ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কে হবেন ঢাবির ভিসি? আলোচনায় পাঁচ শিক্ষক

কে হবেন ঢাবির ভিসি? আলোচনায় পাঁচ শিক্ষক

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শুরু হয় রাষ্ট্রের সংস্কার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদ থেকে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে। এরই মধ্যে নানা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শীর্ষ কর্তারা পদত্যাগ করেছেন। সর্বশেষ গত ১১ আগস্ট পদত্যাগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। তার পদত্যাগের পরে শূন্য এই পদে দ্রুত নিয়োগ দিতে চলছে ব্যাপক তোড়জোড়।

জানা যায়, ভিসি পদের জন্য পাঁচ শিক্ষককে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা অঙ্গনে। তারা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান এবং পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান মামুন।

এই পাঁচ অধ্যাপকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর উপ-উপাচার্য ও ঢাবির উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস সোয়ানসি, এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ ও গবেষণা করা অধ্যাপক খান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে একাডেমিক ও কার্যকরী ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজমেন্টের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। যার কারণে, তিনি উপাচার্য হিসেবে নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পছন্দের তালিকায় থাকার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাবির এক অধ্যাপক বলেন, নিয়াজ আহমেদ খান যদি উপাচার্য হন, তাহলে সবার জন্যই ভালো। নিরপেক্ষভাবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে সাজাতে পারবেন। তিনি ভালো একজন গবেষকও বটে। কখনো তাকে রাজনৈতিক ব্যানারে দেখা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন করে সাজাতে হলে, এগিয়ে নিতে হলে এমন কাউকে প্রয়োজন। তিনি উপাচার্য হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও গৌরব উদ্ধার করতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

এরপরই আলোচনায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অন্যদিকে, সাদা দলের বর্তমান যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানও আলোচনায় রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের দুই দুইবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া অধ্যাপক ছিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর হিসেবে দীর্ঘ সাড়ে ৭ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এর বাইরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়, দেশ ও সমাজের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় সময়ই বিভিন্ন টকশোতে কথা বলতে দেখা যায়।

এই দুই দুজনের বিষয়ে শিক্ষকদের দাবি, বিএনপিপন্থি শিক্ষক হলেও অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম এবং ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান যোগ্যতা ও সততার দিক থেকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তারা দুজন বিএনপিপন্থি শিক্ষক হলেও বিভিন্ন বিষয়ে বেশ নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে পাশে থাকেন।

বামপন্থি শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান মামুন। তাদের নিজ নিজ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন সময়ে উভয়ের ব্যাপারেই একাডেমিক দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রশংসা শোনা যায়। ক্যাম্পাসে তারা শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক হিসেবে বেশ পরিচিত। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন যৌক্তিক আন্দোলন ও মানবাধিকার প্রশ্নে তাদের বেশ জোড়ালো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়।

তবে এই দুই অধ্যাপককের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মুসলিম শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় চর্চার ব্যাপারে বিদ্বেষী মনোভাব পোষণের অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একটি বড় অংশ, বিশেষ করে ডানপন্থি ছাত্র-শিক্ষকরা তাদের উপাচার্য হওয়াকে ইতিবাচকভাবে নেবে না বলে মনে করেন অনেকেই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মিফতাহুল মারুফ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, অধ্যাপক তানজিম এবং অধ্যাপক মামুন দুজনেই তাদের মধ্যে থাকা সুপ্ত ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি বিদ্বেষ থেকে কখনো বের হয়ে আসতে পারেননি। যা আপামর মুসলমান সমাজের জন্য বেদনাদায়ক, সময় সময় তারা তাদের খোলস থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং এর আগে তাদের সে রকম কোনো প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। তাছাড়াও তারা দুজনেই খোলাখুলিভাবে রাজনৈতিক সমাজতন্ত্রের আদর্শ লালন ও এর চর্চা করেন। আমরা কোনো দলের ভিসি চাই না। আমরা চাই একজন দক্ষ প্রশাসক ও একাডেমিক এক্সিলেন্সি থাকা একজন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভেতর থেকে বদলে দিতে পারবেন।

কেমন গুণাবলির ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে দেখতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যিনিই আসবেন তার উচিত হবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, জীবনমান উন্নয়ন ও আবাসন ব্যবস্থায় নজর দেয়া।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে রয়েছে- এমন কাউকে শিক্ষক হিসেবে চান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে সৎ, যোগ্য এবং শিক্ষকতা-প্রশাসনে দক্ষ ব্যক্তিরাই যেন সুযোগ পান, সে প্রত্যাশাও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত