দিল্লি-ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক দূরত্ব ও ইসলামাবাদের সঙ্গে নিবিড় হওয়ার বিষয়টি মানতে নারাজ পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। দ্বিপক্ষীয়ভাবে দিল্লির সঙ্গে টানাপড়েন কমাতে চেষ্টার কথা বলেছেন তিনি। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দিল্লি-ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাখ্যায় এমন অভিমত প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। বাংলাদেশে ক্ষমতা পালাবদলের মধ্য দিয়ে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এ দুটোর একটাকেও আমি ঠিক মানছি না। আমি মনে করি কোনো এক পর্যায়ে, কোনো এক কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে একটু টানাপড়েন ছিল। স্বাভাবিক একটা সম্পর্ক যদি উন্নীত হয়, আমাদের সবার খুশি হওয়া উচিত। আমরা তো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। পাকিস্তানের সঙ্গে তো এখন আমাদের শত্রুতা করে কোনো ফায়দা নেই। তৌহিদ হোসেন বলেন, আপনারা যদি মনে করেন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক একটু টানাপড়েন চলছে, সেটা দ্বিপাক্ষিকভাবে আমাদের চেষ্টা করতে হবে। তবে আমরা একটা কথা মনে করি, সম্পর্ক মানুষ কেন্দ্রিক হতে হবে। আসলে এমন হতে হবে যেন মানুষও মনে করে যে, সম্পর্কটা ভালো।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সোনালী অধ্যায়ের কথা বলা হতো। এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় ছিল দুই সরকারের মাঝে। আমরা চাই, সুসম্পর্ক থাকুক জনসাধারণের পর্যায়ে, মানুষ সেটাতে যুক্ত হোক। মানুষ মনে করুক, আসলে খুব ভালো সম্পর্ক। সেটা যে ছিল না এটা স্বীকার করা ভালো। মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছিল, সেগুলো প্রশমন করা সম্ভব। দ্বিপাক্ষিক সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে আমি মনে করি। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এটাতো বিচার করবেন আরও অনেক পরে। তখন দেখবেন যে আমাদের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না। এই মুহূর্তে আমরা একটা পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। এখন আপনি বিচার করতে পারবেন না, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি কি না। তাৎক্ষণিক আমি কোনো সমস্যা দেখছি না। ভারতীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতীয় মিডিয়ায় যেটা হয়েছে, সেটা একেবারে মিথ্যার বেসাতি, বাড়াবাড়ি। বিপ্লব সাধিত হওয়ার পর কিছু বিশৃঙ্খলা থাকে। এখানে একটা বিপ্লব হয়েছে। এটা মেনে নিতে হবে। কিছু বিশৃঙ্খলা ছিল, সেখানে কিছু দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। সেটা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া যেভাবে লেগে পড়েছিল- বিশ্ব মিডিয়ায় যারা নিরপেক্ষ তারা কেউ কিন্তু ভারতীয় লাইনটাকে গ্রহণ করেনি। ভারতীয় মিডিয়া একেবাবে হাইপ সৃষ্টি করেছে। আমার মনে হয় আমরা সেই স্টেজ পার হয়ে আসছি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখনও দিল্লিতে আছেন কি না বা তিনি অন্য কোথাও চলে গেলে জানতে পারবেন কি না- এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, ওনার সঙ্গে তো আমাদের কোনো চ্যানেল নেই। উনি ভারতের আশ্রয়ে আছেন। যদি উনি অন্য কোনো দেশে চলে যান, সেটা তো আপনারা আমার কাছ থেকে জানতে হবে না। আপনারা নিজেই জানতে পারবেন। আপনারা যেভাবে জানবেন, আমিও হয়তো সেভাবে জানব। কারণ, এটা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পত্রপত্রিকায়, মিডিয়াতে চলে আসবে। এটা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর টানাপড়েন চলছিল বলে অভিমত ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে এক ধরনের টানাপড়েন চলছিল। স্বীকার করে নেওয়া ভালো। যেসব ইস্যুতে টানাপড়েন চলছিল, সেগুলো কিন্তু এই সরকারের যে অ্যাজেন্ডা আছে বা ছাত্র-জনতার যে অ্যাজেন্ডা এসেছে, তার সঙ্গে কিন্তু সংগতিপূর্ণ। আমি চূড়ান্তভাবে কোনো দ্বন্দ্বের কোনো সুযোগ দেখি না। তারা (পশ্চিমাদের সঙ্গে) যেসব ইস্যুতে উদ্বিগ্ন ছিল, আমাদের ছাত্ররা যেসব ইস্যুতে উদ্বিগ্ন ছিল।