ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উত্তরে বৃষ্টি নেই বিপাকে কৃষকরা

আমন উৎপাদনে সেচ ভরসা

* বিঘায় ৩ হাজার টাকা বাড়তি খরচ * আমন চাষাবাদে বিরূপ প্রভাব পড়েছে
আমন উৎপাদনে সেচ ভরসা

বছরে বছরে বৃষ্টিপাত কমে আসায় খরার মাত্রা বাড়ছে। এখন আমন চাষে একমাত্র ভরসা হয়ে উঠছে সেচের পানি। এতে ধান উৎপাদনে কয়েকগুণ খরচ বেড়েছে কৃষকের। নজিরবিহীন খরায় দেশের বিভিন্ন জেলায় আমনের ক্ষেত শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। কৃষকেরা উপনায় না পেয়ে গভীর-অগভীর সেচযন্ত্র চালু করে আমনের জমিতে পানি দিচ্ছেন। এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ কাজও ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রের পাশাপাশি ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র চালু রয়েছে।

জানা গেছে, দেশে বোরো সেচনির্ভর হলেও আমন পুরোটাই বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। আমন উৎপাদনে তাই খরচ কম লাগে। তবে এ বছর সেপ্টেম্বর প্রায় শেষ হতে চললেও বৃষ্টির দেখা নেই। উল্টো তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। মাঝেমধ্যে কোনো কোনো এলাকায় সামান্য বৃষ্টি ঝরলেও খুব বেশি উপকারে আসছে না। আবাদি জমিগুলো প্রায় পানিশূন্য। অনেকে নিরুপায় হয়ে, বিকল্পব্যবস্থা হিসেবে সেচের পানিতে নির্ভর হয়ে পড়ছেন।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও কৃষকরা বলছেন, এক বিঘা জমিতে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ দিতে বর্তমানে প্রায় ২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ছে। আমনের চারা বাঁচাতে এরই মধ্যে কয়েক বার সেচ দিতে হয়েছে। এই মৌসুমে এভাবে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হওয়ায় সেচের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। যেসব জমিতে চারা লাগানো হয়েছে, পানির অভাবে ওই সব চারা মরে যেতে বসেছে। খরার কারণে মাটি শুকনা কাঠের মতো হয়ে থাকায় সেচ দিয়ে মাটি ভেজাতে অনেক বেশি পানি লাগছে। একদিকে খরা, আরেক দিকে চলছে লোডশেডিং। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, উত্তরাঞ্চলের রংপুর, নীলফামারি, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও যশোরে বেশির ভাগ জমিতে আমান রোপন করা হলেও সেচের পানি একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টি কম হওয়ায় লোকসানের ঝুঁকি এড়াতে অনেক কৃষক সেচের পানিতে সীমিত পরিসরে চাষাবাদ করছেন। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিতে চাষাবাদ করলে প্রতি বিঘায় সেচ খরচ বাবদ দুই থেকে তিন হাজার টাকা সাশ্রয় হয়। কিন্তু গত বছরের মতো এ বছরেও আমন রোপনের পর বৃষ্টিপাত কম হওযায় সেচ খরচ বাবদ প্রতি বিঘায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেশি খরচ করতে হবে কৃষকদের। বৃষ্টি হলে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকও কম প্রয়োজন হয়। এ অবস্থায় চলতি রোপা-আমন মৌসুমে বৃষ্টি কমের কারণে কীটনাশক বাবদও খরচ বাড়ছে।

গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার বাসিন্দা কৃষক লুৎফর হোসেন বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমনের ক্ষেত। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা নেই। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় ধানক্ষেতে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে কৃষকের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। কখনো কখনো দুয়েক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা মিলছে না। এতে আমন চাষে বিপাকে পড়তে হয়েছে। প্রচণ্ড খরায় বিবর্ণ হচ্ছে সবুজ ধানের চারা ক্ষেতের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।

বগুড়া জেলার কলেজ স্টেশন এলাকার কৃষক লাভলুর রহমান, আবু সিদ্দিক, ছোট খোকনসহ অনেকে বলেন, খরায় মাঠে ধান-পাট ও সবজির গাছ পুড়ে বিবর্ণ হতে শুরু করেছে। আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়েছে। অনেকে সেচ নিয়ে আমন রোপণ করছেন। এতে বিঘা প্রতি খরচ বাড়বে প্রায় তিন হাজার টাকা। সেচ, সার, তেল ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় ধান উৎপাদন খরচ বাড়লেও বিক্রি করতে হয় কম দামে। তাই অনেক কৃষক ধানের আবাদ বাদ দিয়ে ড্রাগন, পেয়ারা, পটল, বেগুন, মরিচ ইত্যাদি আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। জমিতে সেচ দিয়ে রোপা-আমন রোপণ হলেও পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেক জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। বার বার সেচ দিয়ে ফলন রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন কৃষকরা। একদিকে ধান উৎপাদন কম হওয়ার শঙ্কা, অন্যদিকে বাড়তি খরচ।

কৃষক আবেগ মিয়া, তাজুল ইসলাম, মিন্টু মিয়া, সাদ্দাম হোসেন ও ফরিদ প্রধান নিজ নিজ জমিতে শ্যালো মিশনের মাধ্যমে সেচ দিচ্ছেন। তারা জানান, সেচ দিয়ে রোপা আমন লাগানো হয়েছে, কিন্তু এখন পানি শুকিয়ে যায়। বার বার সেচ দিতে গিয়ে খরচ পোষান যাচ্ছে না। সার প্রয়োগেও সেচ দিতে হয়। প্রতিবারে সেচ দিতে প্রতি ৬ শতক জমিতে ২০০ টাকা করে বেশি খরচ হচ্ছে। আবহাওয়াগত কারণে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাদের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিচ্ছেন।

?সেচকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় নিচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। পাম্পের মাধ্যমে সেচের পানি তুলতে গিয়ে চাপ পড়ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের ওপর। এতে বাড়ছে কৃষকের উৎপাদন ব্যয়। দেশের কৃষক সেচের পেছনে মোট উৎপাদনের বেশিরভাগ অর্থ খরচ করে থাকেন।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কৃষকরা আমন চাষাবাদ নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। মূলত বর্ষাকালে বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে কৃষকরা রোপা আমন চাষ করে থাকেন। সাধারণত বীজতলায় তৈরি হওয়া চারা ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে জমিতে লাগানো হয়। কিন্তু গত বছরের মতো এবারও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সেচের পানিতে আমন রোপণ করেছেন কৃষকরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত