ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

ভারত পারবে না, বাংলাদেশই পারবে

ভারত পারবে না, বাংলাদেশই পারবে

টানা দুই সপ্তাহ ধরে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে বিভিন্ন পোশাক কারখানায়। নানা দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভে গতকাল শনিবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৪৯টি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আশুলিয়ায় বন্ধ ছিল ২১৯টি কারখানা। অনেক কারখানার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অনেক অর্ডারও বাতিল হয়েছে। এই সুযোগে এই কাজগুলো ভারতে চলে যেতে পারে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায়, বাংলা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে পোশাক খাতের শ্রমিকদের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরানোর।

গত বুধবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ইকোনমিস্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তুলা উৎপাদক হওয়ার পরও ভারত পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে। ভারত ২০২৩ সালে তাদের তুলা রপ্তানির এক-চতুর্থাংশ বাংলাদেশেই রপ্তানি করেছে। সম্প্রতি ভারতের দক্ষিণের টেক্সটাইল হাব তিরুপুরে অবস্থিত রপ্তানিকারকদের একটি দল বলেছে, বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে তারা ৫৪ মিলিয়ন ডলারের নতুন ক্রয়াদেশ পেয়েছে। দিল্লির বাইরের আরেকটি গ্রুপ বলেছে, তারা স্প্যানিশ ফ্যাশন ফার্ম জারা থেকে আগস্টে ১৫ শতাংশ বেশি ক্রয়াদেশ পেয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশের অস্থিরতার কারণে ভারতে ক্রয়াদেশ চলে যাওয়াটা কঠিন হবে বলে মনে করছেন শিল্প খাত বিশ্লেষক মেহেদী মাহবুব। দ্য ইকোনমিস্টকে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের বর্তমান অস্থিরতা স্বল্পমেয়াদি, কারখানাগুলো এরইমধ্যে চালু হয়েছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতিও হয়েছে।

বাংলাদেশের পোশাকের বাজার ভারতের নিজেদের দখলে নেয়া যে সহজ হবে না, তাও যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছে দ্য ইকোনমিস্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পোশাক খাত তার প্রতিযোগীদের তুলনায় অনেক বেশি সুবিধা ভোগ করছে। বিশেষ করে শ্রম খরচ অন্য প্রতিযোগীদের তুলনায় এখানে এখনো অনেক সস্তা। তাছাড়া ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ যে অগ্রাধিকার পায়, ভারত সেখানে সে সুবিধা পায় না। এ ছাড়া বড় বড় ক্রয়াদেশ সহজেই বুঝিয়ে দেয়ার যে বিশাল অভিজ্ঞতা, সেটা বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলোর নেই।

ওই প্রতিবেদন বলছে, পোশাক শ্রমিকসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের কাছে নতুন দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দেশও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ বছর গ্যাসের ঘাটতির কারণে কারখানাগুলো কম ক্ষমতায় চলতে বাধ্য হয়েছে। এসব কারণে ধারণা করা হচ্ছে, সামগ্রিক পোশাক রপ্তানি এই বছর ১০-২০ শতাংশ কমে যেতে পারে।

তবে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভাষ্য, পরিস্থিতি খুব দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে আসছে। কিছু ক্রেতা সাময়িকভাবে চলে গেলেও বড় ক্রেতারা এখনো আস্থা রাখছেন। বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, আমরা যেহেতু এখনো রপ্তানির তথ্য পাইনি, তাই সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না কত কমেছে। তবে ভবিষ্যতের ক্রয়াদেশ সম্পর্কে ক্রেতারা এখনো অবজার্ভ করছে। বড় বড় ব্র্যান্ড সবাই এখনো আমাদের সঙ্গেই আছেন। তারা জানেন, অবস্থা যা ছিল তার সমাধান হয়েছে। এত বড় পরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলার ঘাটতি থাকবেই, এটি কেউ অস্বীকার করতে পারব না। সরকার যেভাবে আমাদের সহযোগিতা করছে, শিগগিরই আমরা সব মোকাবিলা করে পুষিয়ে উঠতে পারব। তিনি বলেন, কিছু ক্রেতা আছে তারা অন্য জায়গায় গিয়ে দেখছে, তারা ভাবছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভালো না হলে সেখানে তারা প্লেস করবে। কিছু ব্যতিক্রম তো আছেই। আবার বাইরের কিছু দেশ বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতি নিয়ে গুজবও ছড়াচ্ছে। এই বিষয়ে ভারতের সুযোগ কতটা বাস্তবসম্মত এমন প্রসঙ্গে ইকোনমিস্ট বলছে, এ পর্যায়ে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সামর্থ্য ভারতের নেই। দেশটির ইন্ডাস্ট্রির এক অভ্যন্তরীণ সূত্রই এমন তথ্য দিয়েছে। ওই সূত্র ইকোনমিস্টকে বলছে, শ্রমনিবিড় পোশাক খাতের পরিবর্তে ইলেকট্রনিকসের মতো বিনিয়োগনির্ভর খাতকে বাড়ানোর দিকে খুব বেশি নীতি ও মনোযোগ দেয়া হয়। ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতীয় পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৫ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বাংলাদেশের ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে ভারতের সুরক্ষাবাদী নীতিকে দায়ী করা হয়েছে। টেক্সটাইল এবং পোশাকের গড় আমদানি শুল্ক ২০১৭ সাল থেকে ১৩ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি ভারতের পোশাক উৎপাদনের খরচ বাড়িয়েছে। ভারতের পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধির বড় সুযোগ আসতে পারে চীনে কম মূল্যের পোশাক উৎপাদনের পতন থেকে। তবে এখানেও ভারতকে লড়াই করতে হবে বাংলাদেশের সঙ্গেই। বিশ্বব্যাংকের গবেষণা অনুযায়ী, চীন সম্প্রতি স্বল্প দক্ষতার উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। এ থেকে সবচেয়ে বেশি দুটি সুবিধাভোগী দেশ বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত