পাকিস্তানে অবিস্মরণীয় জয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

অবিশ্বাস্য! অভাবনীয়! অসাধারণ! স্বপ্নও বোধ হয় এতো সুন্দর হয় না। আগের দিন মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলে এমন স্বপ্ন দেখার সাহস যুগিয়ে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। শেষ দিনে নানামুখি চাপ সামলে সাকিব আল হাসান যেভাবে বোলিং করেছেন সেটা এক কথায় অসাধারণ। মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাট হাতে যেমন সফল বোলিংটাও করলেন দুর্দান্ত। রাওয়ালপিন্ডিতে গোটা দলের উজ্জীবিত পারফরম্যান্সে ধরা দিল ঐতিহাসিক মুহূর্ত। পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় টেস্ট জয় ছিনিয়ে আনল বাংলাদেশ। অথচ ২০০৩ সালে মুলতানে জয়ের একদম নিকটে গিয়েও আক্ষেপে পুড়তে হয়েছিলো ১ উইকেটে হারের যন্ত্রণায়। সেদিন বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। এরপর পাকিস্তানের সঙ্গে ঘরে-বাইরে অনেকগুলো টেস্ট খেললেও জয় ছিলো অধরা। অবশেষে ২১ বছর পর আক্ষেপ ঘুচল টাইগারদের। ক্রিকেটের কুলীন সংস্করণে প্রথমবার পাকিস্তানকে হারালো বাংলাদেশ। পাকিস্তানে ১৪ টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম জয় এটি। পাকিস্তানের মাঠে তাদের বিপক্ষে ২১ আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম জয়ও এটিই। গতকাল রোববার রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ জিতেছে ১০ উইকেটে। অথচ চতুর্থ দিন পর্যন্ত মনে হচ্ছিল এই টেস্ট গড়াচ্ছে নিষ্প্রাণ ড্রয়ের দিকে। শেষ দিনে পেস-স্পিনের সমন্বয়ে দুর্দান্ত বোলিংয়ে চিত্রপট বদলে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। দলকে পাইয়ে দেন ঐতিহাসিক এক জয়। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকে মাত্র ১৪৬ রানে অলআউট করে স্রেফ ৩০ রানের লক্ষ্য পান টাইগাররা। সহজ সেই লক্ষ্য পেরুতে ৬.৩ ওভারের বেশি খেলতে হয়নি সফরকারিদের। দেশের বাইরে টেস্টে এটি বাংলাদেশের সপ্তম জয়। মাউন্ট মাঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর এই জয়কেই নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে বড় করতে রাখতে হয়।

বাংলাদেশের জেতার ভিত তৈরিতে বড় ভূমিকা অবশ্য ব্যাটারদের। স্বাগতিকদের ৪৪৮ রানের জবাবে ৫৬৫ রান তুলে ১১৭ রানের লিড নিয়ে চমকে দেয় শান্তর দল। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম খেলেন ১৯১ রানের ইনিংস। ওপেনার সাদমান ইসলামের ব্যাট থেকে আসে ৯৩ রান। মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাটিংয়ে ৭৭ রানের পর বোলিংয়েও ৪ উইকেট নিয়ে রাখেন বড় ভূমিকা। উইকেটের পেছনে ৬টি ডিসমিসালের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে ফিফটি করেন লিটন দাস, ফিফটি আসে মুমিনুল হকের ব্যাট থেকেও। নতুন বলে শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদরা দুই ইনিংসেই রাখেন ঝাঁজালো ভূমিকা। অর্থাৎ সম্মিলিত পারফরম্যান্সেই ডানা মেলে ধরে বাংলাদেশ। এই টেস্টের প্রথমদিনের বেশিরভাগটা ভেসে গিয়েছিল বাজে আবহাওয়ায়। এরপর ব্যাট করতে নেমে শুরুর বিপর্যয় কাটিয়েও বড় রানের দিকে ছুটছিল পাকিস্তান। দ্বিতীয় দিন বিকালে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে ইনিংস ছেড়ে দেয় তারা। বাংলাদেশও দিতে থাকে জোরালো জবাব। নিবেদন, চেষ্টা, চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তায় ইনিংস টেনে নিতে থাকেন ব্যাটাররা। পাকিস্তানের পুঁজি ছাপিয়ে অনেক দূর চলে যায় বাংলাদেশ।

চতুর্থ দিন বিকালে এসে বড় লিড নেয়ার পরই পরিষ্কার হয়ে যায় আর যাইহোক এই টেস্টে হারছে না বাংলাদেশ। তবে জেতার আশা তখনো ছিলো বাড়াবাড়ি। চতুর্থ দিন শেষে ১ উইকেটে ২৩ তুলেছিল পাকিস্তান। তখনো ড্রই ছিলো সম্ভাব্য ফলাফল। তবে পঞ্চম দিনে হিসেব বদলে দিতে থাকে বাংলাদেশ। সকালেই দারুণ বল করে হাসান মাহমুদ কাবু করেন শান মাসুদকে। বাবর আজম শূন্য রানে জীবন পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। নাহিদ রানা থাকে থামান গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। এরপরই স্পিন ভেল্কি শুরু সাকিব-মিরাজের। রাজনৈতিক পালাবদলের পর দেশে সাকিবের বিরুদ্ধে হয়েছে হত্যা মামলা, তাকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেয়ার উকিল নোটিশও দেয়া হয়েছে বিসিবিকে। এসব চাপ একদম নিজের উপর পড়তে দেননি বাংলাদেশের সফলতম ক্রিকেটার। সাউদ শাকিল, আব্দুল্লাহ শফিকের মহা গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট নিয়ে দলের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেন তিনি। পরে নাসিম শাহকে আউট করে ধরেন তৃতীয় শিকার। মিরাজ ব্যাট হাতে ঝলক দেখানোর পর নিজের আসল কাজেও ছিলেন পটু। শেষ দিনের উইকেট ভেঙে যাওয়ায় তা থেকে মিলে টার্ন, বাউন্স। কিছু বল নিচুও হচ্ছিলো। তাতেই মিরাজ হয়ে ওঠেন আরো দুর্ধর্ষ। ৪ উইকেট তুলেন তিনি। বিসিবি সভাপতির চেয়ারে বসেই ঐতিহাসিক জয়ের স্বাদ পেলেন ফারুক আহমেদ। এটি নিঃসন্দেহে তার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

স্কোর

পাকিস্তান প্রথম ইনিংস : ৪৪৮ ডি.

২য় ইনিংস : ১৩০/১০

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৫৫৬/১০

২য় ইনিংস : ৩০/০

ফলাফল : ১০ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ