গোঁজামিল দিয়ে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে

বললেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ বলেছেন, ৭১-এর প্রত্যাশা এবং ২০২৪-এর প্রত্যাশা অভিন্ন নয়। ১৯৭১-এর প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বিধায় ২০২৪-এর এই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে (বিআইআইএসএস) সংবিধান সংশোধন নাকি পুনর্লিখন, কোন পথে হবে গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।

হাসান আরিফ বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম, তাকে সমুন্নত রাখার জন্যই দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র গঠনের প্রয়োজন। ১৯৭১-এর পর সংবিধান রচনায় যে ধরনের আলোচনা হয়েছিল, তা থেকে আমরা দিকনির্দেশনা পেতে পারি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংবিধানের পরিবর্তন করা হয়েছে বিভিন্ন দেশে। সংবিধান জীবিত ডকুমেন্ট, তাকে নিয়ে কাজ করা সম্ভব।

তিনি বলেন, গোঁজামিল দিয়ে সংবিধানকে সংশোধন করা হয়েছে বারবার, তা নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। সব ধরনের মতামতকে সঙ্গে নিয়েই গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ। সরকার সিদ্ধান্ত দেবে না, সিদ্ধান্ত দেবে ছাত্র-জনতা।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর উপদেষ্টা ড. আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান এমনভাবে পরিবর্তিত করা হয়েছে তাতে ব্যক্তি স্বার্থ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ব্যক্তির হাতে, প্রধানমন্ত্রীর হাতে অবাধ ক্ষমতা থাকায় দলীয়, রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাংবিধানিক পুনর্লিখন ব্যতীত এই ক্ষমতার এককেন্দ্রিকরণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। সাংবিধানিক পদগুলোতে কেন, কীভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল? তা আমাদের অজানা নয়।

তিনি বলেন, এমনকি রাষ্ট্রপতি নিয়োগের সিদ্ধান্ত একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ছিল, ক্ষমতার অপব্যবহারের চেয়ে বড় উদাহরণ আর কি হতে পারে? নির্বাচন কমিশন কারা নিয়ন্ত্রণ করে? রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও এর সমাধান হতে পারে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ। ব্যক্তিগতভাবে সংবিধান সংস্কার নয় পুনর্লিখন প্রয়োজন, যাতে নতুনভাবে কোনো দল ক্ষমতায় এসে সংবিধানে নিজেদের মতো পরিবর্তন করতে না পারে।

ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে সংখ্যাগুরুর অত্যাচার বন্ধের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

সংবিধান সংশোধন নাকি নতুন করে পুনর্লিখন প্রয়োজন তা বিতর্কের বিষয়। কে পুনর্লিখন করবে? কে সংশোধন করবে? এই দায়িত্ব কোন নির্দিষ্ট সরকারের নয়, এই দায়িত্ব জনগণের। সরকারের দায়িত্ব সব স্তরের জনগণকে পথ তৈরি করে দিতে হবে সংবিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণ করার জন্য।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক কাঠামোতেও পুনর্গঠন প্রয়োজন। সংবিধান পুনর্লিখনের প্রয়োজন বলা হচ্ছে কিন্তু জনগণের মতের প্রতিফলন আদৌ হচ্ছে কি না এইটাও দেখার প্রয়োজন।

ধারাবাহিক আকারে সংবিধানে সংশোধন করতে হবে। আদর্শিক ও রাজনৈতিক দিকগুলো থেকে জনগণের সদিচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ১৯৭১-এর প্রেক্ষাপট থেকে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সংবিধানে নতুনত্ব আনতে হবে। সব প্রতিষ্ঠানকে বিগত সরকার এমনভাবে ধ্বংস করে গেছে যে ব্যক্তি পর্যায়েও স্বৈরাচারিতা চলে গেছে, এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপের সংবিধানবিষয়ক আলোচনায় বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর উপদেষ্টা ড. আলী রীয়াজ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী প্রমুখ।