গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জিলানীর উপর হামলা ও সংগঠনটির ক্রীড়া সম্পাদক দিদারকে শহীদ করা হয়েছে এটি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখনো হায়নারা (আওয়ামী লীগ) লুকিয়ে আছে, যে কোনো সময় আক্রমণ করবে। হায়নাদের আক্রমণকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে। গতকাল শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণসভায় বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন। এই স্মরণ সভার আয়োজন করে বিএনপি। নেতাকর্মীদের কোনোভাবেই ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তে পা না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। গণঅভ্যুত্থান ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পেয়েছি, এই সরকারের কাছেই দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা আকাশচুম্বী- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আশা, তারা একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের মাধ্যমে নির্বাচন দিয়ে সত্যিকার অর্থে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।
ছাত্রজনতার আন্দোলন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৬ বছর ধরে যারা পঙ্গু ও নিহত হয়েছেন তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সরকারপ্রধানের কাছে এমন দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
১৬ বছর ধরে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনীতি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে তা অতি দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে এমন দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতির কাছে অঙ্গীকার করতে চাই, সত্যিকার অর্থে প্রকৃত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাবো। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে কেউ যেন আমাদের বিপথের না নিয়ে যায়। কোনো মতেই আমরা যেন আমাদের লক্ষ্য ও পথ না হারাই।
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য তাবিখ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব, সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ প্রমুখ।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ এবং গুম পরিবারের আর্তনাদ : স্মরণ সভায় শুরুতে জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহত পরিবার এবং গত ১৫ বছরের গুম-খুন পরিবারের সদস্যদের আর্তনাদে চারপাশ ভারি হয়ে ওঠে। ছাত্র আন্দোলনে সাভারে শহীদ ইয়ামিনের পিতা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ- এর থেকে ভারি কোনো বোঝা নেই। আর কোনো পিতা-মা-বোনকে এই নির্মম পরিস্থিতির শিকার যেন না হতে হয়। আমার ছেলেকে পুলিশ সাঁজোয়ান যান থেকে টেনে-হেঁচড়ে ফেলে দেয়ার দৃশ্য যেন আর দেখতে না হয়। এমন কোনো ইয়ামিন যেন পুলিশের ঘৃণার পাত্র না হয়। আগামী দিনে পুলিশ যেন তার সঠিক দায়িত্ব পালন করে। আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই এবং শহীদের মর্যাদা দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এসময় তিনি ‘সাঁজোয়া যান’ নিয়ে একটি লিখিত কবিতা পাঠ করেন।
টাঙ্গাইলে গুলিতে দুই চোখ হারানো হিমেলের মা বলেন, তার ছেলে কথা ও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। আমি গরিব মানুষ। গুলিতে আমার ছেলের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, আমার ছেলে যেন তার একটা চোখ দিয়ে দেখতে পারেন। আমি ন্যায়বিচার চাই।
শহীদ লিটন চন্দ্র শীলের মা রুবি রানী শীল বলেন, আমার ছেলেকে মেরেছে খুনি হাসিনা। আমি বিচার চাই। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের পুলিশের গুলিতে নিহত ইমনের ছোট ভাই সুজন বলেন, ‘আমার ভাই টিউশনি করে আমাদের পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি নিজেও পড়াশোনা করেন। গুলিতে আহত হওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে ফেরত দেয়া হয়। পরে রাত ৩টার দিকে ঢাকায় নিয়ে আসার পথে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে আবারো পেটে নির্মম নির্যাতন করেন। আমার ভাই পুলিশের হাত-পা জড়িয়ে ধরলেও তারা ক্ষমা করেননি। আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে, হত্যাকারীদের বিচার এই দেশের মাটিতে দেখতে চাই। তাদের ফাঁসি চাই।’
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সাবেক বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ বলেন, ‘গত ১৫ বছরে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা যত গুম খুন হত্যা করেছে, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার বাংলার মাটিতে হবে ইনশাআল্লাহ। সম্প্রতি একটি অডিও রেকর্ড শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি নাকি চট করে বাংলাদেশে ঢুকবেন। আমরাও রেডি আছি, এবার স্বজন হারানোর বেদনার গল্প আমরা আপনাকে শোনাবো।’এর আগে দুপুর আড়াইটা থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে পূর্ব ঘোষিত সমাবেশে অংশ নিতে শহীদ মিনারে সামনে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সমাবেশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজে নেতাকর্মীরা কর্মসূচির প্রাঙ্গণে অবস্থান করেন। এসময় তারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে সমাবেশ প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলেন। এর আগে কর্মসূচিতে অংশ নিতে দুপুরে ব্যানার ও ফেস্টুনসহকারে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সমাবেশের শুরুতে আন্দোলন শহীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা। আন্দোলন দিনগুলোর ভয়াবহ হামলার চিত্র মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরেন অভিনয় শিল্পীরা। সবশেষে দলীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে স্মরণ সভার সমাপ্তি হয়।