ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক

নির্বাচন নিয়ে অযৌক্তিক সময় নষ্ট করবে না অন্তর্বর্তী সরকার

* প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব বাংলাদেশ জাসদের * হেফাজতের সব মামলা প্রত্যাহার চান মামুনুল হক * প্রধান উপদেষ্টাকে ইসলামী আন্দোলনের ১৩ প্রস্তাবনা * আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল চান কর্নেল অলি
নির্বাচন নিয়ে অযৌক্তিক সময় নষ্ট করবে না অন্তর্বর্তী সরকার

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা মতবিনিময় সভা করেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার চার সপ্তাহ পর গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে ইসলামি দলগুলো। দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে অযৌক্তিক সময় নষ্ট করবে না অন্তর্বর্তী সরকার।

সাম্প্রতিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আসন্ন দুর্গা পূজায় কেউ যাতে নৈরাজ্য করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে ইসলামী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান ড. ইউনূস।

গতকালের সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ জিএম কাদের। অন্যদিকে সাতটি ইসলামি দলের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন চরমোনাই পীর রেজাউল করীম, খেলাফত মজলিসের নেতৃত্ব দেন দলের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতৃত্ব দেন দলটির আমির ইউসুফ আশরাফ, জমিয়তে উলামে ইসলামের একাংশের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের মহাসচিব মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি, হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব দেন মহাসচিব সাজেদুর রহমান, নেজামী ইসলামের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আশরাফুল হক এবং খেলাফত আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন নায়েবে আমির মজিবুর রহমান হামেদি। গতকাল বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত টানা পাঁচ ঘণ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে এই মতবিনিময় সভা করা হয়। ওই সভায় রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়।

মতবিনিয়ম সভা শেষে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এছাড়াও ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে নিহতসহ সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতার ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছি। ৫ মে ও পরবর্তী সময়ে হেফাজতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলোর নেতাদের বিরুদ্ধে দেয়া মামলাগুলো এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। ইসলামবিরোধী কোনো আইন যেন না হয়। দুইবারের বেশি যেন কেউ প্রধানমন্ত্রী না হয়।

বর্তমান সংবিধানের আলোকে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, পুলিশ সংস্কার একটা বড় কাজ। রাষ্ট্রের জন্য পুলিশকে তৈরি করা, কালো আইন বাতিল। পুরো বিচার ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৮৩ দফা দাবি জানিয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচনটা হতে হবে। এটা অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক দল ও দেশের জন্য ভালো। কিন্তু সংস্কার হওয়ার আগে কোনো নির্বাচন হওয়া কোনো অবস্থাতেই বাঞ্চনীয় নয়। সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। দেশের মানুষের মাঝে মনুষ্যত্ব ফিরিয়ে আনতে হবে।

কর্নেল অলি আহমদ আরো বলেন, জামায়াতকে যদি ছোট তুচ্ছ কারণে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা যায়, আমাদের হাজারো ছেলে-মেয়েদের হত্যা করার জন্য, ১৫ বছরে আরো কয়েক হাজার গুম করার জন্য তাদেরটা (আওয়ামী লীগ) কেন বাতিল হবে না? তাদের বাতিল হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। বাতিল না হলে আগামীতেও স্বৈরাচারের জন্ম হবে।

গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যার বিচার দাবিসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১৩টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার যদি প্রাপ্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ না নেয়, তাহলে হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তদান ব্যর্থ হবে।

প্রসঙ্গত, বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে আসেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত