ইসি নিয়োগে বিদ্যমান আইন ত্রুটিপূর্ণ, সংস্কারের প্রস্তাব

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদ্যমান আইন দিয়ে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্টজনরা। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত বাংলাদেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ বিষয়ে গতকাল শনিবার এক সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ মত দেন। নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘যত ভালো কমিশন গঠন হোক, ভালো নির্বাচন করতে হলে একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজন।’ তিনি তিন স্তরের একটি সার্চ কমিটির প্রস্তাব করেন।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দায়মুক্তির বিধানযুক্ত করে ২০২২ সালের প্রণিত আইনে যাকে খুশি তাকে নিয়োগ দেয়া সম্ভব। এর আগের নির্বাচন কমিশন পোস্ট অফিসের ভূমিকা পালন করেছে। তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে।’ তিনি জানান, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ইসি গঠনে তার কমিটি প্রস্তাব করবে। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য পরিচালক ড. আব্দুল আলিম উপস্থাপিত পলিসি ব্রিফে (নীতি প্রস্তাবনা) বলেন, যে কোনো নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্বাচন কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকেই শুরু হয়। স্বাধীন কমিশন গঠনে তিনি এসময় সুনির্দিষ্ট পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসহ আরো বক্তব্য দেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিবষদ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম মিলে ১০ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা পর্বে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, কমিশন গঠনে দল ছোট না বড় তা দিয়ে মতামত বিচার করা যাবে না। গণ অধিকার পরিষদের প্রেসিডেন্ট নুরুল হক নূর প্রস্তাব করেন, সাত শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি নিয়ে সাত সদস্যের সার্চ কমিটির। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ আনুপাতিক হারে নির্বাচন ব্যবস্থার কথাও বলেন তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান জানান, নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে আগামীর নির্বাচন কমিশন দেখতে চান। আর বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহকারী সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে পাওয়া নাম নিয়ে আবার রাজনৈতিক দলের কাছে ফিরে যেতে হবে, কারণ রাজনৈতিক দলগুলো এর সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সবার আগে প্রয়োজন বিদ্যমান আইনটি বাতিল করা। তিনি আরো বলেন, এমনভাবে কমিশন গঠন প্রক্রিয়া প্রণয়ন করতে হবে, যাতে কোনো সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, স্থায়ী সমাধান এখন চিন্তা না করে কী করে পরবর্তী নির্বাচন ভালো করা যায় সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বিচার বিভাগকে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন কমিশন গঠনে যুক্ত করা উচিত হবে না। সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও ছাত্র প্রতিনিধির সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রফেসর আশরাফ আলী আকন্দ, কমিশন দায়িত্ব পালন না করলে তাকে আইনের আওতায় আনার তাগিদ দেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা নয়, বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রফেসর ড. রওনক জাহান। স্বাগত বক্তব্য দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি ডানা এল ওল্ডস।