২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরই লাগাতার অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি। প্রায় তিন মাস ধরে চলে সেই অবরোধ। অবরোধ চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা শুরু হয়। অনেকেই আগুনে পুড়ে মারা যান সেই সময়। যদিও পেট্রলবোমা হামলায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারছিল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই সময় আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্যমন্ত্রী ছিলেন হাসানুল হক ইনু। সাংবাদিকরা নিয়মিতই তাকে এসব হামলার বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেন। একদিন তিনি বলেন, এটাকে বলে অগ্নিসন্ত্রাস। বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের অগ্নিসন্ত্রাসীরা দেশে অরাজকতার জন্য এমন অগ্নিসন্ত্রাস চালাচ্ছে। প্রায় সব অনুষ্ঠানেই তিনি এই শব্দটি ব্যবহার করতেন। একে একে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এমনকি প্রধানমন্ত্রীও অগ্নিসন্ত্রাস শব্দটি ব্যবহার শুরু করেন। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন ইনু। সেখানে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার কথা উল্লেখ করে তিনি ‘আগুন-সন্ত্রাসীদের মাইনাসের পক্ষে’ মতামত দেন।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগে গত ৩০ জুলাই জামায়াত-শিবিরকে ‘অগ্নিসন্ত্রাসী’ উল্লেখ করে তাদের নিষিদ্ধের বিষয়ে মতামত দিয়েছিলেন ইনু। গত সোমবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক এই তথ্যমন্ত্রীকে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ইনুর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর উল্লাস করার অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হলেও ২০২৪ এর নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়েও জয়লাভ করতে পারেননি। আওয়ামী লীগের অনেকেই ইনু বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ তুলতেন। তাদের একজন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যিনি একাধিকবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেছেন।
২০২১ সালে বিএমএ ভবনে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় শেখ সেলিম বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ব্রিগেড কমান্ডারদের কেউ বঙ্গবন্ধুর লাশটা দেখতে যায়নি। সবাই রেডিও স্টেশনে গেছে। সেদিন যারা রেডিও স্টেশনে গেছে, তারা সবাই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। খুনিদের সমর্থন করতে তারা গিয়েছিল। ইনু-তাহের, যারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলেছিল, তারাও গিয়েছিল খুনিদের সমর্থন করতে। বঙ্গভবনে গিয়ে তারা খুনি মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিল। সর্বশেষ ২০২৩ সালেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে একই কথা বলেন শেখ সেলিম। তবে, বরাবরই জাসদের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে এই কথা অস্বীকার করা হতো।
ইনুকে বর্তমানে ডিবি কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় তিনটি হত্যা মামলা এবং রাজধানীর মিরপুরে শিক্ষার্থী আলভী হত্যায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে। অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে মঙ্গলবার আদালতে তুলে রিমান্ডে চাইবে ডিবি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারের পর তাকে রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। পরে সেখানে তার জিজ্ঞাসাবাদ হয়।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার বিকালে উত্তরার বাসা থেকে হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার করে ডিবির একটি টিম। পরে মাইক্রোবাসে করে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। ইনুর বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এসব অভিযোগে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ডিবি কার্যালয়ে। আরো জানা যায়, আজ মঙ্গলবার রিমান্ড আবেদন করে ইনুকে আদালতে তোলা হবে।
এদিকে ইনুকে গ্রেপ্তারের পর ডিএমপির জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে গত সোমবার রাজধানীর উত্তরা থেকে নিউমার্কেট থানার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। গত ২১ আগস্ট ডিএমপির নিউমার্কেট থানায় করা একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিউমার্কেট থানায় মামলা নং-৪।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ইনুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশান থেকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীক নিয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে একবার সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তবে সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।