ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গ্রেপ্তারের আতঙ্কে গা ঢাকা আ.লীগের শীর্ষ নেতারা

আনিসুল-সালমানের গ্রেপ্তারের ভয়ে আছেন আত্মগোপনে থাকা নেতারা
গ্রেপ্তারের আতঙ্কে গা ঢাকা আ.লীগের শীর্ষ নেতারা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার চাপে সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষপর্যায়ের বহু নেতা দেশত্যাগ করেন। তবে যেসব নেতারা দেশত্যাগ করতে পারেননি তারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেশত্যাগ করবেন তারা। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের আর্শিবাদপুষ্ট উচ্চপদের সরকারি কর্মকর্তারা আতঙ্কে অফিসে আসেননি। এসব কর্মকর্তাও দেশত্যাগের পরিকল্পনা করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের জন্য খুব বেশি সময় পাননি। ফলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের সঠিক বার্তা দিতে পারেননি তিনি। শেখ হাসিনা শুধু নিজের ভালো-মন্দের কথা ভেবে দেশত্যাগ করেছেন, এখানে নেতাকর্মীদের কথা একবারও ভাবেননি। ফলে আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের বহু নেতা, দেশত্যাগের ইচ্ছা থাকা শর্তে যেতে পারেনি। এখন দেশের ভেতরেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব নেতা প্রকাশ্যে আসবেন, আবার বহু নেতা দেশত্যাগ করবেন।

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর পর পরই শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা আড়ালে চলে যান। অনেকে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। যদিও বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে আটকে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক দেশত্যাগের সময়ে বিমানবন্দরে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের গ্রেপ্তারেও আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ আওয়ামী লীগের নেতারা খুব একটা ভয়ে ছিলেন না। কিন্তু সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তারের পর সবচেয়ে বেশি ভয়ে পড়েছেন নেতারা। সে জন্য সহসায় আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা প্রকাশে বের হবে না। উত্তরবঙ্গের গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার চেয়ারম্যান আত্মগোপনের জন্য বেঁচে নিয়েছেন রাজধানী মোহাম্মদপুর এলাকা। তিনি একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এভাবেই গ্রাম ছেড়ে বহু আওয়ামী লীগের নেতা রাজধানীতে আত্মগোপনে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক নেতা বলেন, দেশের ভেতরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কোনো সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে পারে না। কয়েক বছর আগেও জেনেছি আওয়ামী লীগের ন্যাক্কারজনক বিদায় হতে পারে। কিন্তু একটি বহল আমাদের দলীয় সভাপতিকে সব সময়ে ভুল বুঝিয়েছে। এখন আপাতত আত্মগোপনে আছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিজ জেলায় ফিরবেন।

আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা বলেন, গত রোববারও নেতাদের বড় গলার কথা শুনে আমাদের মধ্যে বিশ্বাস ছিল, যে কোনো মূল্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিতে পারব। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিপরীত অবস্থা দেখে আমরা চরম হতাশ ও দলের নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণার পরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসাবাড়ি, রাজনৈতিক-ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। এদিকে সুযোগ বুঝে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন নেতাদের কেউ কেউ। দেশত্যাগের চেষ্টা চালাতে গিয়ে গ্রেপ্তারও হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কয়েকজন নেতার নম্বরে ফোন করা হলেও নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। দু-একজনের হোয়াটসঅ্যাপ খোলা থাকলেও তারা রিসিভ করেননি।

জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং সরকার জনস্বার্থে তাকে সরকারি চাকরি হতে অবসর প্রদান করা প্রয়োজন বলে বিবেচনা করেন, সেহেতু সরকারি চাকরি অবসর আইন ২০১৮ এর ৪৫ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে সরকারি চাকরি হতে অবসর প্রধান করা হয়েছে।

বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের হাবিবুর রহমানকে জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেয়া হয়েছে। বিসিএস (পুলিশ) ক্যঅডারের সদস্য মো. মনিরুল ইসলামকেও জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের আর্শিবাদপুষ্ট কয়েকজন আমলার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সুবিধাভোগী বহু কর্মকর্তা চাকরি নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। কারণ এরই মধ্যে আমলাদের বদলির হিড়িক পড়েছে।

আবার অনেকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে, অবসরে পাঠানো হয়েছে কর্মকর্তাদের। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মতোই তারাও গ্রেপ্তার আতঙ্ক রয়েছেন। বিশেষ করে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম আহমেদ খান অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তবে তাকসিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে বহু অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আর্শিবাদপুষ্ট হওয়ায় তদন্ত করতে পারেনি দুদক। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন তাকসিম।

সিরাজগঞ্জের ছয় আসনের সাবেক এমপিরা আত্মগোপনে। তারা হলেন- সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর-সদরের একাংশ) প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) ড. জান্নাত আরা হেনরি, সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ, সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) শফিকুল ইসলাম শফি, সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আব্দুল মমিন মণ্ডল ও সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের চয়ন ইসলাম।

খুলনার সাবেক এমপিদের মধ্যে রয়েছেন খুলনা-১ ননী গোপাল মণ্ডল, খুলনা-২ শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল, খুলনা-৩ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, খুলনা-৪ শিল্পপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদী এবং খুলনা-৬ মো. রশীদুজ্জামান মোড়ল, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য (সদ্য সাবেক) আলী আজগার টগর এবং গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য (সদ্য সাবেক) মাহমুদ হাসান রিপনসহ অধিকাংশ এমপিরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। এমপিদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারাও আত্মগোপনে আছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত