বাসভবন হবে ‘যমুনা’

রোববার থেকে তেজগাঁওয়ে অফিস করবেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সরকারপ্রধানের জন্য নির্ধারিত কার্যালয়ে আগামী রোববার থেকে অফিস করতে পারেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কার্যালয় ব্যবহার উপযোগী করতে দিনরাত কাজ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করেন। এসময়ে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লাখো মানুষ ঢুকে পড়েন। কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ওই সময়ে বিভিন্ন সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তারা কার্যালয়টি পরিদর্শন করেন। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে জোরেশোরে কাজ করা হয়। বর্তমানে কার্যালয়টি প্রস্তুত থাকায় আগামী রোববার থেকে তেজগাঁওয়ে অফিস করতে পারেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। আর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’কে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তেজগাঁওস্থ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সঙ্গে বিভিন্ন দপ্তরের সম্পর্ক তৈরি করতে এবার বিশেষ সহকারীর পদ বাড়ানো হতে পারে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে পরিবর্তন আসতে পারে। এর পরে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের মতো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গতি বাড়ানোর জন্যই এসব নতুন মুখ আনা হচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদের মতো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সাচিবিক অনুবিভাগ, ব্যক্তিগত অনুবিভাগ, প্রেস অনুবিভাগসহ বিভিন্ন উইংয়ের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত এবং প্রেস সচিব ও প্রেস উইংয়ে আরো দুজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। উপ-প্রেস সচিব পদে অপূর্ব জাহাঙ্গীর এবং সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) পদে শাব্বির আহমদ নিয়োগ পেয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. আবু সাঈদকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট জনরোষে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে তেজগাঁও কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুরের পাশাপাশি বিভিন্ন জিনিসপত্রও নিয়ে যায় লোকজন। কার্যালয়ের অভ্যর্থনা কক্ষ, হল রুম, সম্মেলনকক্ষসহ বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করে ব্যাপক কাচ ভাঙচুর করে। হলরুমে সাউন্ড সিস্টেম ভাঙচুর করাসহ চেয়ার, টেবিল, সোফা, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মনিটর, বিভিন্ন ধরনের বাতি, ফুলদানিসহ ভেতরে যা ছিল মোটামুটি সবই নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার পর ১২ আগস্ট গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি মেরামত ও সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়। তখন সেখানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাসহ সংশ্লিষ্টরা প্রবেশ করেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে অল্প সময় তা মেরামত করা কঠিন মনে হলেও দুই শতাধিক লোকজনকে দিয়ে দিনরাত কাজ করিয়ে তা ১২-১৩ দিনের মধ্যে ব্যবহার উপযোগী করা হয়। সেখানে পূর্তকাজ, ফার্নিচার এবং ইলেক্ট্রোমেকানিক্যালসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করা হয়েছে।

তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সংস্কারের কাজ দ্রুতগতিতে করার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবীরুল ইসলাম। সচিব বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ৮ আগস্ট শপথ নেয়ার প্রথম সভায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংস্কার করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ জন্য একটি কমিটিও গঠন করে কাজ করা জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এরইমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস আগামী সপ্তাহ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) অফিসের কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন বলে আশা করেন সচিব মো. নবীরুল ইসলাম।

প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশে ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ মানুষ ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনে। এর ফলে এই দুই জায়গায় আপাতত অফিস করা বা বসবাস করার মতো পরিবেশ ছিল না। সেজন্য রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বাসভবন হিসেবে উপযুক্ত করে অফিস চালিয়ে আসছে। যমুনা ভবনটি রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বাসভবন প্রস্তুত করার সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরপরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’কে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বাসভবন হিসেবে কাজ করছেন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশনায় আমরা তেজগাঁও কার্যালয়ের (প্রধানমন্ত্রীর কার্যাল) সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করে প্রস্তুত রেখেছি। এরইমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার রেকর্ডব্লকের কাজ শেষ, কেবিনেট কক্ষের কাজ, শাপলা হলের কাজ, প্রশাসন ব্লকের কাজ এবং সভাকক্ষের কাজ শেষ হয়েছে। আরো কিছু কাজ আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে শেষ হবে। আগামী রোববার থেকে নতুন উপদেষ্টা পরিষদ তেজগাঁওয়ের অফিসে কাজ শুরু করতে পারবেন।