পদত্যাগের পর দেশত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৪ দলের নেতা হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন ও নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গত ৪ আগস্ট মিরপুরের দেশ পলিটেকনিক কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর (১৫) বাবা মো. আবুল হাসান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ অভিযোগ দায়ের করেন। গত রোববার এ তথ্য জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম।
আসামিদের নির্দেশে পুলিশের গুলিতে গত ৪ আগস্ট মিরপুরের দেশ পলিটেকনিক কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভী (১৫) নিহত হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
আবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জেপির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, যুবলীগ সেক্রেটারি মাইনুল হাসান নিখিলসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনসমূহ এবং অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, গত ৩০ জুলাই আসামিরা আন্দোলন দমানো ও হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করার জন্য বৈঠকে বসে এবং সর্বসম্মতিক্রমে সব শক্তি প্রয়োগ করে আন্দোলন দমানোর জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর আগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো দুটি গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়। যেগুলোর তদন্ত চলছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর মিরপুরে লিটন হাসান লালু ওরফে হাসান নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৪৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে নিহত লিচন হাসান লালুর ভাই মিলন এ মামলা দায়ের করেন। আদালত মিরপুর মডেল থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান (নিখিল), ইলিয়াস মোল্লা, কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি হারুন-অর-রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্যসচিব এসএম মান্নান (কচি)।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, দেশে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালে লিটন হাসান লালু গত ৪ আগস্ট মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। দুপুর ২টার দিকে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, হারুন-অর-রশীদ, আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিপ্লব কুমার ও হাবিবুর রহমানের নির্দেশে অন্যান্য আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি করে। অজ্ঞাত আসামির ছোড়া বুলেটে হাসান গুলিবিদ্ধ হন। পরে আগারগাঁও নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে আরেক মামলা : চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিতে কলেজছাত্র ওয়াসিম আকরাম নিহতের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ২৫০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
গত রোববার রাতে নিহত কলেজছাত্র ওয়াসিম আকরামের মা জোছনা বেগম বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি করেন। এর আগে বহদ্দারহাটে গুলিতে কলেজশিক্ষার্থী তানভির সিদ্দিকী হত্যার ঘটনায়ও শেখ হাসিনাসহ ৮০ জনকে আসামি করা হয়।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, নিহত ওয়াসিম আকরামের মা বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।
মামলার অন্যান্য আসামির মধ্যে রয়েছেন- সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশিস পাল, সাবেক যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী, জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাস, চান্দগাঁও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসরারুল হক, কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি, গিয়াস উদ্দিন মোবারক আলী, নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি।
এছাড়াও মামলায় আসামি করা হয়েছে মো. ইসমাইল, মো. দেলোয়ার, এনএইচ মিন্টু, মোহন ঘোষ, মো. আলী, ভূবন ঘোষ, আরহাম খান, ইসমাইল উদ্দিন লিটন, দৌলত খান, এনামুল হক মানিক, নুর মোহাম্মদ, মো. সোহেল, নেজাম উদ্দিন, মো. আমজাদ হোসেন, ইরফানুল আলম তুষার, ইব্রাহিম খলিল, জয়নাল উদ্দিন জাহেদ, নুর নবী সাহেদ, শহীদুল ইসলাম, সাগর দাস, জাহেদ হোসেন, জিএম তৌশিফ, সাদ্দাম হোসেন ইভান, দেবাশীষ পাল দেবু, মো. জাবেদ, মহিউদ্দিন, মো. জাফর, মো. আলী (সাহেদ), মহিম আজম, দিদারুল আলম, মো. ইলিয়াছ, মো. আলী, মো. ইসহাক, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মো. মাসুম, জিহান আলী খান, মহিউদ্দিন শাহ, মুজিবুর রহমান রাসেল, মোহাম্মদ রাশেদসহ আরো ১০৮ জনকে। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাদীর ছেলে ওয়াসিম আকরাম নগরের মুরাদপুর এলাকায় কর্মসূচিতে অংশ নেন। মামলার আসামিদের নির্দেশে ও নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করা হয়। তারা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। গুলিতে বাদীর ছেলে ওয়াসিম আকরাম নিহত হন।
অন্যদিকে সিলেটে শিক্ষার্থী হত্যায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ৭৬ জনের নামে মামলা: সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমনপীড়ন এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুদ্র সেন হত্যার ঘটনায় ৭৬ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকালে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শাবিপ্রবির সমন্বয়ক আবিদুল ইসলাম।
মামলায় সাবেক স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাড়াও তিন সংসদ সদস্য, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ চার শিক্ষক-কর্মকর্তা, পুলিশের উচ্চপদস্থ চার কর্মকর্তাসহ ১১ জন, পাঁচ কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের চার নেতা, সিলেট জেলা ও মহানগর ও শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের ৩২ নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ১৬ জন কর্মী-সমর্থককে আসামি করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরো দুই থেকে তিনশ’ জনকে জনকে।
আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার, মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফরিদ উদ্দিন, প্রো-ভিসি কবির হোসেন, সাবেক প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী ও কলেজ পরিদর্শক তাজিম উদ্দিন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখকে। আসামির তালিকায় আরো রয়েছেন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. গোলাম সাদেক দস্তগীর কাউছার, জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, ওসি (তদন্ত) আবুল খালেদ মো. মামুন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাস, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ।
আরো রয়েছেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগরের সভাপতি কিশোওয়ার জাহান সৌরভ ও সাধারণ সম্পাদক নাইম আহমদ।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক, শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সজিবুর রহমান, সহ-সভাপতি মামুন শাহ, যুগ্ম সম্পাদক সুমন মিয়া, সহ-সভাপতি ফারহান রুবেল, তায়েফ হোসেন, সাবেক শাবিপ্রবি ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান স্বাধীন, সাইমন ইসলাম, শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, সহ-সভাপতি তানিম খন্দকার, দেলোয়ার হোসেন, শফিউল রাব্বি, রেজাউল হক সিজার, সহ-সভাপতি ইউসুফ হোসেন টিটু, মনসুর আলম নিরব, সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান হোসেন, আরকে রাকিব হোসেন, শুভ সাহা, সহ-সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক, ফারহান হোসেন চৌধুরী আরিয়ান, সানি শেখ, মোহাম্মেদ তারেক, শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শিমুল মিয়া, আয়াজ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক অমিত সাহা, আব্দুল কাদির মোহাম্মদ রেদোয়ান, নুরুল ইসলাম, ময়নুল ইসলাম, আহমদ সাজন, হাসান আহমদ, জাহিদ সরোয়ার সবুজ, শহীদ মুহাম্মদ অকীল অপু, মো. শাহজাহান, মুহাম্মদ আপ্তাব হোসেন সিরাজী ও অহিদ উদ্দিন দুলাল।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি রশিদ আহমদ, সিলেট জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল লতিফ রিপন, মুজিবুর রহমান মালদার (আমীরি), আবু সুফিয়ান উজ্জল, মাজহারুল ইসলাম সুমন, শাহনুর আলম, রুহিন আহসান খান, আমির হোসেন খান (বাবা সম্রাট), এসআই রেজওয়ান আহমদ, কনস্টেবল রনি চন্দ্র রায়, এসআই নিহারেন্দু তালুকদার, কনস্টেবল সুজিত সিংহ, কনস্টেবল অপূর্ব সিংহ, কনস্টেবল প্রনজিৎ ও কনস্টেবল সুমনকেও আসামি করা হয়েছে।