ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্ট

রোমাঞ্চের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

ইতিহাস গড়তে চাই ১৪৩ রান
রোমাঞ্চের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে জয়ের ভিত দিয়েছিলেন স্পিনাররা। শেষদিনে সাকিব আল হাসান আর মেহেদি হাসান মিরাজরা পেয়েছিলেন ৭ উইকেট। দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে এসে সেই চিত্রনাট্যের কেবল নায়কের বদল হলো। বাংলাদেশের পেসাররা দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের প্রমাণ করেছিলেন। তারই পূর্ণাঙ্গ এক রূপ দেখা গেল এদিন এসে। চতুর্থ দিনে পাকিস্তানের ৮ উইকেট নিলেন পেসাররা। নাহিদ রানা এবং হাসান মাহমুদ দুজনেই উপহার দিয়েছেন দারুণ স্পেল। গতি, বাউন্স আর আগ্রাসনে ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ছেন একজন, আরেকজন নাকাল করছেন সুইং ও লাইন-লেংথ দিয়ে, বাংলাদেশের বোলিংয়ে এমন কবে দেখা গেছে! প্রতিপক্ষের সব উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা, এমন নজির মিলেছে কবে? দুটিরই উত্তর, এই প্রথমবার! হাসানের ফাইফার পূর্ণ হয়েছে শেষ উইকেট নিয়ে। নাহিদের উইকেট সংখ্যা ৪।

পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে মোহাম্মদ রিজওয়ান আর সালমান আলী আঘা দুজনেই পরীক্ষা নিয়েছেন শুধু। তাদের সুবাদেই পাকিস্তান গিয়েছে ১৭২ রান পর্যন্ত। বাংলাদেশের সামনে টেস্ট সিরিজ জয়ের সুযোগ। ১৮৫ রানের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৭ ওভারে জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম মিলে করেছেন ৪২ রান। টাইগারদের এমন উড়ন্ত শুরুতে বাধা হয়েছে আলোক স্বল্পতা। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিতে ভেসেই গেল তৃতীয় সেশনের খেলা। চা বিরতির পর এক ওভার খেলা হতেই মেঘে ছেয়ে যায় রাওয়ালপিন্ডির আকাশ। আলোর স্বল্পতায় খেলা বন্ধ করে দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর নামে বৃষ্টি। বজ্রসহ বৃষ্টির কারণে স্থানীয় সময় ৪টা ২২ মিনিটে চতুর্থ দিনের খেলার সমাপ্তি টানেন আম্পায়াররা। শেষ দিনে তাই রোমাঞ্চকর এক জয় তুলে নেয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। গতকাল সোমবার রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে লক্ষ্য তাড়ায় নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল বেশ আগ্রাসী। নতুন বলে পাকিস্তানি পেসারদের হুমকিটুকু যেন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন জাকির হাসান। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রান উঠতে থাকে দ্রুততায়। ২৩ বলে ৩১ রান করেন এই ওপেনার। তাতেই মেরেছেন দুটি করে চার ও ছক্কা। তার সঙ্গী সাদমান ইসলাম ১৯ বলে ৯ রানে অপরাজিত। প্রথমবারের মতো কোনো পূর্ণ শক্তির দলের বিপক্ষে দেশের বাইরে টেস্ট সিরিজ জয়ের হাতছানি পাচ্ছে বাংলাদেশ। বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে কিছুটা শেষ দিনেও। তবে শঙ্কাটা পাকিস্তানেরই বেশি। সিরিজ বাঁচাতে হলে যে জিততেই হবে তাদের! শেষ দিনে খেলা না হলে বা ড্র হলেও সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। তবে অসাধারণ এক জয়ের এত কাছাকাছি এসে জিততে না পারাটা হবে হতাশারই। পাকিস্তানের মতো দলকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ তো সবসময় আসে না!

বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশে একমাত্র সিরিজ জয়টি ছিল ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তবে বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটারদের বনিবনা না হওয়ায় সেবার খেলেছিল দ্বিতীয় সারির ক্যারিবিয়ান দল। কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩৭ রান তুলে চা বিরতিতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের পেসাররা দেখান দাপট। প্রথম সেশনের পর দ্বিতীয় সেশনেও তাদের নৈপুণ্যে সিরিজ জয়ের জোরালো সম্ভাবনা জেগেছে টাইগারদের। পাকিস্তানকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭২ রান অলআউট করতে ১০ উইকেটের সবগুলোই নেন তিন পেসার মিলেমিশে। টেস্টে প্রথমবার কোনো ইনিংসে প্রতিপক্ষের ১০ উইকেটের সবগুলো পান বাংলাদেশের গতিময় বোলাররা। ৪৩ রানে ৫ উইকেট নেন লাইন ও লেংথে নিখুঁত থাকা হাসান মাহমুদ। গতির ঝড় তোলা নাহিদ রানার শিকার ৪৪ রানে ৪ উইকেট। এই দুই তরুণ ছাড়া অভিজ্ঞ তাসকিন আহমেদ ১ উইকেট নিতে খরচ করেন ৪০ রান।

সাইম আইয়ুব ও শান মাসুদ দিনের শুরুটা ভালোই করেছিলেন। সাইমকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন। পরে তার জায়গায় আক্রমণে এসে টানা তিন ওভারে তিনটি উইকেট শিকার করেন নাহিদ রানা। এর মধ্যে ছিল বাবর আজমের উইকেটও, যাকে তিনি আউট করলেন সিরিজে দ্বিতীয়বার। মোহাম্মদ রিজওয়ান প্রথম বলে জীবন পেয়ে ৫৪ রানের জুটি গড়ে তোলেন সালমান আলি আঘাকে নিয়ে। হাসান নতুন স্পেলে ফিরে টানা দুই বলে ফেরান রিজওয়ান ও মোহাম্মদ আলিকে। সালমান এরপর লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে রান বাড়ান কিছুটা। কিন্তু বেশি দূর এগোতে পারেননি। আবরার আহমেদকে চতুর্থ শিকারে পরিণত করেন নাহিদ। শেষ উইকেট নিয়ে হাসান পূর্ণ করেন পঞ্চম উইকেট। আগের ইনিংসে নতুন বলে মির হাজমা ও খুররাম শাহজাদ ধস নামিয়েছিলেন বাংলাদেশের টপ ও মিডল অর্ডারে। এবার জাকির ও সাদমান তা হতে দেননি। বিশেষ করে জাকির যেন শট খেলার পণ করেই নেমেছিলেন। দ্বিতীয় ওভারেই শাহজাদকে দারুণ ফ্লিক শটে ছক্কায় ওড়ান তিনি। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেয়া এই পেসারকেই পরে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন তিনি পুল শটে। দুটি করে চার ও ছক্কায় তার রান হয়ে যায় ২৩ বলে ৩১। জাকির ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামে আলোর অভাবে। তবে নতুন দিনে সম্ভাবনার ঝিলিক তো অপেক্ষায় আছেই!

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত