বন্যায় লন্ডভন্ড উত্তর পূর্বাঞ্চল, মৃত্যু ১৩

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ১১ জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ, সড়ক, রেলপথ, মোবাইল নেটওয়ার্কব্যবস্থা। পানিতে ডুবে যাওয়ায় ঘরবাড়ির লোকজন সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, স্থানীয় মসজিদ ও মন্দিরে ঠাঁই নিয়েছেন মানুষ। এছাড়াও আকস্মিক বন্যায় এ পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪৪ লাখ ৯৭ হাজারের বেশি মানুষ।

জানা গেছে, বন্যাকবলিত ১১ জেলার মধ্যে রয়েছে- ফেনী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজার। পানিতে রেলপথ ডোবায় চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। এছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অনেক স্থানে বন্যা হওয়ায় বাস চলাচলেও বিঘ্নিত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যার কারণে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধারে সেনাবাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন। ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টায় উন্নতির দিকে যাবে বলে ধারণা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ডম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দিয়েছে। ফলে গোমতী ও ফেনী নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে বাংলাদেশে দেখা দিয়েছে বন্যা। গ্রামীণ সব সড়ক ও ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।

দেশের সাত নদীর ১৪ স্টেশনের পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। তবে বেশিরভাগ অঞ্চলের নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। কিছু এলাকার নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। আর ভারি বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আবহাওয়া অধিদফতর দেশের কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টি এবং চট্টগ্রামের ভূমিধসের শঙ্কার কথাও জানিয়েছে। গেনী নদীর রামগড় স্টেশনের পানি ২০০, খোয়াই নদীর বাল্লা স্টেশনে পানি বিপৎসীমার ১৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। একই নদীর হবিগঞ্জ স্টেশনে পানি ১৬৫, গোমতীর নদীর কুমিল্লা স্টেশনের পানি ১১৮, মনু নদীর মৌলভিবাজার স্টেশনে পানি ১১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। সব মিলিয়ে কুশিয়ারা নদীর ৪ স্টেশন, মনু নদীর ২ স্টেশন, খোয়াই নদীর ২, গোমতী নদীর ২ হালদার ২, মুহুরী ও ফেনী নদীর দুই স্টেশনের পানি বিপৎসীমার উপরে আছে এখনো।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি ধীরগতিতে কমছে বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাগুলোয় ভারি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু হয়েছে। ফলে বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) বন্যাকবলিত ফেনী জেলার ৯১ দশমিক ৯ শতাংশ মোবাইল ফোনের টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে।

নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি ধীরগতিতে হ্রাস পাচ্ছে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাসমূহে ভারি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানির সমতল হ্রাস পাওয়া শুরু হয়েছে। ফলে বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে।

ট্রেন চলাচল বন্ধ : রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্টের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রবল বর্ষণ ও অতি বৃষ্টির কারণে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন সেকশনে রেললাইনের নিচের মাটি সরে গিয়ে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। অতি বৃষ্টির কারণে ফাজিলপুর-কালিদহ সেকশনের নিচ থেকে মাটি, পাথরসহ স্লিপার সরে গিয়ে রেললাইন বেঁকে যায় এবং চট্টগ্রাম-নাজিরহাট-দোহাজারী-কক্সবাজার সেকশনেও একইভাবে লাইনের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে লাইন বেঁকে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ করার জন্য ডিইএন-১ (চট্টগ্রাম) অনুরোধ জানান। এছাড়া, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শায়েস্তাগঞ্জ-লস্করপুর সেকশনের কিলোমিটার ২৬০/৯ থেকে ২৬১/১ পর্যন্ত ৯৮ নম্বর রেল সেতুর গার্ডার সমান পানি হওয়ায় ট্রেন চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার জন্য এসএসএই (ওয়ে) (শায়েস্তাগঞ্জ) অনুরোধ জানান। ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেস (৭০১/৭০২), চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের মহানগর প্রভাতি (৭০৩), ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটের জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস (৭১৭/৭১৮), উপবন এক্সপ্রেস (৭৪০/৭৩৯), চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের মহানগর এক্সপ্রেস (৭২১/৭২২), সিলেট-চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের উদয়ন এক্সপ্রেস (৭২৩/৭২৪), চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটের মেঘনা এক্সপ্রেস (৭২৯/৭৩০), চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস (৭৪১/৭৪২), ঢাকা-সিলেট রুটের কালনী এক্সপ্রেস (৭৭৩), চট্টগ্রাম-জামালপুর-চট্টগ্রাম রুটের বিজয় এক্সপ্রেস (৭৮৫/৭৮৬), চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (৭৮৭), ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের চট্টলা এক্সপ্রেস (৮০২), কক্সবাজার-ঢাকা-কক্সবাজার রুটের কক্সবাজার এক্সপ্রেস (৮১৩/৮১৪), ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রুটের পর্যটক এক্সপ্রেস (৮১৫/৮১৬), কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটের ডাউন কক্সবাজার স্পেশাল, চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ঢাকা/চট্টগ্রাম মেইল (১/২), ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটের সুরমা মেইল (৯/১০) এবং চট্টগ্রাম-ভূয়াপুর রুটের ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস (৩৭)।

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল গঠন : চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানে অনেকের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এ মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সরকার। গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, যেসব ব্যক্তিরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহায়তা দিতে চান, তারা প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের ব্যাংক হিসাবে সহায়তার অর্থ পাঠাতে পারেন। হিসাবের নাম: প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল ব্যাংক: সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হিসাব নম্বর: ০১০৭৩৩৩০০৪০৯৩। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, এ তহবিলের অর্থ ত্রাণ ও কল্যাণ কাজে ব্যয় করা হয়। প্রেরিত অর্থ সরকার কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করে এর যথাযথ হিসাব সংরক্ষণ করবে।

সমন্বয় সেল গঠন : বাংলাদেশে উদ্ভূত বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহায়তা সমন্বয় সেল’ গঠন করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. হারুন-অর-রশিদ সেলের দৈনন্দিন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করবেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহায়তা সমন্বয় সেলে জরুরি যোগাযোগের জন্য ০২-৪৭১১৮৭০০, ০২-৪৭১১৮৭০১, ০২-৪৭১১৮৭০২, ০২-৪৭১১৮৭০৩, ০২-৪৭১১৮৭০৪ ও ০২-৪৭১১৮৭০৫ এবং ০১৩১৭৭৪৯৯৮০ ও ০১৮২০১১৭৭৪৪ নম্বরে ফোন করা যাবে। সমন্বয় সেল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষাসহ প্রাপ্ত তথ্যাদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে এবং সার্বক্ষণিক সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর (ফলোআপ) রাখবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলমান বন্যায় এ পর্যন্ত ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং ১১টি জেলায় ৪৪ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান জানান, ফেনী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে ব্যাপক বন্যাসহ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বন্যায় ৭৭টি উপজেলার ৫৮৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আট লাখ ৮৭ হাজারের বেশি পরিবার ক্ষয়ক্ষতির কবলে পড়েছে। দুই নারীসহ ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সচিব। হতাহতদের মধ্যে কুমিল্লার চারজন, ফেনীর একজন, চট্টগ্রামে দুজন, নোয়াখালীর একজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন ও কক্সবাজারে তিনজন রয়েছেন। সংকট মোকাবিলায় সরকার তিন হাজার ১৬০টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে। এসব কেন্দ্রে এক লাখ ৮৮ হাজার ৭৩৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিতে ৬৩৭টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। দুর্গতদের সহায়তার জন্য মন্ত্রণালয় নগদ তিন কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ হাজার ১৫০ টন চাল এবং ১৫ হাজার খাদ্যের প্যাকেট বিতরণ করেছে। চলমান দুর্যোগ মোকাবিলায় সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ রয়েছে বলেও আশ্বস্ত করেন সচিব।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় আরো একটি সেতুর অংশ ধসে পড়ায় কসবা উপজেলার সঙ্গে আখাউড়ার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এই সড়কের আরেকটি সেতু মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে নেমে আসা পানিতে আখাউড়া উপজেলার অন্তত আটটি স্থানে আঞ্চলিক সড়ক ভেঙে গেছে। ফলে ওইসব এলাকায় সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল শুক্রবার পাওয়া পর্যন্ত আখাউড়ায় মোট ১০০টির মতো পরিবার স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। আখাউড়ার সীমান্তবর্তী চারটি ইউনিয়নের ৩৪টি গ্রামের অন্তত ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকার ধানের জমি, শাকসবজির জমিসহ বিভিন্ন মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া এখনো পর্যন্ত আখাউড়া-আগরতলা সড়ক যোগাযোগ এবং স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে। উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, ধসেপড়া ও ঝুঁকির মুখে থাকা সেতু দুটির পাশে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচ থেকে মাটি থেকে সরে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে কয়েকটি এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি জানান, সেতুর বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। ঝুঁকি থাকায় সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর আমাদের বর্ষা মৌসুম হওয়ায় বাংলাদেশে স্বাভাবিক বন্যা হয়। আমাদের বৃষ্টির ৭০ শতাংশই এ সময়ে হয়। উজানে থাকা ভারতের একটা অংশেও এ সময়ে ভারি বৃষ্টি হয়। ফলে আমাদের এখানে বন্যার বিষয়টি নির্ভর করে তাদের ওখানে কী পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে এর ওপর। আমাদের তিস্তায় কিন্তু দ্রুত পানি চলে আসে, আবার দ্রুত কমে যায়। এখন ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে আছে। এর প্রধান কারণ জুলাইয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫২ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। ওই সময় চট্টগ্রামে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। এক মাসের বৃষ্টি ৫-৬ দিনে হয়ে গেছে। প্রতি বছরই এখানে বর্ষায় যে পানি আসে, সেখানে কিছু না কিছু বন্যা হয়। এ মুহূর্তে বড় বন্যার শঙ্কা কম। তবে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় আছে। ১৯৯৮ বা ১৯৮৮ সালেও কিন্তু সেপ্টেম্বরে বন্যা হয়েছে। ফলে আমাদের প্রস্তুতি রাখতে হবে, যাতে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়।

মৌলভীবাজার : বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী নদীবেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলার বন্যার পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। জেলার ধলাই নদী ছাড়া, কুশিয়ারা, মনু ও জুড়ী নদীসহ সবগুলো প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও মৌলভীবাজারে কিছুটা পানি কমতে শুরু করলেও ৪টি নদীর ১৫টি ভাঙন দিয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। উপরিভাগে বন্যার কিছুটা উন্নতি হলেও নিম্নাঞ্চল রাজনগর উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনো কোমরসম পানিতে নিমজ্জিত।

এদিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ময়নার দোকান নামক স্থানে মাছ ধরতে এসে পানিতে পড়ে নিখোঁজ হয়েছেন হৃদয় মিয়া (২২) নামে এক যুবক।

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল ও ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে ওঠায় কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর পানির তীব্রতা আরো বাড়ে। এখানে এখানো কার্যত পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।