহণ করছে। যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার বরাবরই প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা চাইছে। তবে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা ও দেশ তেমন উদ্যোগ নিচ্ছে না। বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয়ার পর ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক সহায়তা সবচেয়ে কম এসেছিল, যা ছিল জেআরপির চাহিদার মাত্র ৫০ শতাংশ বা ৪৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর পরিকল্পনার বাইরে ৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার অর্থসহায়তা পেয়েছে রোহিঙ্গারা। এর আগে সবচেয়ে কম হারে সহায়তা এসেছিল ২০২০ সালে, চাহিদার ৫৯ শতাংশ। ২০২২ সালে সহায়তা এসেছিল চাহিদার প্রায় ৬৯ শতাংশ। ২০১৯ সালে রোহিঙ্গা সহায়তা চাহিদার ৭৫ শতাংশ পেয়েছে।