ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। স্বস্তি ফিরছে না কিছুতেই। একদিকে দাম কমলে অন্যদিকে শুরু হয় বাড়ানোর পাঁয়তারা। দ্রব্যমূল্য নিয়ে বরাবরই ভোক্তাদের অভিযোগ থাকলেও নানা অজুহাত নিয়ে বিক্রেতারাও থাকেন সদা প্রস্তুত। ফলশ্রুতিতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস চরমে। গত সপ্তাহেও বাজারে মাছ-মাংসের দাম কিছুটা কম ছিল। কিন্তু কয়েকদিনের ব্যবধানে আবার বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ-মাংস। এদিকে, দেশে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি ভারত থেকে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮০০ পিস ডিম আমদানি করেছে সরকার। এমনকি পর্যায়ক্রমে আরো আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছে আমদানিকারকরা। ডিম আমদানির পরও দেশের বাজারে এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। বরং সপ্তাহে ব্যবধানে ডজন প্রতি পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে দাম। দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিক্রেতারা কোনোরকম কথা বলতে না চাইলেও ক্ষোভ দেখা গেছে ক্রেতাদের মধ্যে। শুধু মাছ-মাংস ও ডিমই নয়, চালের বাজারেও চলছে অস্থিরতা। আগের চাইতে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে প্রায় সব ধরনের চালের দাম। এতে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার এসব চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা করে, যা গত সপ্তাহেও ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। বিক্রেতাদের দাবি, সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ফসল, মাছ ও মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বাজারে কমে গেছে পণ্যের সরবরাহ। ফলে দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।

এছাড়া সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। খাসির মাংস ১০৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।

অন্যদিকে মাছের বাজারে পাঙাশ, তেলাপিয়া ছাড়া আর কোনো মাছেই তেমন স্বস্তির খবর পাওয়া যায়নি। বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ ১৭০-১৮০ টাকা তেলাপিয়া ২০০-২৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০-২৭০ টাকা, কার্প জাতীয় মাছ ৩০০ টাকা, চাষের শিং ৩৫০-৪০০ টাকা, সাগরের পোয়া ৪০০-৬৫০ টাকা ও বাইলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭০০ টাকায়।

একজন গরুর মাংস বিক্রেতা বলেন, আজকের বাজারে গুরুর মাংস বিক্রি করছি ৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা। কলিজা বিক্রি করছি ৭৮০ টাকা করে। এছাড়াও গরুর পায়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত জোড়া। তবে কেউ কেউ ৭৫০ টাকায়ও বিক্রি করছে। বিষয়টা আসলে নির্ভর করে মাংসের মানের ওপর।

এদিকে মুরগির মাংস বিক্রেতা বলেন, গত কয়েকদিনে তুলনায় আজ ব্রয়লার মুরগির দামটা একটু বেশি। গত সপ্তাহেও ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। আজকে ১৮০ টাকা। বাজারে মুরগির চাহিদা বেশি, কিন্তু সে অনুযায়ী সাপ্লাই নেই। শুনেছি বন্যার কারণে অনেক খামারির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যে কারণে সেই চাপটা এসে পড়েছে বাজারে। তিনি আরও বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মাংসের চাহিদাটা একটু বেড়ে যায়। বাজারে যদি সেই পরিমাণে সরবরাহ না থাকে তাহলেই দাম বেড়ে যায়। এখানে আমাদের কিছুই করার থাকে না।

বাজার করতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি। ২টা টিউশনি করিয়ে আগে যা পেতাম, এখনো তাই পাই। কিন্তু যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো মানুষদের কিছুই কিনে খাওয়ার উপায় নেই।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। বাজারের তুলনায় পাড়া-মহল্লার দোকানে আরও পাঁচ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে মুরগির ডিম।

কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা আলমগীর বলেন, আমাদের মতো যারা নিয়মিত মাছ মাংস খেতে পারে না, তাদের জন্য ডিমই ছিল ভরসা। এখন দেখি দিন দিন এর দামও বাড়তে শুরু করেছে। যে ডিমের দাম সর্বোচ্চ হওয়া উচিত ৩০ থেকে ৩৫ টাকা হালি, সেটি এখন ৫৫-৬০ টাকা হালি। এগুলো দেখার কি কেউ আছে? কেউই নেই। তিনি আরো বলেন, ভেবেছিলাম তো আওয়ামী লীগ সরকার থেকে গেলে সবকিছুর দাম কমবে। এখন তো দেখছি কিছুই কমছে না। তাহলে সরকার পরিবর্তন করে মানুষের লাভ হলো কী? আমরা সাধারণ মানুষ, আমরা দু-চারটা ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারলেই হলো। খুচরা বিক্রেতারা জানান, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরেই ঢাকার বাজারে ডিমের দাম চড়া রয়েছে; ডজন বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৫৫ টাকায়। এর আগে ডজন ১৫০ টাকার নিচে ছিল।

দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের দাবি, সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে অনেক মুরগির খামার নষ্ট হয়েছে। এতে ওই সব এলাকায় মুরগি ও ডিমের সরবরাহ কমেছে। আবার ভারত থেকে সম্প্রতি যে ডিম আমদানি হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় সামান্য। তাই সরবরাহ বৃদ্ধি না পাওয়ায় দাম কমছে না।

এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে ডিমের সংকট আছে। জানি না হঠাৎ করে কেন সংকট তৈরি হলো। আমাদের যদি বেশি দামে কিনে আনতে হয়, তাহলে তো সে অনুযায়ী একটু বাড়িয়েই বিক্রি করতে হবে।

ভারতীয় ডিম আসার পরও কেন দাম বাড়ছে? এ প্রশ্নের জবাবে এই বিক্রেতা বলেন, এখন পর্যন্ত আমি বাজারে কোনো ভারতীয় ডিম দেখিনি। শুনেছি এসেছে, কিন্তু কোথায় এসেছে সেটি আমরা জানি না। আমরা সাধারণ বিক্রেতা, ২-৪ টাকা লাভ হলে যে দেশের ডিমই আসুক, বিক্রি করব। দামটা কম থাকলে আমাদের জন্যও ভালো। দাম বেশি থাকলে তো মানুষ কিনতে চায় না।

এদিকে, সরকার বিদেশ থেকে ডিম আমদানি বন্ধ না করলে ডিম ও মুরগির উৎপাদন বন্ধ করে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশে ডিমের চাহিদা চার কোটি পিস। ডিমের উৎপাদন রয়েছে সাড়ে চার কোটি পিস। চাহিদার থেকে যেখানে উৎপাদন বেশি হচ্ছে, সেখানে ডিম আমদানির প্রশ্নই আসে না। সরকারের ডিম আমদানির ভুল সিদ্ধান্তে প্রান্তিক খামারিরা লসের মুখে পড়বে। দেশীয় খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে; এতে পরবর্তী সময়ে সংকট আরও বড় আকার ধারণ করবে। চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগস্টের তুলনায় বর্তমানে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেশি সব ধরণের চালের দাম। মিনিকেট নামে বিক্রি করা চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে। যা আগস্টে ছিল ৬৮ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ছিল।

বাজারে চাহিদার শীর্ষে থাকা আটাশ চালের কেজি ৬০ টাকা। মধ্যবিত্তের চাল হিসেবে পরিচিত এই চালটি আগস্টে ছিল ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা। কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা হারে বৃদ্ধি পেয়ে পাইজাম ৬০ টাকা এবং স্বর্ণা চাল ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৩ টাকা কেজি দরে। বাজারে সবচেয়ে কম দামে মিলছে হাইব্রিড চাল। কেজি ৫০ টাকা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, লালচে ধরনের এই চালের খদ্দের একেবারে নিম্নআয়ের মানুষ। এছাড়া বাজারে আতব চাল ৫০ টাকা এবং খোলা পোলাও চাল ১০০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চালের চড়া মূল্যে অস্বস্তি প্রকাশ করে এক ক্রেতা বলেন, ইনকাম আগের চাইতে কমছে। বাড়ে নাই। কিন্তু চাউলের দাম প্রতিদিন বাড়ে। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেয়া উচিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত