ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এখনো পানিবন্দি মানুষ, ফসলের ক্ষতিতে দিশাহারা কৃষক

এখনো পানিবন্দি মানুষ, ফসলের ক্ষতিতে দিশাহারা কৃষক

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে এখনো বহু মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। পানিবন্দি মানুষের পাশে সব সময় সহযোগিতা করে যাচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো। ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর জেলায় চলমান বন্যা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটা উন্নতি হয়েছে। অধিকাংশ গ্রামীণ পাকা সড়কে পানি উঠেছে। এখন কিছুটা কমলেও সড়কের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সড়কের ওপর দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ায় এবং যানবাহন চলতে গিয়ে সড়কগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হয়। যার ফলে সড়কগুলোর পাশের মাটি নরম হয়ে ভেঙে পড়েছে। কিছু স্থানে সড়কের পাশে থাকা বড় বড় গাছ উল্টে পড়েছে। এতে সড়কের পাশে বড় গর্ত সৃষ্ট হয়েছে। বন্যায় হাজার হাজার হেক্টর জমির রোপা আউশ, আমন, আখ, বীজতলা ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসলের ক্ষতিতে তিনি এখন দিশাহারা।

চাঁদপুরে কচুয়া উপজেলার আশ্রাফপুর ইউনিয়নের পিপলকরা গ্রামের কৃষক শহীদ উল্লাহ বলেন, বানের পানিতে সড়কের পাশাপাশি আমাদের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। গর্ত হওয়ার কারণে সড়কে যানবাহন চলাচল এখন ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শাহরাস্তি উপজেলার উনকিলা গ্রামের মনির হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় বানের পানিতে বহু সড়ক তলিয়ে গেছে। এসব সড়ক ভেঙে এখন বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। তবে কিছু সড়ক আগ থেকে ভাঙা ছিল। এখন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সদরের বালিয়া ইউনিয়নের ঢালীরঘাট-ফরক্কাবাদ সড়কের বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম খান বলেন, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সড়ক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমিন মাটি নরম হয়ে বড় বড় গাছ উল্টে পড়েছে। একটি গাছ উল্টে আমার বসতঘরের উপরে পড়ে। প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও গাছটি কেউ কেটে অপসারণ করেনি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান কবির বলেন, বন্যার পানি এখনো পুরো নামেনি। আমরা গ্রামীণ সড়ক ও কালভার্টের ক্ষতির পরিমাণ এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত করিনি। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছি। এ পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে আমরা এসব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও কালভার্ট মেরামতের সম্ভব্য ব্যয় (প্রাক্কলন) তৈরি করছি। কিছু স্থানে মেরামত কাজ শুরু হয়েছে।

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ফেনীর জনপদ। বন্যায় অন্যান্য খাতের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা খাতও। পানিতে ডুবে জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ৮৬৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনুমানিক ৩৮ কোটি ৭২ লাখ ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বন্যা পরিস্থিতিতে গত ২০ আগস্ট থেকে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায় জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ৯২০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তারমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৫৯টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯৩টি, মাদরাসা ১২৮টি, কলেজ ৩০টি, কারিগরি, ডিপ্লোমা ও প্রশিক্ষণ-সংশ্লিষ্ট ১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করে নষ্ট হয়ে গেছে বই ও আসবাবপত্র। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোটর পাম্প, কম্পিউটার ও প্রিন্টারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ১০-১২ দিন পর্যন্ত পানি থাকায় মেঝে এবং বারান্দায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আবার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠদানের উপযোগী করতে কাজ করছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দেয়া তথ্যমতে, বন্যায় জেলার ছয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিস ও আওতাধীন প্রায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে গিয়ে আনুমানিক ৮ কোটি ৭১ লাখ ৫০০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সোনাগাজী ও ফুলগাজী উপজেলায়। এতে ছাগলনাইয়ায় আনুমানিক ১ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ফেনী সদর উপজেলায় ১ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, দাগনভূঞা উপজেলায় ১ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ফুলগাজী উপজেলায় ১ কোটি ৮১ লাখ ৫০০ টাকা, পরশুরামে ২৭ লাখ টাকা এবং সোনাগাজী উপজেলায় ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্লাহ বলেন, বন্যায় জেলার ৩৫৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কলেজ প্লাবিত হয়। এতে ২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শত শত বইয়ের সেট নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেষে দ্রুতই শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইসরাত নুসরাত সিদ্দিকা বলেন, ৩৫৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০৬টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর আসবাবপত্র, ভবন, সীমানা প্রাচীর ও মাঠসহ ২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত