ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নির্বাচন কমিশন ও দুদক পুনর্গঠনের দাবি বিএনপির

নির্বাচন কমিশন ও দুদক পুনর্গঠনের দাবি বিএনপির

শেখ হাসিনা সরকারের ‘মদদপুষ্ট’ নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন। গতকাল দুপুরে এক অনুষ্ঠানে দেশের দুই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে বিগত শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা বসে আছে অভিযোগ করে অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্যোগ নিতে বলেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই নেতা। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন কমিটির আহ্বায়ক এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এখন অতীব জরুরি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা, অতীব জরুরি দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠন করা। কারণ এই দুটা প্রতিষ্ঠানে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। এই সব সুবিধাভোগীদের ঝেটিয়ে বিদায় করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা আশা করি, এই সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল... তারা তাদের সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।’ শেখ হাসিনার শাসনামলে গঠিত নির্বাচন কমিশন তাদের ‘তল্পিবাহক’ ছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন এই দেশের বিগত রেজিম যেটি ছিল, সেটিকে পাকাপোক্ত করার জন্য যারা সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে, সেটি হলো এই ভুয়া নির্বাচন কমিশন। তারা দলদাস তল্পিবাহক একটি কমিশন। ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও তাদের গঠন করা নির্বাচন কমিশন আজও বহাল তবিয়তে বসে আছে।’ যারা গত ৭ জানুয়ারি ‘আমি আর ডামি’র নির্বাচন করেছে, যারা এক সময়ে দিনের ভোট রাতে করেছে, যারা এক সময়ে বিনা ভোটে এমপি উপহার দিয়েছে... এই তিনটা নির্বাচন কমিশন আমরা এরকমই দেখেছি। বর্তমান এই কমিশন আজ অবধি নির্লজ্জের মতো বসে আছে। আমি মনে করি, এই নির্বাচন কমিশনের বোধদয় হওয়া উচিত... জনগণের রোষ থেকে বাঁচার জন্য পদত্যাগ করে এই সরকারকে সুযোগ দেয়া উচিত নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের। অন্যথায় ‘সত্যিকার অর্থে জনরোষ থেকে কেউ রক্ষা পাবে না’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। একইসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দুদকের যেসব কমিশনার ও কর্মকর্তারা এখনও বসে আছেন বিগত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে... অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলব, অতীব জরুরি দুদক পুনর্গঠন করা। ‘কারণ দুদকে পতিতদের আত্মীয়-স্বজন, ওনাদের সুবিধাভোগী লোকজনকে বসিয়ে রেখে তৎকালীন বিরোধী দলসহ দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। আজকে ১৮ লাখ কোটি টাকা বলেন, আর ১৫ লাখ কোটি টাকা বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে হলে, ব্যাংক লুটের অর্থ ফিরিয়ে আনতে হলে, তিনি সংবাদকর্মী হোক, চিকিৎসক হোক, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি বের করতে হলে, আইসিটির দুর্নীতি বের করতে হলেও অথবা গেটওয়ের দুর্নীতি বের করতে হলেও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন দরকার। নির্মোহভাবে যারা দায়িত্ব পালন করবেন... এসব সুবিধাভোগী চোরদের ঝেটিয়ে বিদায় করা সরকারের দায়িত্ব।’

জাহিদ বলেন, ‘বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ দুর্গত মানুষের জন্য নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ত্রাণসামগ্রী দিচ্ছে। আমি দুদিন আগে বলেছিলাম, প্রায় ১০ কোটি টাকার ত্রাণসামগ্রী বন্যাকবলিত এলাকায় সমন্বিতভাবে বিতরণ করা হয়েছিল আজ থেকে তিন দিন আগে। আমাদের এ ত্রাণের কার্য্ক্রম, ব্যাপকতা, গ্রহণযোগ্যতা, অংশগ্রহণ এমন আকার ধারণ করেছে যে, আমরা গতকাল (মঙ্গলবার) রাত পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটি টাকার বেশি ত্রাণসামগ্রী এবং নগদ অর্থ দুর্গত মানুষের মাঝে বিতরণ করতে পেরেছি।’

অধ্যাপক ডা. জাহিদ বলেন, ‘আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এই ত্রাণ আমরা শুধু একটি জিনিস খেয়াল রাখছি, নৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে যারা আছেন, তাদের ত্রাণ আমরা গ্রহণ করছি না। মনে রাখতে হবে আমরা চাই, বিগত রেজিমে ?সুবিধাভোগী মানুষ যাতে এখানে ঢুকে না পড়ে, ত্রাণ দিয়ে নিজেকে আড়াল করতে না পারে, সেই বিষয়টি বিএনপি অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে খেয়াল রাখছে। দুই-একটি জায়গায় একটু ভুল হয়েছিল, আমরা তাদের সেই ত্রাণ সহায়তা ফিরিয়ে দিয়েছি। কাজেই আমরা এই ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ... এই ত্রাণে অংশগ্রহণ করছে এদেশের বেশিরভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, জাতীয়তাবাদী পরিবার এবং সেই সঙ্গে সাধারণ শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করছে।’

তিনি জানান, বন্যার্তদের জন্য খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ আরো দুদিন চলবে। এরপর বিএনপি পুনর্বাসন কাজে নামবে। এর মধ্যে রয়েছে বন্যাকবলিত এলাকায়, মানুষের বাড়িঘর নির্মাণে সহযোগিতা করা, গবাদিপশু দিয়ে সহায়তা করা, বীজ সরবারহ করা, শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বই-খাতা প্রভৃতি কাজ সাধ্যমতো বিএনপির স্থানীয় নেতারা সহযোগিতায় করবে।

তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে... আমরা তো সরকার না। সরকার তার নিজস্ব কার্য্ক্রম করছে। সরকারের পাশাপাশি বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে ব্যক্তি ও জনগণের দল... সেজন্য দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরামর্শ এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনায় এই ত্রাণ কার্য্ক্রম চলছে। আমরা বিএনপি পরিবার বন্যার্তদের পাশে আছি এবং থাকবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত