শেখ হাসিনা-রেহানা-জয় ও পুতুলের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় ফলের দোকানি ফরিদ শেখকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলার করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহম্মেদের আদালতে মামলাটি করা হয়। নিহত যুবক ফরিদ শেখের বাবা সুলতান মিয়ার জবানবন্দি গ্রহণ করে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৪ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আন্দোলন চলাকালে ফরিদ শেখ যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজার দক্ষিণ পাশের রাস্তা দিয়ে তার ফলের দোকানে যাচ্ছিলেন। এ সময় শেখ হাসিনার নির্দেশে গণহত্যা চালানোর সময় পুলিশের গুলির আঘাতে মারাত্মক জখম হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। আশপাশের লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ফরিদ শেখের পাকস্থলির ডান পাশে লেগে বাম পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় গুলি। মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ আগস্ট বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে ফরিদ শেখ মারা যান।

অভিযোগে আরো বলা হয়, শেখ হাসিনা তার স্বৈরাচারী শাসন কায়েম রাখার জন্য ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের নিরীহ জনগণের ওপর অন্য আসামিদের সহায়তায় হত্যা, গুম, অপহরণ, বিকলাঙ্গসহ নানা ধরনের অমানবিক অপরাধ সংঘটন করে আসছিলেন। সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার যথাক্রমে পুত্র, কন্যা ও সহোদর বোন। আসামিদের নিজস্ব কোনো পেশা নেই বা কোনো ব্যবসায় জড়িত নন। তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল রেখে তার মাধ্যমে বাংলাদেশের টাকা লুট করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাচার করা এবং লুটের টাকা দিয়ে উন্নত জীবনযাপন করা। আসামিদের কুপ্ররোচনায় ও পরামর্শে ১ নম্বর আসামি শেখ হাসিনা তার পোষ্য বাহিনী দিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে আসছিলেন।

আসামিরা অসৎভাবে অর্থ লুট করার জন্য এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভোগ করার জন্য ২০০৯ সাল থেকেই শেখ হাসিনাকে যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য উৎসাহ দিয়ে আসছেন। প্রয়োজনে গণহত্যার জন্যও শেখ হাসিনাকে তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও বোন শেখ রেহানা টেলিফোন, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে পরামর্শ দেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, সাবেক কমিশনার ডিএমপি হাবিবুর রহমান, জাসদের হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ. আরাফাত, যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসানসহ অজ্ঞাতনামা ২৫০ জন।

এদিকে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ‘নির্বিচারে হত্যা ও লাশ গুম করে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে’র অভিযোগ আনা হয়েছে পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ রাজনীতিবিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, সাবেক মন্ত্রী, পুলিশ, সাংবাদিক, আইনজীবী এবং গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ সংক্রান্ত আবেদন করা হয়েছে।

২০ আগস্ট এ আবেদন করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার চৌধুরী। তার আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আবেদনে ঘটনার তারিখ হিসেবে ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে এবং স্থান হিসেবে মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান উল্লেখ করা হয়েছে।

অপরাধের ধরনে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে এক থেকে ২৪ নম্বর আসামিদের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্যান্য আসামিরা শহরব্যাপী ব্ল্যাক আউট করে টিভি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণ করে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণে হত্যা, লাশগুম করে গণহত্যা চালায় এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে।

আসামির তালিকায় রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, রাশেদ খান মেনন, সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সাবেক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক ও বেনজীর আহমেদ, র‌্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সদস্য মুনতাসীর মামুন ও তুরিন আফরোজ, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, একাত্তর টিভির এমডি মোজাম্মেল হক বাবু, সময় টিভির আহমেদ জোবায়ের, এবি নিউজের সুভাষ সিংহ রায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ও দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের নাঈমুল ইসলাম খান, বিজিবির সাবেক ডিজি ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের সাবেক ডিজিএম মনজুর আহমেদসহ অজ্ঞাতনামা কতিপয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও কতিপয় বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ সদস্য এবং তৎকালীন কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার নীতিনির্ধারক।

সাবেক এমপি বাহারের নামে সময় টিভির সাংবাদিকের মামলা : কুমিল্লায় সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগে সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারসহ ১৫৩ জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে মামলা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সময় টিভির সাংবাদিক বাহার রায়হান বাদী হয়ে কুমিল্লার ১ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী কাইউমুল হক রিংকু এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

বিষয়টি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডিকে) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ নিয়ে আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রীস হামলা এবং সাংবাদিক নির্যাতনে মোট তিনটি মামলা হয়েছে।

মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টু ও বাহারের সাবেক দেহরক্ষী মো. দুলাল। বাকি ১৫০ জন আজ্ঞাত নামা আসামি।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোটের হরতাল কর্মসূচি ছিল। সেদিন হরতাল অবরোধের খবর সংগ্রহ করতে নগরীর কান্দির পাড় যান সময় টিভির সাংবাদিক বাহার রায়হান। এ সময় হরতাল প্রতিরোধের নামে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় মহানগর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের বেশ কয়েকজন নেতকর্মীকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করেন তারা। এসময় ভিডিও ফুটেজ ধারণ করায় বাহাউদ্দীন বাহারের নির্দেশে অভিযুক্তরা সাংবাদিক বাহার রায়হানকে পিটিয়ে আহত এবং সঙ্গে থাকা সময় টিভির ক্যামেরা এবং স্ট্যান্ড ছিনিয়ে নেয়।

ঘটনার পর সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন বাহার সাংবাদিক বাহার রায়হানকে কোনো আইনি ব্যবস্থা বা সংবাদ সম্মেলন করলে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেন।