হাসিনা, মেনন ও ইনুসহ ৫০০ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ

* শিক্ষার্থী হত্যায় শেখ হাসিনাসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা * সিলেটে হাসিনা, রেহানা, কাদেরসহ ৮৭ জনের নামে মামলা

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগসহ এসব সংগঠনের অঙ্গসংগঠন এবং অজ্ঞাত ৫০০ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শেখ শাহরিয়ার বিন মনিনের পিতা মো. আবদুল মতিনের পক্ষে এই আবেদন করেন।

গত ১৮ জুলাই ঢাকার মিরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।

আবেদনটি বলছে, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশে এবং পুলিশ, র‌্যাব, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী নেতাদের দ্বারা আন্দোলনকারী নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে কমপক্ষে ৮১৯ জন নিহত হন।

এ ঘটনায় প্রায় ২০ হাজার ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন এবং এক হাজার জন চিরতরে অন্ধ ও পঙ্গু হন। কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এছাড়া আন্দোলনকারী ৩২ জন শিশু গণহত্যার শিকার হন।

এদিকে রাজধানীর ফার্মগেটে পুলিশের গুলিতে মো. তৌহিদুল হক নামের এক শিক্ষার্থীকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালতে তৌহিদুলের বড় ভাই তারিকুল ইসলাম এ মামলা করেছেন। আদালত তেজগাঁও থানা পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার অপর আসামিদের মধ্যে আছেন- ওবায়দুল কাদের, আছাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, হাছান মাহমুদ, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, হারুন-অর-রশীদ, বিপ্লব কুমার, হাবিবুর রহমান, সাদেক খান, শাজাহান খান, গোলাম মারুফ মজুমদার (নিঝুম মজুমদার), মুনতাসীর উদ্দিন খান মামুন।

গত ৪ আগস্ট তেজগাঁও থানাধীন ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজের নিচের সড়কে গুলিতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল হক।

সিলেটে হাসিনা, রেহানা, কাদেরসহ ৮৭ জনের নামে মামলা : সিলেটের ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানাসহ ৮৭ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আরো ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার লেট মেট্রপলিটন প্রথম ও দ্রুত বিচার আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নগরের ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কলবাখানি এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে জুবের আহমদ। বাদীর অভিযোগ, গত ৪ আগস্ট নগরের কোর্ট পয়েন্ট ও বন্দরবাজার এলাকায় ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা ও নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় বাদী নিজেও গুলিবিদ্ধ হন। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের ৭ জন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সাবেক আইজিপি, এমপি, মেয়রকে আসামি করা হয়েছে। আসামি হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বারাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান মাহমুদ, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি ও সাবেক ডিবি প্রধান হারুন-অর রশিদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান।

আসামির তালিকায় আরো আছেন- সাবেক ওসমানীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদ ওরফে ভিপি শামীম, সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসার আজিজ, বিয়ানীবাজারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, ৩২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পিযুষ কান্তি দে, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশোয়ার জাহান সৌরভ, সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পাবলিক রিলেশন অফিসার ও মেয়রের এপিএস সাজলু লস্কর, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খান, তার সহযোগী পাঙ্গাস, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, হবিগঞ্জের ১১নং গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজের ছেলে রুহুল আমিন শিবলু, সিলেট জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য কামরান আহমদ, ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেদুয়ান আহমদ, মহানগর জাসদের সাধারণ সম্পাদক লোকমান আহমদ, ৫নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল আহমদ, জেলা ছাত্রলীগ নেতা জনি, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক, সিসিকের ৩৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।