ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে ঢাকায় আসছেন ডোনাল্ড লু

দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে ঢাকায় আসছেন ডোনাল্ড লু

ঢাকায় আসতে যাচ্ছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতে জরুরি আলোচনায় ঢাকায় আসছেন ডোনাল্ড লু।

চলতি মাসের মাঝামাঝিতে মার্কিন একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে ঢাকা সফরে আসছেন তিনি। প্রতিনিধি দলে যুক্ত রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিনিয়র ডিরেক্টর লিন্ডসে ফোর্ড। মার্কিন কূটনীতিক ডোনাল্ড লু সর্বশেষ গত মে মাসে বাংলাদেশ সফর করেন। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এটি ডোনাল্ড লু তথা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি দলের প্রথম বাংলাদেশ সফর হতে যাচ্ছে।

দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, প্রতিনিধিদলটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করবে। সূত্রমতে, মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরে অর্থনৈতিক ও আর্থিক সহায়তা বিষয়ে আলোচনা অগ্রাধিকার পাবে। এছাড়া সার্বিক সম্পর্ক উন্নয়নের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। প্রতিনিধি দল বিদ্যমান শ্রম আইন সংশোধনের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইতে পারে, কারণ বাংলাদেশকে কোনো অর্থনৈতিক সহায়তা ও বিনিয়োগ প্রদানে যুক্তরাষ্ট্র শ্রমমানকে গুরুত্ব দেবে। বিশেষত, আর্থিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের জন্য শ্রম মানের উন্নতি অন্যতম পূর্বশর্ত।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ডেমোক্রেটিক শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির মূল ফোকাস হচ্ছে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের চর্চা। বাংলাদেশে ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের পর গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির দিকে চলে গেছে। এই অবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ মানবাধিকার সংবেদনশীল দেশগুলো বাংলাদেশকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। সেগুনবাগিচার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন সরকারের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলের আলোচনায় মানবাধিকার পরিস্থিতি, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়গুলো আসবে। অন্তর্বর্তী সরকার গুমবিরোধী সনদে সই করেছে এবং গুমের ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। এই প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়া হতে পারে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে ঢাকায় সফরে এসেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তার ওই সফরটি কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিবেশ মন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিবের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ ও অধিকার কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

গত বছর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড লু দুই দফায় সফর করেন বাংলাদেশে। তখনও তার সফর ছিল বেশ আলোচনায়। নির্বাচনের আগে ওই সফরে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারকে নানা পরামর্শ দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনেকটা একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকার গঠিত হয়। সেই ভোট হয়ে যাওয়ার চার মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবার ঢাকায় সফরে এসেছিলেন।

গত বছরের ১৩ জুলাই গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া এবং দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য-এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ওই সময়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাতে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়। চলতি বছরের ১৫ মে আবার ঢাকায় সফরে আসেন লু। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকের পর ডোনাল্ড লু সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে বাংলাদেশের জনগণের আস্থা অর্জন করতে চায়। গত বছর, আমাদের এবং বাংলাদেশের মধ্যে অনেক উত্তেজনা ছিল। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু ও অহিংস নির্বাচনের জন্য খুব কঠোর পরিশ্রম করেছে। এর ফলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ওয়াশিংটন পেছনে নয় সামনের দিকে তাকাতে চায়। আমরা আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে চাই। তাই আমি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার কথা বলেছি। র‌্যাবের বিরুদ্ধে স্যাংশন, শ্রম সংস্কার, মানবাধিকার, ব্যবসায়িক জলবায়ু সংস্কারের মতো কঠিন ইস্যু আছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা গড়ে তুলতে চায়। নতুন নতুন বিনিয়োগ, বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যারা যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আগ্রহী এবং ক্লিন এনার্জি নিয়ে কাজ করার কথাও বলেন ডোনাল্ড লু।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত