ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

খসড়া প্রতিবেদন প্রকাশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২২ দিনে নিহত ৬৩১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২২ দিনে নিহত ৬৩১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত

অন্তত ৬৩১ জন নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা ১৯ হাজার ২০০ জনেরও বেশি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার জমা দেয়া ওই প্রতিবেদনে ৬৩১ জনের মৃত্যুর তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে জুলাইয়ের শুরুতে যে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, তা তীব্র আকার ধারণ করে ১৫ জুলাইয়ের পর। ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে মারা যান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো ৫ জন নিহত হন।

আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে সহিংসতা। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহতের বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব ও কমিটির প্রধান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, নিহতের সংখ্যা আরো বাড়বে। কারণ সাভারে যারা মারা গিয়েছিল এবং যাদের কাগজ ছাড়া দাফন করা হয়েছিল তাদের রিপোর্টিংয়ের সুযোগ দিতে হবে। ফলে আরো বাড়বে নিহতের সংখ্যা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। এই ২২ দিনের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮১ জন মারা গেছেন। এই আন্দোলনে হতাহতদের পরিপূর্ণ তালিকা তৈরি করতে গত ১৫ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে জানান হুমায়ুন কবির।

সিনিয়র সচিব বলেন, আহত ১৯ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে কিছু ব্যক্তি আছেন গুরুতর আহত। যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ইনডোরে ভর্তি ছিল সাড়ে সাত হাজারের মতো লোক।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আহতদের মধ্যে ১৬ হাজার জনের বেশি সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্তত তিন হাজার জন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

হুমায়ুন কবির বলেন, এটি একটি খসড়া তালিকা। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এর তথ্য আরো আপডেট করছেন। আরো ডেটা কালেক্ট করতে হবে। যেহেতু লোকগুলো চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে গেছে তাই তাদের তথ্য কালেক্ট করতে হবে। ৫ তারিখ পর্যন্ত অনেকে কারেক্ট তথ্য দেয়নি। এছাড়াও সব হাসপাতালে রেজিস্ট্রারও সেইম স্ট্রাকচারে মেইনটেইন করে না। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেই এই তথ্যগুলো তৈরি করা হয়েছে। তবে প্রতি মুহূর্তেই এসব তথ্য বদলাবে। কম্পিউটারাইজড ডাটাবেইজের ধর্ম হচ্ছে একটা লাইভ ডাটা যখন ঢুকবে প্রতি মুহূর্তেই তা বদলাবে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেতে আরো মাসখানেক সময় লাগবে বলে জানান সিনিয়র সচিব।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১১ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। চট্টগ্রামে আহতের সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুই হাজার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে নিহতে সংখ্যা সর্বোচ্চ। এ বিভাগে নিহত হয়েছেন ৪৭৭ জন। নিহতের সংখ্যা সবচেয়ে কম বরিশালে একজন। চট্টগ্রাম ও খুলনায় নিহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৩ ও ৩৯ জন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর আহত তিন হাজার ৪৮ জন। আঘাতের কারণে স্থায়ীভাবে শারীরিক অক্ষম হয়ে পড়েছেন অন্তত ৫৩৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম আন্দোলনে আহত ও নিহতদের তালিকা তৈরি করছে বলে জানান হুমায়ুন কবির।

স্বাস্থ্য সচিব বলেন, মৃতদের অনেককেই হাসপাতালে আনা হয়নি। জুলাইয়ের শেষে এবং আগস্টের শুরুতে অনেকেই হাসপাতালে আসতে পারেননি। মামলাসহ কিছু পরিস্থিতির ব্যাপার ছিল। কাজেই মৃতের সংখ্যা আমার ধারণা বাড়বে, যারা সিস্টেমে নাই তাদের অ্যাড করতে হবে। কিন্তু আহতদের সংখ্যা তেমন একটা বাড়বে না বলে আমাদের মনে হয়েছে।

মৃতের তালিকায় পুলিশসহ সরকারি চাকরিজীবী আছে কি না, সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এই তালিকায় ছাত্র-জনতা থাকার কথা। তবে ওই বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন স্বাস্থ্য সচিব।

হুমায়ুন কবির আরো বলেন, আমরা তো প্রত্যেকটি তালিকা মিলিয়ে যাচাই করে দেখিনি, কাজেই বলতে পারব না। যদি হাসপাতাল থেকে নিহত হিসেবে পুলিশের নাম দিয়ে থাকে, তাহলে হয়তো আছে। সরকারি চাকরিজীবী এই তালিকায় আসার কথা না। সরকার কাদের শহীদ বলবে এটা তো সরকারি সিদ্ধান্ত। তবে আমি মনে করি পুলিশের জন্য আলাদা তালিকা হওয়া উচিত। কারণ এখানে যদি সরকারি লোক থাকে, তারা যদি অন্যদের মারতে গিয়ে মারা যায়, তাদের বিষয়ে কি করবে সেটাও দেখা উচিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত