নিজের আমলে করা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত ছিল এমনটা বলে সব সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ার পক্ষে মত দিলেন সদ্য বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমনটা বলেন।
সাবেক সিইসি বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচন ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। নির্বাচন বন্ধ করা কিংবা পদত্যাগের কোনো সুযোগ সাংবিধানিকভাবে ছিল না। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হলে উদ্দেশ্য অর্জন আরো সুনিশ্চিত হতে পারে।
দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একাধিকবার নির্বাচন হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ তৈরি হয় এই পদ্ধতি নিয়ে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে আদালতের রায়ে বাতিল করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। অবশ্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল আন্দোলন করেছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আদালতের রায়ের কথা বলে কখনোই এই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়। পদত্যাগের কথা তুলে ধরে সাংবাদিকদের উদ্দেশে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, পরিশেষে আপনাদের অবহিত করতে চাই, আমিসহ কমিশনারগণ দেশের পরিবর্তিত বিরাজমান অবস্থায় পদত্যাগ করতে মনস্থির করেছি। আমরা অদ্যই পদত্যাগপত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতির সমীপে উপস্থাপনের নিমিত্তে কমিশনের সচিব মহোদয়ের হাতে দেব। জানা গেছে, এরই মধ্যে তারা পদত্যাগপত্রে সই করে সচিবের কাছে জমাও দিয়েছেন। সৌজন্য বিনিময়ে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার (অব.) আহসান হাবীব খান ও মোহাম্মদ আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। তবে কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন না। অনুপস্থিত ২ কমিশনারও পতত্যাগ করেছেন কি না, এমন প্রশ্ন করলে সিইসি তার কোনো জবাব দেননি। এ সময় ‘বিদায়ী ব্রিফিং’ নামে একটি দীর্ঘ লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি তিনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার বক্তব্যে, বাংলাদেশের অতীত নির্বাচনের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। কোনো নির্বাচনই ‘বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না’ বলেও দাবি করেন তিনি। সিইসি তার বক্তব্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কিছু প্রস্তাবনাও তুলে ধরেন তিনি। এদিকে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে আজও বিক্ষোভ করছেন একদল মানুষ। গত বুধবারও ‘১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত নাগরিক সমাজে’-এর ব্যানারে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগসহ নির্বাচন কমিশন সংস্কারের দাবিতে ইসি সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভবণ প্রাঙ্গণে বিপুলসংখ্যক সেনাসদস্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।