ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সারাদেশে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক অর্ধশত

সারাদেশে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক অর্ধশত

সারাদেশে যৌথ বাহিনীর অভিযানে প্রায় আর্ধশত দুষ্কৃতকারীকে আটক করা হয়েছে। এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। গত কয়েকদিন সাভারের আশুলিয়ায়, গাজীপুর, টুঙ্গীতে শ্রমিক বিক্ষোভ, কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে যৌথ অভিযান চালিয়েছে।

আশুলিয়া থানা-পুলিশ জানায়, কয়েকদিনের মতো গত বৃহস্পতিবারও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভে বহিরাগত, ছাঁটাইকৃত ও বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের অনেকেই অংশ নেন। তারা বিভিন্ন কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েকটি কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। এ ছাড়া হামলায় আহত হন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য।

পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতের বিভিন্ন সময়ে শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা তৈরিতে ইন্ধনদাতা ও জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে সন্দেহভাজন মোট ১৪ জনকে আটক করা হয়। তাৎক্ষণিভাবে তাদের নাম ও পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ বলেন, আশুলিয়ায় বিভিন্ন কারখানায় হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দায়িত্বপালন করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। এ সব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ অভিযান চালানো হচ্ছে।

গাজীপুরে আটক ব্যক্তির নাম মো. মনিরুজ্জামান (৪৬)। তিনি গাজীপুর নগরের দেওয়ালিয়াবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় একজন নিরাপত্তাকর্মী। পুলিশ জানায়, বেশ কয়েকদিন ধরে গাজীপুর শিল্প এলাকা টঙ্গী, কোনাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক তৈরি কারখানায় বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। হঠাৎ করে শিল্পকারখানায় অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় কলকারখানার মালিক ও সংগঠনের নেতারা মনে করছেন এতে তৃতীয় পক্ষের উসকানি আছে। এই অস্থিরতা বন্ধ করতে গত সোমবার থেকে গাজীপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে কোনাবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় বিসিকের নিরাপত্তাকর্মী মো. মনিরুজ্জামানকে আটক করা হয়।

কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, মনিরুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে বিসিক শিল্প এলাকার নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। তিনি সেখানে থেকে কারও ইন্ধনে শ্রমিকদের নানাভাবে উসকানি দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করাচ্ছে বলে আমাদের কাছে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আশুলিয়া : আশুলিয়ার পোশাক খাতে নাশকতা ঠেকাতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে যৌথ বাহিনী। অভিযানে ঢাকা জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিবসহ মোট আটজনকে আটক করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে আশুলিয়ার জামগড়া ও পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে র‌্যাব, পুলিশ ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।

পুলিশ জানান, যৌথ বাহিনীর একটি দল আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় পোশাক কারখানায় অস্থিরতা সৃষ্টিকারী সন্দেহে ছয়জনকে আটকের পরে তাদের আশুলিয়া থানায় সোপর্দ করে। একই সময় যৌথবাহিনীর আরেকটি দল আশুলিয়া পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবু হানিফকে আটক করা হয়। তিনি ঢাকা জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব। পুলিশ জানায়, ঝুট ব্যবসার আড়ালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের উসকে দেয়ার জন্য বহিরাগতদের মোটা অংকের বিনিময়ে ভাড়া করে নিয়ে আসা এবং শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক এবং অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

কক্সবাজার : কক্সবাজার সদরের পিএমখালী এলাকা থেকে অস্ত্র ও গুলিসহ ৮ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। গতকাল শুক্রবার ৬ কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওশের ইবনে হালিমের উপস্থিতিতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে গ্রেপ্তাররা হলেন- ওই এলাকার মৃত কবির আহমেদের ছেলে কলিম উল্লাহ (৩৪), মৃত ফোরকান আহমেদের ছেলে মো. খোরশেদ আলম (৩৭), মো. শফিউল্লাহর ছেলে মো. হাসান শরীফ লাদেন (২০), মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. শাহিন (২৩), মাহাবুল্লাহর ছেলে মো. মিজান (২০), মৃত কবির আহমেদের ছেলে আব্দুল মালেক (৪৮), মাহমুদুল হকের ছেলে আব্দুল হাই (২৪) ও আব্দুল আজিজ (২৫)।

অভিযানে ২টি বিদেশি পিস্তল, ৩টি ওয়ানশুটার গান, ২টি এলজি পিস্তল, ৪৮ রাউন্ড কার্তুজ, ৩টি ম্যাগাজিন, ৫টি দামা, ২টি কিরিচ, ১টি চাইনিজ কুড়াল এবং ১টি চেইন উদ্ধার করা হয়।

সিলেট : সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের পাঁচটি হলে অভিযান পরিচালনা করেছে যৌথ বাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার পরিচালিত এ অভিযানে রামদা, চাকু, লোহার পাইপ, কিরিচ, মদের বোতল উদ্ধার করা হয়। গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালক খসরু মোহাম্মদ সালাউদ্দিন অভিযানের তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযানে ৪০টি রামদা, হেলমেট, বিপুল পরিমাণ লোহার পাইপ, মদের বোতল, কিরিচ উদ্ধার করা হয়। অভিযানে কতটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, তা গণনার কাজ চলছে। তবে কাউকে আটক করা হয়নি।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে একটি মাদ্রাসা থেকে বিদেশি মুদ্রাসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় চারজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর এলাকায় আলত্বাফিয়া ইয়াছিনিয়া আল এজাজ ইন্টারন্যাশাল ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ৪ জনের পরিচয় যাচাই-বাছাই ও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তারা হলেন, জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী পৌরসভার আজহারুল ইসলামের ছেলে মো. সুহেল আনোয়ার (৪০), কক্সবাজার পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা গ্রামের মৃত জামাল হোসেনের ছেলে মো. শফিকুল ইসলাম (৪৮), বাঁশখালী উপজেলার মাষ্টারপাড়ার নাপোড়া গ্রামের বিধান দেবের ছেলে বিদ্যুৎ দেব (৩৫) ও ভূজপুর থানার পোদ্দারপাড়া গ্রামের দুলাল বাবুর ছেলে সুমন কান্তি দে (৪০)।

এদের মধ্যে সুহেল আনোয়ার বর্তমানে সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট পদে বায়েজিদ সেনানিবাসে কর্মরত, বিদ্যুৎ দেব নিজেকে সকালের সময় পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দেন, শফিকুল ইসলাম নিজেকে সাবেক মেজর পরিচয় দেন এবং সুমন কান্তি দে পেশায় গাড়ি চালক বলা জানা গেছে।

আল এজাজ ইন্টারন্যাশাল ও এতিমখানার পরিচালক মো. এজাজুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে যৌথ বাহিনীর গোয়েন্দা পরিচয়ে ৯ জন লোক তার মাদ্রাসায় প্রবেশ করেন। তারা তল্লাশির নামে এতিমখানার লোকজনকে অবরুদ্ধ করে নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৬ হাজার দেরহাম ও রিয়ালসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা লুট করেন।

পরে পালিয়ে যাওয়ার সময় মাইক্রোবাস চালকসহ ৪ জনকে আটক করে গণধোলাই দেন স্থানীয় লোকজন। এরমধ্যে ৫ জন পালিয়ে যান। পরে পুলিশের টহলটিম ও সেনাবাহিনীর টহলটিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে আটককৃতদের পুলিশ হেফাজতে নেয়।

নাটোর : নাটোর জেলা যুবলীগের সভাপতি বাশিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়ার বাড়ি থেকে ১টি পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী। শুক্রবার অভিযান আচলিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করে যৌথবাহিনী।

জানা যায়, গতকাল শুক্রবার ভোরে জেলা শহরের কানাইখালী এলাকায় যুবলীগ নেতা বাশিরুরের বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। এ সময় গুলিসহ আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নাটোর সদর থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সমন্বয়ে শুক্রবার ভোরে অভিযানটি শুরু করে। অভিযানে জেলা যুবলীগ সভাপতি বাশিরুরের বাসা থেকে একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও পিস্তলের কভার উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত