ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বন্যার্তদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের আশ্বাস ত্রাণ উপদেষ্টার

ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের আশ্বাস ত্রাণ উপদেষ্টার

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। এতে সড়ক, বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতির চিহ্ন ফুটে উঠেছে। একইসঙ্গে এগারো জেলার মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেড়েছে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে অনেকেই স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। বন্যার পানিতে সড়কে ছোটবড় গর্ত ও অনেক স্থানে ভেঙে গেছে। ফলে বিভিন্ন সড়কে মানুষ ও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। নদীর দুই পাড়ের বাঁধে নির্মিত এলজিইডির সড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ফেনী-নোয়াখালীসহ দেশে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় এখন পর্যন্ত ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৪৫ জন, নারী সাতজন এবং শিশু ১৯ জন। জেলাভিত্তিক হিসেবে কুমিল্লায় ১৯ জন, ফেনীতে ২৮ জন, চট্টগ্রামে ছয়জন, খাগড়াছড়িতে একজন, নোয়াখালীতে ১১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন, কক্সবাজারে তিনজন ও মৌলভীবাজারে একজন। আর নিখোঁজের সংখ্যা মৌলভীবাজারে একজন। দেশের পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলায় (ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার) ১৫ দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজমান। চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কক্সবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। পানিবন্দি বা ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বর্তমানে তিন হাজার ৬১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা আছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৬ জন লোক এবং ৩১ হাজার ২০৩টি গবাদি পশু এখনো অবস্থান করছে।

৬৮টি উপজেলায় বন্যাপ্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৫০৪টি। বর্তমানে মোট পাঁচ লাখ ৮২ হাজার ১৫৫টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৫০ লাখ ২৪ হাজার ২০২ জন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ১১ জেলায় চার কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ হাজার ৬৫০ মেট্রিকটন চাল, ১৫ হাজার শুকনা খাবার প্যাকেট, শিশু খাদ্যের জন্য ৩৫ লাখ টাকা ও গো-খাদ্যবাবদ ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগৃহীত মোট এক লাখ ৮৬ হাজার ১০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, কাপড় ও পানি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (ডিডিএম) মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে।

বন্যা-পরবর্তী সময়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে বেড সংকট থাকায় গাছ তলায় শুয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন অনেকেই। গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে স্যালাইন ঝোলানো হয়েছে। রোগীর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের ওয়ার্ড, বারান্দা ছাপিয়ে অনেককের ঠাঁই নিতে হয়েছে হাসপাতালের সামনের চত্বরে গাছতলায়।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সাংবাদিকদের বলেছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো পুনর্বাসনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এর আগে, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের সমন্বয়ক, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর, আইওএম চিফ অব মিশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি, ডাব্লিউএফপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর, ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউএনআরসিও হিউম্যান্টেরিয়ান অ্যাফেয়ার অ্যাডভাইজারের সঙ্গে বৈঠক করেন উপদেষ্টা।

বন্যার্তদের পুনর্বাসনে সহায়তার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এগিয়ে এসেছে জানিয়ে ফারুক-ই-আজম বলেন, আজ ইউএন (জাতিসংঘ) বডির আটটি নানা রকমের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সভা করেছি। তারা পুনর্বাসন কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বন্যার সময়ে সেনাবাহিনী ও জনগণের উদ্দীপনা, ত্রাণ কার্যক্রম, স্বেচ্ছাসেবা এবং অভূতপূর্ব সহযোগিতার জন্য দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা প্রশংসা করেছেন বলেও জানান তিনি।

ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, আমরা বন্যার ত্রাণ পর্যায়টা অতিক্রম করে পুনর্বাসন পর্যায়ের দিকে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ খুব দ্রুত চলছে। মাঠ পর্যায়ে থেকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পর কোন কোন বিষয়ে তারা সহযোগিতা দিতে পারেন সেটা আমরা নির্ণয় করে দিলে তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত আশাবাদী যে, আমরা দুর্যোগ যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে সাধারণ মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় অতিক্রম করতে পেরেছি, আমরা ভবিষ্যতে পুনর্বাসন কর্মসূচিও সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারব। ডি-ফরমের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তিন সপ্তাহের মধ্যে দিতে হয়। আমরা সেটি এক সপ্তাহের মধ্যে করতে বলেছি।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, ডায়রিয়া রোগী দিনে দিনে বাড়ছে। প্রয়োজনীয় ওষুধের জন্য চাহিদা দিয়েছি। ওষুধ চলে আসবে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, ফেনীর ছয় উপজেলা থেকে ডায়রিয়ার রোগী হাসপাতালে আসছে। মূলত ২৫ আগস্ট থেকে ডায়রিয়া রোগী আসা শুরু হয়েছে। তবে গত দুই দিনে তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মতোই দক্ষিণাঞ্চলে আরো ১০ জেলায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত